গড়ে প্রতিদিন ১০ প্রবাসীর লাশ আসে দেশে

কুড়িগ্রামের ‍যুবক আহমেদ রবি (২৮) কাজ করতে গিয়েছিলেন দুবাই। কিন্তু এক মাসের মাথায় ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঘুমের মাঝে তার মৃত্যু হয়। চিকিৎসকের সনদপত্রে লেখা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে।

কাতারে বিভিন্ন কোম্পানিতে নতুন চাকরির খবর

এর সাড়ে চার মাস পর তার মরদেহ দেশে আসে। গেল ১১ ডিসেম্বর তার মরদেহ দাফন করা হয়।

শুধু এই আহমেদ রবি নন, ২০২৩ সালে বিদেশ থেকে প্রবাসী কর্মীর লাশ এসেছে ৪,৫৫২ জনের। যা এযাবৎকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে ৩,৯০৪, ২০২১ সালে ৩,৮১৮, ২০২০ সালে ৩,০১৯ ও ২০১৯ সালে ৪,০৩৪ জন অর্থাৎ ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে মোট ১৯,৩২৭ জন প্রবাসীর মরদেহ দেশে এসেছে।

কাতারের সব আপডেট পেতে যুক্ত হোন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহকারী পরিচালক দেবব্রত ঘোষ বলেন, প্রতিদিন গড়ে ৮ থেকে ১০টি মরদেহ আসে।

মৃতদের সঙ্গে আসা নথিপত্র অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি প্রবাসী মারা যান মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত (ব্রেন স্ট্রোক) কারণে। এদের একটা বড় অংশই মধ্যবয়সী কিংবা তরুণ।

এ ছাড়া হৃদরোগসহ বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতা, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা, সড়ক দুর্ঘটনা, আত্মহত্যা কিংবা প্রতিপক্ষের হাতেও খুন হন বাংলাদেশিরা।

পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছরই লাশের সংখ্যা বাড়ছে। শুধু ২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ফ্লাইট বন্ধ থাকায় অনেক লাশই দেশে পৌঁছাতে পারেনি। সেগুলো প্রবাসেই দাফন করা হয়।

এছাড়া সরকারি এই হিসেবের বাইরেও নানা কারণে অনেক লাশ দেশে আসে না। অনেক লাশ প্রবাসে স্থানীয়ভাবে দাফন করা হয়ে থাকে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, কোনো রোগে মারা গেলে সেটিকে স্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে ধরা হয়। এর বাইরে প্রবাসীদের বেশিরভাগ মৃত্যুর কারণ হচ্ছে দুর্ঘটনা। প্রবাসী কর্মীদের মৃত্যুর কারণ জানতে সরকারিভাবে কোনো গবেষণা করা হয়নি।

তবে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত থেকে জানা যায়, প্রবাসী কর্মীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারা যান মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত বা ব্রেইন স্ট্রোকের কারণে। আবার এদের একটা বড় অংশই মধ্যবয়সী কিংবা তরুণ।

এ ছাড়াও হৃদরোগসহ বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতা, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা, সড়ক দুর্ঘটনা, আত্মহত্যা, কিংবা প্রতিপক্ষের হাতেও খুন হন বাংলাদেশিরা।

অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ও ব্র‌্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড সৌমিত চন্দ জয়দ্বীপ বলেন, ‘‘মধ্যপ্রাচ্য মূলত মরু আবহাওয়ার দেশ। প্রচণ্ড গরমে প্রতিকূল পরিবেশে অদক্ষ এই বাংলাদেশিরা ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন কাজে যুক্ত থাকেন।

একদিকে প্রতিকূল পরিবেশ, আরেকদিকে অমানুষিক পরিশ্রম, ১২ থেকে ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গাদাগাদি করে থাকা, দীর্ঘদিন স্বজনদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা এবং সব মিলিয়ে মানসিক চাপের কারণেই সাধারণত স্ট্রোক বা হৃদরোগের মতো ঘটনা ঘটে।’’

বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ডা. রশিদ ই মাহবুব বলেন, ‘‘বিদেশে গিয়ে জীবনটা কেমন হবে, চিকিৎসকের কাছে পরামর্শ কীভাবে নেবে, কীভাবে থাকবে-এসব বিষয়ে যদি সচেতনতা তৈরি করা যায়, তাতেও এই অস্বাভাবিক মৃত্যু অনেকখানি কমিয়ে আনা যায়।

রাষ্ট্রীয়ভাবে আমরা এত মৃত্যুর যে কারণ খুঁজবো, সেরকম কিছু এখনও পর্যন্ত হয়নি। অনুসন্ধান করলে কিছু পরামর্শ তৈরি করা যেতো।’’

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব রুহুল আমিন বলেন, ‘‘প্রবাসী কর্মীদের অকাল মৃত্যু কোনোভাবেই কাম্য নয়। এই বিষয়ে যা যা করার আমরা করবো।’’

আরও অন্যান্য খবর

DhakaTribune

Loading...
,