উপসাগরীয় অঞ্চলে বৃহৎ বাণিজ্য হয়ে উঠছে ক্রীড়া আয়োজন

ফুটবল, ক্রিকেট, রাগবি থেকে শুরু করে ঘোড়দৌড়, ফর্মুলা ই ও বক্সিং পর্যন্ত প্রতিটি খেলার কেন্দ্র হয়ে উঠছে উপসাগরীয় দেশগুলো। কভিড-১৯ মহামারীর আগে থেকেই ক্রীড়াবিশ্বের জন্য একটি অন্যতম গন্তব্যস্থল ছিল মধ্যপ্রাচ্য।
কভিড এ প্রক্রিয়াকে আরো ত্বরান্বিত করেছে। এক্ষেত্রে কভিডের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ ও উচ্চ টিকাদান হার সহায়তা করেছে। স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ইভেন্ট আয়োজনে শীর্ষে চলে যাচ্ছে দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও উপসাগরীয় সহযোগী সংস্থার (জিসিসি) বিস্তৃত অংশ। আর এটি এ অঞ্চলের জন্য বৃহৎ বাণিজ্যের দ্বার উন্মুক্ত করেছে।
অ্যারাবিয়ান বিজনেসের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বকাপ, ফর্মুলা ওয়ান প্রতিযোগিতা, গলফ টুর্নামেন্ট পিজিএ ট্যুর ইভেন্টগুলো উপসাগরীয় অঞ্চলে স্থানান্তরিত হচ্ছে। দাবি উঠছে, তৃণমূল পর্যায়ে খেলাধুলার উন্নয়নে সমানভাবে জোর দেয়ার।
আইনি পরামর্শক সংস্থা স্কয়ার প্যাটন বগসের মধ্যপ্রাচ্যের ক্রীড়া ও বিনোদন গ্রুপের প্রধান স্টিভ বেনব্রিজ বলেন, কভিড আমাদের সামনে অনেকগুলো সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। এগুলো এখনই কাজে লাগাতে হবে।
কারণ স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে আইপিএলের মতো খেলা এখানে থাকবে না। সুতরাং নিরাপদ একটি স্থান হিসেবে এ অঞ্চল যেভাবে বিবেচিত হচ্ছে, সেই ধারা আমাদের বজায় রাখতে হবে। পাশাপাশি তৃণমূল পর্যায় থেকে খেলাধুলার উন্নয়নে মনোনিবেশ করতে হবে।
মহামারীর মধ্যে আল্টিমেট ফাইট চ্যাম্পিয়নশিপ ‘ফাইট আইল্যান্ড’ আয়োজন করে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছিল আবুধাবি। খেলোয়াড় ও দলকে রাখার জন্য স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বাবল তৈরি করেছিল শহরটি। লাভজনক ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) চলতি আসরের বাকি অংশ দুবাই, আবুধাবি ও শারজাহ ভেনুতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ আয়োজনে ২০০২ সালের ফুটবল বিশ্বকাপে কাজ করা বেনব্রিজ বলেন, একটি বড় ক্রীড়া ইভেন্টকে টেনে আনতে আপনাকে লোকজনের সব ধরনের সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। আপনাকে নির্দিষ্ট মানের হোটেলের ব্যবস্থা করতে হবে, সেগুলো সর্বদা প্রস্তুত রাখতে হবে এবং অতিথিদের সর্বোত্কৃষ্ট যত্ন নিতে হবে। এর মাধ্যমে আমরা ক্রীড়া আয়োজনের কেন্দ্র হয়ে উঠেছি।
তিনি আরো বলেন, আমরা অন্যদের চেয়ে দ্রুতগতিতে মহামারী নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি এবং কভিডের টিকাদান হারেও এগিয়ে রয়েছি। এগুলো আমাদের বিস্তৃত সুযোগ করে দিয়েছে। এছাড়া আমাদের শীর্ষ পর্যায়ের ক্রীড়া আয়োজনের উন্নত পরিকাঠামো সহায়তা করছে।
দুবাই স্পোর্টস কাউন্সিলের (ডিএসসি) চেয়ারম্যান শেখ মনসুর বিন মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমের মতে, দুবাইয়ের অর্থনীতিতে ক্রীড়া খাতের অবদান এখন বার্ষিক ১০৯ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এক্ষেত্রে ক্রীড়া ইভেন্টগুলোর আয়োজক হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের অবস্থান একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
তিনি বলেন, দুবাইয়ের উন্নত ক্রীড়া অবকাঠামো আন্তর্জাতিক ইভেন্টগুলোকে আকর্ষণ করছে। সাইকেল চালানো ও দৌড়ানোর জন্য পৃথক ট্র্যাক এবং ক্রীড়া একাডেমি ও ফিটনেস সেন্টারের ক্রমবর্ধমান সংখ্যার পাশাপাশি দুবাইয়ের ক্রীড়া খাতের উন্নয়ন কেন্দ্রগুলোও মূল ভূমিকা পালন করেছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত ডিএসসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রায় ১৫ লাখ মানুষ আমিরাতের নিয়মিত খেলাধুলা ও শারীরিক কার্যক্রমে জড়িত থাকে। এছাড়া দুবাইয়ের ক্রীড়া খাতে নিযুক্ত লোকের সংখ্যাও প্রতি বছর উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ছে।
আগামী মাসে অনুষ্ঠেয় ছয় মাসব্যাপী এক্সপো ২০২০ দুবাই ক্রীড়া ভক্তদের প্রচুর উৎসাহ দেবে। ডিএসসি নিশ্চিত করেছে, এর মাধ্যমে বাণিজ্যিক শোয়ের পাশাপাশি ক্রীড়া কার্যক্রম ও ইভেন্টগুলোর একটি জোয়ার শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বেনব্রিজ জোর দিয়ে বলেন, ১৮২ দিনের ইভেন্টটি দুবাইয়ের ক্রীড়া খ্যাতি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দিতে প্রধান ভূমিকা পালন করবে। আমি মনে করি, খেলাধুলা দুবাইয়ের অস্তিত্বের অংশ হয়ে উঠেছে।
