আরব আমিরাতে কাজের সংকট, দুর্ভোগে প্রবাসীরা

সাত সমুদ্র তের নদী পার হয়ে জীবনের সবকিছু ত্যাগ করে একটু সুখ আর ভালো আয়ের আশায় মোটা অঙ্কের টাকা ব্যয় করে অনেকেই সংযুক্ত আরব আমিরাতে এসেছেন।

কিন্তু প্রত্যাশিত কাজ জুটছে না, বরং থাকা-খাওয়ার সমস্যাসহ নানা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে প্রবাসীদের। এদের মধ্যে প্রত্যাশিত সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত আছে ফ্রি ভিসা নামক ভিসার শ্রমিকরা।

কাতারের সব খবর সরাসরি হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে ক্লিক করুন

ধনী দেশগুলোর একটি মধ্যপ্রাচ্যের দেশ আরব আমিরাত। দেশটিতে ২৫ লাখের বেশি বাংলাদেশি গেলেও এখন রয়েছেন ১০ লাখের মতো।

সরেজমিনে প্রবাসী শ্রমিকরা এসব নানা দুর্ভোগের কথা জানান।

প্রবাসী কর্মীরা জানান, প্রায় তিন-চার মাস ধরে তারা আমিরাতে অবস্থান করছেন। কেউ ৩ লাখ, কেউবা ৫ লাখ টাকা খরচ করে দুবাই এসেছেন।

কিন্তু প্রত্যাশা পূরণ হয়নি তাদের, কারো কারো চাকরি এখনো হয়নি, কারো চাকরি হলেও মিলছে না যথাযথ বেতন, কাউকে আবার চাকরি দিয়েও এক মাস পর বিনা বেতনে বের করে দেওয়া হচ্ছে।

কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করলে কেউ আশ্বাস দেয়, আবার কেউ গেইট থেকে ভেতরে ঢুকতেই দিচ্ছেন না।

প্রবাসী সাইফুল্লাহ (ছদ্মনাম) বলেন, প্রায় ৪ বছর হয়েছে দুবাই এসেছি। এমন অবস্থা কখনো হয় নাই। কাজ নেই, রুম ভাড়া দিতে পারি না, খাবার খরচের টাকাও নাই।

কাতারে চাকরি খুঁজছেন? এখানে ক্লিক করুন

এক প্রকার ধার দেনা করে চলতে হচ্ছে। মাঝে মধ্যে কয়েকদিন কাজ হলেও কাজের মজুরি খুবই কম।

বরিশালের মনিরুল ইসলাম বলেন, আমিরাতে আসার পর প্রথমে আজমানে ভাইয়ের কাছেই ছিলাম। তখন দুই বেলা করে খাবার পেতাম।

কাতারের সব খবর সরাসরি হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে ক্লিক করুন

চাকরির কথা বললে আমাকে ধৈর্য ধরতে বলা হয়। এভাবে ৩ মাস ১০ দিন পর নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন ১ হাজার দেরহাম (বাংলাদেশি টাকায় ৩০ হাজার টাকা) বেতনের একটা সুপার মার্কেটের কাজ দেন। একমাস ঠিকভাবে বেতন দিলেও ৩ মাস যাবত বেতন বন্ধ। এখন কি করবো বুঝতে পারছি না।

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে আমিরাতে ভিসা বন্ধ। কোম্পানি পরিবর্তন করারও সুযোগ নেই। এই অবস্থা চলতে থাকলে আমিরাতে অর্ধেকেও বেশি প্রবাসী বেকার হয়ে পড়বে।

প্রবাসী সাইফুল্লাহ ও মনিরুলের মতো এমন হাজারো বাংলাদেশি আরব আমিরাতের দুবাই, শারজা, আজমান, আবুধাবিসহ বিভিন্ন রাজ্যে বেকার দিন পার করছেন।

দেশে রেমিট্যান্স তথা প্রবাসী আয় পাঠানোর পরিবর্তে তারা জীবিকা নির্বাহের জন্য ন্যূনতম যে অর্থ প্রয়োজন, তা দেশ থেকে নিচ্ছেন।

এসব অর্থ লেনদেন হচ্ছে হুন্ডির মাধ্যমে, যা দেশে সংগ্রহ করা হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা (এমএফএস) ব্যবহার করে।

কাতারে চাকরি খুঁজছেন? এখানে ক্লিক করুন

কারণ, অবৈধভাবে হুন্ডির মাধ্যমে লেনদেন করলে সহজে ও স্বল্প সময়ে অর্থ দেশে পৌঁছায়। আবার হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাঠালে বেশি টাকা পাওয়া যায়।

বাংলাদেশিরা জানান, ছয় মাস আগেও সেখানকার বিভিন্ন পার্কে দিনরাত বাংলাদেশি শ্রমিকে ভরা থাকত। তাদের অনেকেই এরই মধ্যে হয় দেশে ফিরেছেন। নয়তো অন্যত্র চলে গেছেন।

কাতারের সব খবর সরাসরি হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে ক্লিক করুন

আবার যারা কাজ পেয়েছেন, তারা মেস বা বাসায় উঠেছেন। ফলে এখন পার্কগুলোতে স্থান নিয়েছে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে আসা জনগোষ্ঠী।

আরব আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আবু জাফর ও দুবাই বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল বিএম জামাল হোসেন দুবাইয়ে দক্ষ শ্রমিকের সুযোগ কাজে লাগানোর তাগিদ দিয়ে গণমাধ্যমকে বলেছেন, আমিরাত সরকার দক্ষ শ্রমিকের দিকে নজর দিচ্ছে।

দক্ষ শ্রমিক ভিসা পেতে অসাধু মহলের পাল্লায় পড়ে ভুয়া সনদের আশ্রয় না নেয়ার এবং দেশটির আইন-কানুনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নিজ দেশের ভাব-মর্যাদা উজ্জ্বলে কাজ করার আহবান জানান।

আরও পড়ুন:

গালফ বাংলা

Loading...
,