কাতার হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের চ্যালেঞ্জ

যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি পরিসংখ্যান বিষয়ক সংস্থা ‘এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (ইআইএ) এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে যে দেশটির তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) অভ্যন্তরীণ চাহিদা গত বছরের তুলনায় কমে গেছে।

কয়লাসহ অন্যান্য জ্বালানির মূল্য অপেক্ষাকৃত কম হওয়ায় চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের এলএনজির চাহিদা আরও কমে যাবে বলে ইআইএ ধারণা করছে। তারপরেও যুক্তরাষ্ট্র রপ্তানি বাজারের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে এই জ্বালানি পণ্যের উৎপাদন বাড়িয়ে চলছে।

তবে শীর্ষ রপ্তানিকারক কাতারের এলএনজির দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় বিশেষজ্ঞরা যুক্তরাষ্ট্রের এমন পরিকল্পনাকে উচ্চাভিলাষী বলে আখ্যায়িত করেছেন। এর পাশাপাশি দেশটির এই পরিকল্পনায় তাঁরা কাতারকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন।

ইআইএর পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন বেড়েছে ৪.৩%। এই সময়ে দেশের অভ্যন্তরীণ জ্বালানির চাহিদা তার অর্ধেক বেড়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, দেশটির জন্য সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে রপ্তানির মাধ্যমে অতিরিক্ত উৎপাদিত এলএনজির পরিমাণ কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে। তবে দেশটিকে এলএনজির মূল্যের দিক থেকে বাজারের অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীর সাথে এক কঠিন অবস্থার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এশিয়ার শীর্ষ ৩ আমদানিকারক দেশে যুক্তরাষ্ট্রের এলএনজি রপ্তানির রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। সাধারণের তুলনায় তুলনামূলক তীব্র ঠাণ্ডা আবহাওয়া সত্ত্বেও ফেব্রুয়ারিতে দেশটির এলএনজি রপ্তানির পরিমাণ ৩২ লক্ষ টন।

অর্থাৎ জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানি বেড়েছে প্রায় আড়াই গুণ। একই সময়ে কেবল এশিয়াতেই জ্বালানি পণ্যটির রপ্তানি গত বছরের তুলনায় ৬৭% এরও বেশি বেড়ে গেছে। দেশটির উৎপাদক ও পরিশোধকদের জন্য এটি একটি ইতিবাচক দিক।

তবে অন্যদিক থেকে দেশটির জন্য এটি খুব একটা ভালো ব্যাপার নয়। এর কারণ হচ্ছে গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের মোট উৎপাদিত এলএনজির অর্ধেকেরই ক্রেতা ছিল এশিয়া। সেই হিসাবে চলতি বছর এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের এলএনজি রপ্তানির গতি বেশ নিম্নমুখী।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের কাছে এটা নিশ্চিত যে এলএনজি রপ্তানিকারকদের জন্য সবচেয়ে প্রধান বাজার হচ্ছে এশিয়া। বিদ্যুৎ ও অন্যান্য পণ্য উৎপাদনে সম্প্রতি মহাদেশটিতে কয়লার পরিবর্তে গ্যাসের চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে।

সম্ভাব্য আগামী দশকের মধ্যেই এশিয়ার শিল্প-কারখানাগুলো পুরোপুরি গ্যাসনির্ভরতার দিকে ঝুঁকবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদকদের জন্য সমস্যার বিষয় হচ্ছে, এলএনজির বাজারে কেবল তারাই নয়, অন্যান্য দেশও আছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, এলএনজির বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কাতার সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। বর্তমানেও দেশটি এলএনজির রপ্তানি বাজারে রাজত্ব করছে। বিশ্বের শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশ কাতারের এলএনজির দামও অন্যান্য দেশের দামের তুলনায় কিছুটা কম।

এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে জ্বালানি পণ্যটির উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে কাতার গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরিকল্পনা নিয়েছে। এরই মধ্যে দেশটি এলএনজি উৎপাদনে বিনিয়োগ বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে। এই ঘোষণা কাতারের অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে বলে গবেষকরা মনে করছেন।

কাতার তাদের এলএনজির বাজারে চূড়ান্ত বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে গত ফেব্রুয়ারিতে। এর মাধ্যমে দেশটি বিশ্বের শীর্ষ এলএনজি প্রকল্প নির্মাণের কথা জানিয়েছে। সম্প্রতি উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশটি তাদের বার্ষিক এলএনজি উৎপাদন ৭ কোটি ৭০ লক্ষ থেকে বাড়িয়ে ১১ কোটি টনে উত্তীর্ণ করার ঘোষণা দিয়েছে।

এতে কাতারের এলএনজি উৎপাদন সক্ষমতা ৪০% এর মতো বাড়বে। ফলে দেশটির এলএনজি উৎপাদন ব্যয় বেড়ে দাঁড়াবে ২ কোটি ৮৭ লক্ষ ৭৫ হাজার মার্কিন ডলার (প্রায় ২৪৩ কোটি ৯৪ লক্ষ ২৮ হাজার টাকা)। ২০২৫ সালের মধ্যে এমন লক্ষ্যমাত্রায় পৌছাবে কাতার।

Loading...
,