কাতারের আমির বাংলাদেশে যাচ্ছেন: যে ৮ বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হবে

ঢাকা ও দোহার কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির আসন্ন সফর উপলক্ষে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করতে দুই পক্ষের কূটনীতিকরা কাজ করছেন।

কাতারে বিভিন্ন কোম্পানিতে নতুন চাকরির খবর

আসন্ন সফরকে সামনে রেখে গত সোমবার দোহা থেকে একটি অগ্রবর্তী দল ঢাকায় আসে। তারা দেশটির আমিরের সফর উপলক্ষে নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয়ে খোঁজ-খবর নেন এবং অগ্রবর্তী দলটি গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বৈঠক করেন।

অন্যদিকে আসন্ন সফরকে সামনে রেখে দোহায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. নজরুল ইসলাম বুধবার ঢাকায় এসেছেন।

ঢাকা চাচ্ছে যে বাংলাদেশ-কাতারের মধ্যে আসন্ন সফরে কমপক্ষে ৮টি সমঝোতা স্মারক সই হোক। এর বাইরে ৪টি চুক্তি রয়েছে। যার মধ্যে ‘এগ্রিমেন্ট বিটুইন দ্য গভর্নমেন্ট অব দ্য পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ অ্যান্ড দ্য গভর্নমেন্ট অব দ্য স্টেট অব কাতার অন মিউচুয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যাসিস্ট্যান্স ইন কাস্টমস ম্যাটারস’ এবং ‘এগ্রিমেন্ট অন মেরিটাইম ট্রান্সপোর্ট বিটুইন দ্য গভর্নমেন্ট অব দ্য পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ অ্যান্ড দ্য গভর্নমেন্ট অব দ্য স্টেট অব কাতার’ শীর্ষক দুটি চুক্তির খসড়া গত ৮ এপ্রিল মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনুমোদন করা হয়।

কাতারের সব আপডেট পেতে যুক্ত হোন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে

আসন্ন সফরে দুই পক্ষের মধ্যে জ্বালানি সহযোগিতা, জনশক্তি এবং বাণিজ্য গুরুত্ব পাবে। এর বাইরে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, এয়ার সার্ভিস চুক্তির সংশোধন, দ্বৈত কর প্রত্যাহার, শুল্ক খাত, উচ্চশিক্ষা, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, যৌথ বাণিজ্য পরিষদ ও যৌথ কমিশন গঠনের বিষয়ও গুরুত্ব পাবে।

মূলত ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বাংলাদেশ জ্বালানি সংকটে পড়লে তৎকালীন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম জ্বালানি সংগ্রহে কাতারে ঝটিকা সফর করেন। ওই সফরে (২০২২ সালের সেপ্টেম্বর) দুই পক্ষের সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ভিসা ফ্রি যাতায়াত বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে একটি চুক্তি সই হয়।

ওই সময় দুই পক্ষের মধ্যে সংস্কৃতি, বন্দি বিনিময়সহ আরও ৫/৬টি ইস্যুতে ঢাকা-দোহার মধ্যে সমঝোতা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে দোহার পক্ষ থেকে কাতার ফিফা বিশ্বকাপ ২০২২ অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতিকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বলা হয়-বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির সফরে ওই সমঝোতাগুলো সই হবে।

পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি ব্যস্ততার কারণে দোহা সফরে যেতে পারেননি। তাই আসন্ন কাতারের আমিরের ঢাকা সফরে ওই সময়ের নেওয়া সমঝোতা স্মারকগুলো এখন সই করা হবে।

২০২২ সালের অক্টোবরে ওই সময়ে কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বিদায়ি সাক্ষাৎ করতে গেলে দেশটির আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি ঢাকা সফরের আগ্রহ প্রকাশ করেন। এর আগে বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালে কাতারের আমির সম্মতি প্রকাশ করেন।

মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্র কাতার বাংলাদেশের অনেক পুরোনো বন্ধু। স্বাধীনতার পর ১৯৭৮ সালের জানুয়ারি মাসে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। যার ধারাবাহিকতায় ১৯৮০ সালের জানুয়ারিতে ঢাকায় কাতার দূতাবাস স্থাপন করে এবং ১৯৮১ সালের ডিসেম্বরে দোহায় বাংলাদেশের দূতাবাস স্থাপন করা হয়।

সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. শহীদুল হক বলেন, এই সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের ৩টি দেশের মধ্যে কাতার অন্যতম। কাতারের আমিরের আসন্ন ঢাকা সফর আমাদের জন্য খুবই ইতিবাচক। কাতার শুধু আমাদের জন্য শ্রমিক পাঠানোর গন্তব্য নয় বরং কাতার আমাদের জন্য মেজর জ্বালানি হাব হতে পারে।

আমরা যদি কাতার থেকে দীর্ঘমেয়াদে সস্তায় জ্বালানি সংগ্রহ করতে পারি তবে উন্নয়ন দারুণ গতিতে এগিয়ে যাবে।

পাশাপাশি কাতার থেকে তরল গ্যাস (এলপিজি) সংগ্রহ করা যায়। বিগত ২০১৫-১৬ সালে শোনা গিয়েছিল যে কাতার তাদের অবকাঠামো উন্নয়ন, এয়ারক্রাফট-ট্যাঙ্ক মেইনটেন্যান্সে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চায়।

এটা যদি বাস্তবায়ন করা যায় তবে কূটনীতিতে বিরাট সাফল্য আসবে। এ ছাড়া কুয়েতে যেমন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি কন্টিনজেন্ট আছে তেমন একটি কন্টিনজেন্ট কাতারে পাঠাতে পারলেও বিরাট কূটনৈতিক সাফল্য অর্জিত হবে।

আরো পড়ুন

Shomoyer Alo

Loading...
,