ইমো প্রতারণা চক্রের কেন্দ্র নাটোরের লালপুর

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইমোতে প্রথমে খোলা হয় একটি ভুয়া আইডি। সেই আইডিতে জুড়ে দেওয়া হয় সুন্দরী নারীদের ছবি। এরপর শুরু হয় নারী পরিচয়ে আলাপ।

এক পর্যায়ে প্রতারণার ফাঁদ পাতেন তারা। সেই ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছেন অনেকে। প্রতারণাসহ ইমো হ্যাকের মাধ্যমে নাটোরের লালপুর উপজেলার বিলমারিয়া ইউনিয়নে একটি চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

অনেকে গড়ে তুলছেন আলিশান বাড়ি। কেউ কেউ কোটিপতি বনে গেছেন। তবে পুলিশ বলছে, এ বিষয়ে তাদের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। ফলে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছেন না তারা।

লালপুর-নওপাড়া সড়কে চোখে পড়বে নাগশোষা জামে মসজিদ সংলগ্ন কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি আলিশান বাড়ি। বাড়ির মালিকের দৃশ্যমান কোনো কর্ম নেই। কোনো জায়গা-জমিও নেই।

ওই বাড়ির মালিক জমির মিয়া (ছদ্মনাম)। জমিরের কথায় প্রায় শতাধিক যুবক ওঠাবসা করেন। শিক্ষাজীবনের প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়েছেন কি-না তা নিয়ে সন্দেহ থাকলেও ইমো হ্যাকের ‘গডফাদার’ হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে।

মহারাজপুরের রাজমিস্ত্রি কলিম মণ্ডলের মানিক প্রাইমারির গণ্ডি পেরিয়ে মাধ্যমিকে পা রেখেছিলেন বটে, তবে তিনি যে মোটরসাইকেল নিয়ে দাপিয়ে বেড়ান তার দাম প্রায় তিন লাখ টাকা। একই রকম গাড়ি আরও দুজনকে কিনে দিয়েছেন তার কাজের সহযোগিতার জন্য। ইমো হ্যাকার হিসেবে থানার নোটিশ বোর্ডে তার ছবি টাঙানো রয়েছে।

বিলমাড়িয়া বাজারের পশ্চিম পাশে গত কোরবানির ঈদের আগে পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকার জামা-কাপড় তুলে একটি দোকানে সাইনবোর্ড টাঙানো হয়। সাইনবোর্ডে হ্যাকার গ্রুপের একজন সক্রিয় সদস্যের নাম প্রোপাইটর হিসেবে থাকলেও আরেক ইমো হ্যাকারের শেয়ার রয়েছে ওই দোকানে। র্যাবের অভিযানে অনেকে আটক হওয়ার পর দোকানটি বন্ধ রয়েছে ।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৭ সালের দিকে লালপুরের বিলমাড়িয়া এলাকায় ফেসবুকে ভুয়া আইডি খুলে বিশেষ কৌশলে পুরুষ কণ্ঠ পরিবর্তন করে নারী কণ্ঠে ফোন সেক্স, ইমো সেক্স, ভিডিও সেক্স করে প্রবাসী যুবকদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া শুরু করে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক দল। চক্রটিতে মেধাবী ছাত্ররা পর্যন্ত জড়িয়ে পড়ে। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে নাটোরের ডিবির তৎকালীন ওসি আব্দুল হাইয়ের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করে ১১ জনকে আটক করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, বিলমারিয়া এলাকায় কমপেক্ষ ২৫ জন ইমো হ্যাকার সক্রিয় রয়েছে। তাদের দৃশ্যমান তেমন আয় না থাকলেও লাখপতি থেকে কোটিপতি বনে গেছেন তারা। শুধু বিলমারিয়া নয়, লালপুরের মোহরকয়া, চকবাদকয়া, নওপাড়া, গন্ডবিল, দুড়দুড়িয়া, মোমিনপুরসহ লালপুর উপজেলার পার্শ্ববর্তী রাজশাহী বাঘা উপজেলার সুলতানপুর, চাঁদপুর এলাকায় রয়েছে হ্যাকারদের উপদ্রব। স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশকে ম্যানেজ করেই চলছে হ্যাকারদের রমরমা ব্যবসা।

বিলমাড়িয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) মোমিনুল ইসলাম বলেন, হ্যাকারের উপদ্রব থেকে আমরাও মুক্তি চাই। দুড়দুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান বলেন, ইমো হ্যাকারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

জানতে চাইলে লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, বিলমারিয়া এলাকায় ইমো হ্যাকারদের বিরুদ্ধে লালপুর থানায় কেউ সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ করেননি। তবে পুলিশ বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে ২৭-২৮ জনকে আটক করেছে। কিন্তু কোনো অভিযোগকারী না থাকায় তাদের মোবাইলে পাওয়া পর্নো এবং আলামত দেখে পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা দেওয়া হয়েছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, ইমো চক্রের প্রতারণা বন্ধে পুলিশ সক্রিয় রয়েছে।

Loading...
,