কাতারের আমিরকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত ঢাকা

পারস্য উপসাগরের দেশ কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি সোমবার (২২ এপ্রিল) বিকেলে দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসছেন। বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র কাতারের আমিরকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুতি শেষ করেছে ঢাকা।

কাতারে বিভিন্ন কোম্পানিতে নতুন চাকরির খবর

এই সফরে দুইপক্ষের মধ্যে ৬টি চুক্তি ও ৫টি সমাঝোতা স্মারক সহ মোট ১১টি দলিল সই হবে। দুই পক্ষের শীর্ষ প্রধানের বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় ইস্যূর বাইরে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যূ আলোচনায় উঠবে, প্রাধাণ্য পাবে মধ্যপ্রাচ্যের ইস্যূ।

রাষ্ট্রপতির প্রেস উইং জানিয়েছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সোমবার বিকেল ৫টায় কাতারের আমিরকে ফুলেল শুভেচ্ছায় অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করবেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। এর পর গার্ড অফ অনার প্রদান করা হবে। পরদিন মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন কাতারের আমির।

সেখানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত বৈঠকের পর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এরপর দুই শীর্ষ প্রধানের উপস্থিতিতে গণভবনে দুইপক্ষের মধ্যে ৬টি চুক্তি ও ৫টি সমঝোতা স্মারক সই হবে। এদিন দুপুরে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বঙ্গভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও রাষ্ট্রীয় মধ্যাহ্নভোজনে অংশগ্রহণ এবং সন্ধ্যায় বিশেষ বিমানযোগে ঢাকা ত্যাগ করার কথা রয়েছে কাতারের আমিরের।

কাতারের সব আপডেট পেতে যুক্ত হোন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে

কাতারের আমিরের ঢাকা সফর উপলক্ষে সড়কের মোড়ে মোড়ে অভ্যর্থনা বার্তা, দুই দেশের পতাকা উত্তোলনসহ বিশেষ আলোকসজ্জা করা হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন জানিয়েছে, কাতারের আমিরের নামে ঢাকায় একটি সড়কের নামকরণ করা হবে। ঢাকা উত্তরের মিরপুরের কালসি এলাকায় বালুর মাঠের নির্মিতব্য পার্ক এবং মিরপুর ইসিবি চত্বর থেকে কালসি উড়াল সেতু পর্যন্ত সড়কটি আমিরের নামে করা হবে।

রোববার উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্টরা পার্ক এবং সড়কটি সরেজমিন পরিদর্শন করেন।

আগামী মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির এই দুটি স্থাপনা উদ্বোধনের কথা রয়েছে।

এর আগে, এই সফরের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করতে কাতারের আমিরের পক্ষে একটি অগ্রগবর্তী দল গত সপ্তাহে ঢাকা সফর করেন এবং দোহায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. নজরুল ইসলামও সফরটি সাফল্যমন্ডিত করতে ঢাকা অবস্থান করেছেন।

আমিরের সফরকে কেন্দ্র করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ রোববার দুপুরে মন্ত্রণালয়ে প্রেস ব্রিফ করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি-এর নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের কাতারি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় সফর করবেন।

প্রধানমন্ত্রী বিগত ২০২৩ এর মার্চ ও মে মাসে দুইবার কাতার সফরের মাধ্যমে উভয় দেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সুদৃঢ় অবস্থানে উপনীত হয়েছে। যার ধারাবাহিকতায় কাতারের আমির বাংলাদেশে সফর করবেন। প্রধানমন্ত্রী ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে সরকার গঠনের পর মধ্যপ্রাচ্য থেকে এটি প্রথম উচ্চ পর্যায়ের রাষ্ট্রীয় সফর।

বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর, বন্ধুত্বপূর্ণ ও বহুমুখী। কাতার বঙ্গবন্ধুর সরকারকালীন সময়ে (১৯৭৪ সালে) বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানকারী অন্যতম মুসলিম রাষ্ট্র।

সাম্প্রতিককালে কাতারের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে কূটনৈতিক, যোগাযোগ ও আলোচনার মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার পরিধি সম্প্রসারণের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, জ্বালানি, বিমান চলাচল, কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, কাতার মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার, সেখানে প্রায় ৪ লাখ বাংলাদেশি কর্মরত।

এছাড়া কাতারের বিপুল পরিমাণ সার্বভৌম তহবিল রয়েছে এবং বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনাময় বিনিয়োগের উৎস হতে পারে ওই তহবিল। একইসঙ্গে বাংলাদেশের জন্য জ্বালানি আমদানির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎস কাতার।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান বলেন, এই সফরে দুইপক্ষের মধ্যে ১১টি দলিল সই হবে, যার মধ্যে ৬টি চুক্তি ও ৫টি সমঝোতা স্মারক।

চুক্তিগুলো হচ্ছে দ্বৈতকর পরিহার, আইনগত বিষয়ে সহযোগিতা, সাগরপথে পরিবহন, বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সুরক্ষা, দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বদলি ও যৌথ ব্যবসা পরিষদ গঠন সংক্রান্ত চুক্তি। সমঝোতা স্মারকের মধ্যে রয়েছে, শ্রমশক্তি বিষয়ে সমঝোতা স্মারক, বন্দর পরিচালনা, উচ্চশিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা, যুব ও ক্রীড়া সহযোগিতা এবং কূটনৈতিক প্রশিক্ষণ সহযোগিতা।

তিনি আরো বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাত এবং গাজায় মানবতাবিরোধী অপরাধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ফিলিস্তিনিদের পক্ষে। কাতার এ বিষয়ে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছে, হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করছে কাতার। তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। স্বাভাবিকভাবে এসব আলোচনা আসতেই পারে।

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রুহুল আমিন রোববার সাংবাদিকদের বলেন, কাতারের সঙ্গে কর্মী নিয়োগ নিয়ে ১৯৮৮ সালে করা একটি চুক্তি আছে। যার আওতায় পেশাদার বিভিন্ন খাতে দক্ষ কর্মী যাচ্ছে দেশটিতে। তবে অদক্ষ কর্মীর চাহিদা নেই। এখন দেশটিতে আছে ৪ লাখ বাংলাদেশি কর্মী।

নতুন করে কর্মী পাঠানোর সুযোগ তৈরি করা, দুই দেশের মধ্যে তথ্য বিনিময়, দেশটিতে থাকা প্রবাসীদের সহায়তা করা, নতুন সম্ভাবনা খুঁজে বের করতেই নতুন করে একটি সমঝোতা স্মারক কাতারের আমিরের সফরে সই করা হবে।

Shomoyer Alo

Loading...
,