ঢাকার আকাশ দখলে বোয়িং-এয়ারবাস লড়াই

‘ঢাকার আকাশ দখলের’ লড়াই বেশ ভালোভাবেই শুরু করেছে দুই আন্তর্জাতিক এয়ারক্রাফট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এয়ারবাস ও বোয়িং। তবে দুই কোম্পানির বাণিজ্যিক লড়াইয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে ফ্রান্সের নেতৃত্বাধীন ইউরোপীয় বহুজাতিক কোম্পানি এয়ারবাস।

কাতারে বিভিন্ন কোম্পানিতে নতুন চাকরির খবর

এয়ারবাসের প্রস্তাব গ্রহণ ও মূল্যায়নের জন্য গঠন করা হয়েছে আর্থিক-কারিগরি কমিটি।

মার্কিন কোম্পানি বোয়িং কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও তাদের এখনই নিরাশ করছে না রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বিমান। তাদের বিষয়টি এখনো বিবেচনা পর্যায়েই রাখা হচ্ছে। তবে বোয়িংয়ের বিষয়টি আলোচনার জন্য আজ বৃহস্পতিবার বিমান পরিচালনা পর্ষদের সভা ডাকা হয়েছে। বিমান সদর দপ্তর বলাকায় এ বৈঠক হবে।

বৈঠকে বোয়িংয়ের দুটি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করা হবে। এর মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে বোয়িংয়ের ১০টি ৭৩৭-৮ ম্যাক্স এয়ারক্রাফট বিক্রির প্রস্তাব। দ্বিতীয়টিও বোয়িংয়ের এয়ারক্রাফট বিক্রির প্রস্তাব; তবে এ প্রস্তাবটি সুনির্দিষ্ট নয়।

কাতারের সব আপডেট পেতে যুক্ত হোন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে

এ ছাড়া পর্ষদ সভায় ক্যাডেট পাইলট নিয়োগ নীতিমালা চূড়ান্ত করা হবে। সরকারি এবং রাষ্ট্রীয় ফ্লাইটের ক্ষেত্রে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এবং অন্যান্য নির্বাহী পরিচালকদের হোটেল ও আনুষঙ্গিক বিল পরিশোধের বিষয়ও এজেন্ডায় রয়েছে।

বিমানের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এয়ারবাসের এ৩৫০-৯০০ এয়ারক্রাফট বিক্রির প্রস্তাব নিয়ে বিমান অনেকদূর এগিয়ে গেছে। তাদের প্রস্তাব মূল্যায়নের জন্য ২০২৩ সালেই টেকনো ফিন্যান্সিয়াল কমিটি (আর্থিক কারিগরি কমিটি) গঠন করা হয়েছে। বিমানের ডিরেক্টর (ফ্লাইট অপারেশন) এ কমিটির চেয়ারম্যান।

১৬ সদস্যের বাইরে এ কমিটিতে রয়েছেন বিমানের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটির একজন করে প্রতিনিধি। একসময় এয়ারবাসের প্রস্তাব ঝুলে গিয়েছিল। কিন্তু আবার তা চাঙ্গা হয়েছে।

বিমান এয়ারবাস থেকে কিছু ওয়াইড বডি এবং ন্যারো বডি এয়ারক্রাফট কিনবে। এয়ারবাসের প্রস্তাব সংগ্রহ এবং আর্থিক-কারিগরি মূল্যায়ন পরিচালনার জন্য এ কমিটিকে তাগাদা দেওয়া হয়েছে। এর আগে মন্ত্রণালয় ও বিশ^বিদ্যালয় এ কমিটিতে কর্মকর্তা মনোনীত করেছিল। পুনরায় একজন করে কর্মকর্তা চেয়েছে বিমান।

গত ৫ মার্চ কমিটির কার্যপরিধি নির্ধারণ করা হয়েছে। কার্যপরিধি অনুযায়ী, কমিটি এয়ারবাস থেকে ওয়াইড ও ন্যারো বডি এয়ারক্রাফটের প্রস্তাব সংগ্রহ করবে। কমিটি এ প্রস্তাব মূল্যায়নও করবে। বিস্তারিত টেকনো ফিন্যান্সিয়াল ইভ্যালুয়েশন করবে তারা।

এ সময় কমিটি সিট গ্রাউন্ড রুল, রক্ষণাবেক্ষণ এবং আর্থিক বিষয়গুলো মূল্যায়ন করবে। কমিটি এয়ারবাসের সহযোগী রোলস রয়েস এবং যন্ত্রপাতি উৎপাদনকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বিষয়গুলোও মূল্যায়ন করবে।

বিমান বহরে বর্তমানে কোনো এয়ারবাস নেই। বহরে ২১টি এয়ারক্রাফটের মধ্যে ৪টি ৭৭৭-৩০০ইআর, ৪টি ৭৮৭-৮, ২টি ৭৮৭-৯, ৬টি ৭৩৭-৮০০ এবং ৫টি ড্যাশ৮-৪০০। এগুলোর মধ্যে ১৯টি নিজস্ব এবং দুটি লিজকৃত।

বোয়িং প্রাধান্য বহরে এয়ারবাস অন্তর্ভুক্তি কোনো জটিলতার সৃষ্টি করবে কি না, তা যাচাই এবং বহরে অন্তর্ভুক্তির প্রথম দিন থেকেই যেন এয়ারবাস পরিচালনায় কোনো সমস্যা না হয় তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে এ কমিটিকে।

সাত কর্মদিবসের মধ্যে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে প্রতিবেদন দিতে বলা হলেও এখনো একসঙ্গে বসতেই পারেনি কমিটি।

জানা গেছে, বিমান এয়ারক্রাফট কেনার ক্ষেত্রে বোয়িংয়ের কাছ থেকেই কিনবে নাকি এয়ারবাসের দিকে হাত বাড়াবে এ নিয়ে নীতিনির্ধারকদের মধ্যে সিদ্ধান্তহীনতা ছিল।

কিন্তু রাজনৈতিক কারণেই সেই সিদ্ধান্তহীনতা থেকে বের হয়ে এসেছে বিমান। এয়ারবাস থেকেই আপাতত এয়ারক্রাফট কিনবে বিমান। বোয়িংয়ের দরজাও বন্ধ করা হবে না। পরে প্রয়োজনে বোয়িং থেকেও এয়ারক্রাফট কেনা হবে। নিজেদের বাজার দখলে রাখতে বিমানকে নানা প্রস্তাব দিচ্ছে বোয়িং।

এয়ারবাসও থেমে নেই। কিন্তু বিমানের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে প্রশিক্ষণ নিয়ে। দুই কোম্পানির এয়ারক্রাফট দিয়ে বহর চালানো কিছুটা হলেও ঝুঁকিপূর্ণ। বিমান সেই ঝুঁকি কাটিয়ে এয়ারবাসের দিকেই আপাতত ঝুঁকছে।

২০২২-২৩ অর্থবছরে বিমান ৩১ লাখ ৯৩ হাজার ৪০১ জন যাত্রী এবং ২৬ হাজার ৯০৪ টন পণ্য পরিবহন করেছে। যাত্রী ও পণ্য পরিবহন আরও বাড়ানোর জন্য বহরে বাড়তি এয়ারক্রাফট যোগ করতে চায় বিমান।

আরও অন্যান্য খবর

Desh Rupantor

Loading...
,