কাতার প্রবাসীর ছেলের বউকে নির্যাতনের পর এসিডে ঝলসে দেওয়া হলো

রোববার (৫ সেপ্টেম্বর) সকালে ফেনীতে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা রোধের শহরে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সভার একটি কর্মসূচিতে অংশ নিতে যায় অমির পরিবার।
এ সুযোগে বেলা ১২টার দিকে বাবার বাড়ি ফুলগাজী উপজেলার দরবারপুর ইউনিয়নের পূর্ব দরবারপুর সেকান্দরপুর মৌলভী বাড়িতে নির্যাতিত অমির উপর অ্যাসিড ছোঁড়ে তিন যুবক। এদের মধ্যে ২ জনকে আটক করেছে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী।
অমির বোন শারমিন আক্তার জানান, ফেনীর সচেতন নাগরিক সমাজের আয়োজনে রোববার সকাল ১০টার দিকে নারী-শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণ প্রতিরোধে মানববন্ধনে অংশ নিতে শহরে যান তার মা শাহেন আরা বেগম।
মানববন্ধন শেষে তিনি খবর পান তার বাড়িতে অসুস্থ খালেদা আক্তার অমিকে লক্ষ্য করে জানালা দিয়ে এসিড নিক্ষেপ করা হয়েছে। বাকশক্তিহীন অমি তাদের জানিয়েছেন, ফুলগাজীর নিলক্ষ্মী শ্রীপুর এলাকার বাসিন্দা তারেক মিনার ও ফরহাদ এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
তারেক সম্পর্কে অমির স্বামী ফ্রান্স প্রবাসী আবদুল হালিম লিখনের ফুফাতো ভাই। মিনার ভাগ্নে। তিনি আরও জানান, অ্যাসিডে অমির মুখ ও হাত ঝলসে গেছে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়েছে।
ঘটনার সময় ঘরে থাকা অমির ছোট বোন মিম জানান, অমির চিৎকার শুনে তিনি অমির রুমে ছুটে যান। গিয়ে দেখেন রুমে বিছানা থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। অমির শরীর ঝলসে গেছে, সে মাটিতে কাতরাচ্ছে। পরে তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে অমিকে উদ্ধার করে ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তৌহিদুল ইসলাম জানান, অমির শরীরের ডান অংশে ও চোখে অ্যাসিডে ক্ষত হয়েছে। আশঙ্কামুক্ত হলেও কসমেটিকস সার্জারি প্রয়োজন। তাই অমিকে ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়েছে।
এদিকে, ঘটনার পরপরই মাঠে নামে র্যাব, পুলিশ ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। র্যাব অনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার না করলেও প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক সূত্র জানায়, তারেককে ফুলগাজী বাজার এলাকা থেকে দুপুর আড়াইটার দিকে আটক করা হয়েছে।
অন্যদিকে ফেনীর পুলিশ সুপার খন্দকার নুরুন্নবী মিনারকে পুলিশ আটকের কথা স্বীকার করে বলেন, তাকে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সাথে যারা জড়িত বলে জানা যাবে তাদেরকেও গ্রেপ্তার করা হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে ফুলগাজীর খালেদা ইসলাম অমির সাথে পারিবারিকভাবে পরশুরাম উপজেলার সাতকুচিয়া গ্রামের চৌধুরী বাড়ির আবুল হাসেমের ছেলে প্রবাসী লিখনের সাথে বিয়ে হয়।
বিয়ের পর থেকে লিখনের মা ও ভাই-বোনরা মিলে অমিকে যৌতুকের জন্য নানা নির্যাতন করতে থাকে। গত জুন মাসে চিকিৎসার নামে অমি ও তার চার বছরের একমাত্র কন্যা নুরীয়াকে জীবন বিষধর সাপ দিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়।
গত ৭ আগস্ট রাতে অমিকে একটি বিষধর সাপ কামড় দেয়। অমি মৃত্যুর যন্ত্রণায় ছটফট করলেও তাকে কোনো চিকিৎসা দেওয়া হয়নি।
পরদিন ৮ আগস্ট বিকেলে পাশের এলাকার একজন ওঝা পুনরায় সাপ দিয়ে চিকিৎসার নামে অমিকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে। খবর পেয়ে সেদিনই অমির পরিবার তাকে শ্বশুর বাড়ি থেকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।
পরে অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকের পরামর্শে অমিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ৮দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর গত ১৬ আগস্ট অমিকে বাবার বাড়িতে নিয়ে আসে তার পরিবার। চিকিৎসকরা জানান, অধিক নির্যাতনে অমি বাকশক্তি হারিয়েছে। এটি ফিরে পেতে সময় লাগবে।
এদিকে বাড়িতে নিয়ে আসার খবর পেয়ে ১৭ আগস্ট অমির শাশুড়িসহ তাদের লোকজন অমিকে জোর করে তার বাবার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় অমির পরিবার বাধা দিলে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা বাড়ি-ঘরে হামলা করে।
এ ঘটনায় ১৮ আগস্ট অমির মা শাহান আরা বাদী হয়ে ফুলগাজী থানায় ৯ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। মামলার পর চট্টগ্রামের হাটহাজারী এলাকা থেকে অমির ননদ হাসিনা আক্তার ও তার স্বামী আবুল কাশেমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
অমির বাবা ইসমাইল হোসেন ও ভাই সাগর কাতার প্রবাসী। তিন বোনের মধ্যে দ্বিতীয় অমির চার বছরের কন্যা নুরীয়া মায়ের জন্য দিশেহারা। অন্যদিকে মেয়ের শোকে মা পাগল প্রায়।
