আকাশপথে দেশে-বিদেশে বাড়ছে যাত্রীসংখ্যা

আকাশপথে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটে ভ্রমণকারীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছেই। সারা বিশ্বে গত এক বছরে এ বৃদ্ধির হার ৩৯ শতাংশ। আর ২০১৯ সালের তুলনায় এ হার ৯৬ শতাংশের বেশি।
ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আয়াটা) প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
কাতারের সব খবর হোয়াটসঅ্যাপে পেতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন
করোনা বাংলাদেশের অ্যাভিয়েশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশেও আকাশপথে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটে ভ্রমণার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা চলতি বছর করোনা-পূর্ববর্তী সময়ের বৃদ্ধির হারকে ছাড়িয়ে গেছে।
তবে অভ্যন্তরীণ রুটের চেয়ে আন্তর্জাতিক রুটে ভ্রমণার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক বেশি। এ বৃদ্ধিকে অ্যাভিয়েশন সেক্টরের জন্য সুবাতাস বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
শাহজালাল বিমানবন্দরের তথ্যানুযায়ী, শুক্রবার ১৫৭টি ফ্লাইট অবতরণ করেছে, আর উড্ডয়ন করেছে ১৭০টি ফ্লাইট। গত বছর গড়ে ২০ হাজার যাত্রী চলাচল করলেও চলতি মাসে গড়ে ৩০ হাজারের বেশি ভ্রমণার্থী আন্তর্জাতিক রুটে চলাচল করছেন।
সে হিসাবে শুধু শাহজালালে আন্তর্জাতিক রুটে প্রায় ৫০ শতাংশ যাত্রী বৃদ্ধি পেয়েছে। অপরদিকে অভ্যন্তরীণ রুটে সাড়ে ৬ থেকে ৭ হাজার যাত্রী চলাচল করছে, যা করোনা-পূর্ববর্তী সময়ের চেয়ে বেশি।
বাংলাদেশ জনশক্তি ও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো শুধু বিশে^র বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রফতানির তথ্য সংরক্ষণ করে। তাদের তথ্যানুযায়ী প্রতি বছরই বিদেশে জনশক্তি রফতানির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কাতারে চাকরি খুঁজছেন? এখানে ক্লিক করুন
২০১৮ সালে বিশে^র বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রফতানি হয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার, ২০১৯ সালে হয়েছে ১ লাখ ৮৪ হাজার, ২০২০ সালে হয়েছে ১ লাখ ৮৪ হাজার, ২০২১ সালে হয়েছে ১ লাখ ৮৭ হাজার আর ২০২২ সালে গিয়েছে প্রায় ২ লাখ।
আয়াটার গত ৬ জুলাইয়ের তথ্যানুযায়ী, চলতি মে মাসে গত বছরের মে মাসের তুলনায় অভ্যন্তরীণ রুটে ভ্রমণকারী বেড়েছে ৩৬ দশমিক ৪ শতাংশ।
২০১৯ সালের মে মাসের তুলনায় চলতি বছরের মে মাসে অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রী বেড়েছে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। পর পর ২ মাস এ বৃদ্ধি ব্যাহত রয়েছে।
আর মে ২০২২-এর তুলনায় আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীর সংখ্যা বেড়েছে ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ। এর নেতৃত্বে রয়েছে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলগুলোর অ্যাভিয়েশন সেক্টর।
মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আমেরিকার এয়ারলাইন্সগুলোও প্রাক-মহামারির মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। সারা বিশে^ এ শিল্পে বৃদ্ধির হার ৮১ দশমিক ৮ শতাংশ। আর উত্তর আমেরিকার অ্যাভিয়েশন সেক্টরে যাত্রী বেড়েছে আয়াটার মহাপরিচালক উইলি ওয়ালস জানান, চলতি বছরের মে মাসে অ্যাভিয়েশন খাতের জন্য কিছু সুখবর দেখা গেছে।
সব উড়োজাহাজে যাত্রী পূর্ণ ছিল। উড়োজাহাজগুলোর গড় লোড ফ্যাক্টর ছিল ৮১ দশমিক ৮ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ রুটে করোনা-পূর্ববর্তী সময়ের চেয়ে যাত্রী বৃদ্ধি পেয়েছে। আর চলমান ব্যস্ত গ্রীষ্ম মৌসুমে করোনা-পূর্ববর্তী সময়ের চেয়ে ৯০ দশমিক ৪ শতাংশ ভ্রমণার্থী বৃদ্ধি পেয়েছে।
আয়াটা বলছে, আন্তর্জাতিক রুটে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের এয়ারলাইন্সগুলোতে মে ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালের মে মাসে ১৫৬ দশমিক ৭ শতাংশ ভ্রমণার্থী বৃদ্ধি পেয়েছে।
চলতি বছরের শুরুতে করোনার সময়ে দেওয়া নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর ভ্রমণার্থী ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ইউরোপীয় বিমানগুলোতে ভ্রমণার্থী বেড়েছে ১৯ দশমিক ৮ শতাংশ। মধ্যপ্রাচ্যের বিমানগুলোতে গত এক বছর আগের মে মাসের তুলনায় ভ্রমণার্থী বেড়েছে ৩০ দশমিক ৮ শতাংশ। উত্তর আমেরিকায় বেড়েছে ৩১ শতাংশ। লাতিন আমেরিকায় বেড়েছে ২৬ দশমিক ৩ শতাংশ। আফ্রিকান বিমানগুলোতে ভ্রমণার্থী বেড়েছে ৪৫ দশমিক ২ শতাংশ।
আয়াটা মহাপরিচালক জানান, প্রয়োজনে এবং ভালো লাগা থেকে মানুষ আকাশপথে ভ্রমণ করে। এটা এয়ারলাইন্সগুলোকে লাভবান হতে সহায়তা করে।
আমরা আশা করি, ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী এয়ারলাইন্সগুলো ৯ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার নিট মুনাফা করবে। করোনা মহামারির ক্ষতির পরে এটা খুবই আকর্ষণীয় মুনাফা। কিন্তু এ মুনাফা দীর্ঘমেয়াদে টেকসই নয়।
ইউএস বাংলার মহাপরিচালক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম জানান, করোনা-পরবর্তী সময়ে দেশের অ্যাভিয়েশন সেক্টর ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ক্রমাগত যাত্রী ও ফ্লাইট বৃদ্ধি পেয়েছে।
এটা এ সেক্টরের জন্য খুবই সুসংবাদ। এয়ারলাইন্সগুলো করোনার সময়ের ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে পারবে।
তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রী করোনা-পূর্ববর্তী সময়ের চেয়ে বেশি বাড়েনি। দেশের সাতটি রুটে মধ্যে ২টি রুটে বরিশাল এবং যশোরে ফ্লাইট অর্ধেকে নেমেছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় বরিশালে যাত্রী কমেছে। অপরদিকে সিলেট এবং কক্সবাজারে যাত্রী এবং ফ্লাইট বেড়েছে।কারণ যেসব প্রবাসী করোনার সময়ে দেশে আসতে পারেনি তারা দেশে এসেছে। আর কক্সবাজারে ভ্রমণার্থী বেড়েছে। কারণ করোনার জন্য অ্যাভিয়েশন সেক্টরে সীমাবদ্ধতার জন্য অনেকে আন্তর্জাতিক রুটে ভ্রমণ করতে পারেননি। তারা কক্সবাজার ভ্রমণ করেছেন। এ জন্য এ রুটে ফ্লাইট এবং যাত্রী বেড়েছে।
অপরদিকে আন্তর্জাতিক রুটে বিশ্বের যেসব দেশে বাংলাদেশি প্রবাসীরা থাকেন সেসব দেশে যাত্রী বেড়েছে।
অনেকেই করোনার সময় দেশে এসে আটকে ছিলেন, আবার অনেকেই করোনার জন্য আসতে পারেননি। সবচেয়ে বেশি যাত্রী বেড়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে।
এ ছাড়া করোনা-পরবর্তী সময়ে উড়োজাহাজ চলাচলে নানা শর্ত তুলে নেওয়া এবং বন্ধ থাকা কর্মসংস্থান চালু হওয়ায় যাত্রী বৃদ্ধি করেছে বলে জানান তিনি।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক (অ্যাভিয়েশন সিকিউরিটি) উইং কমান্ডার মো. মিরান হোসেন জানান, সারা বিশ্বে ভ্রমণার্থী বৃদ্ধির যে গতি তার সঙ্গে আমাদের দেশের সামঞ্জস্য রয়েছে। আমাদের দেশেও একই গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। অভ্যন্তরীণ রুটের চেয়ে আন্তর্জাতিক রুটে যাত্রী চলাচল বৃদ্ধি বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বলেন, করোনা-পূর্ববর্তী সময়ের চেয়ে আন্তর্জাতিক রুটে চলাচল অনেক বেড়েছে, সেই তুলনায় অভ্যন্তরীণ রুটে কিছুটা বেড়েছে। এটা আগের তুলনায় অবশ্যই বেশি।
আরো পড়ুন
Shomoyer Alo
