ঘানির চেয়ে তালেবানের হাতে নিরাপদ আফগানিস্তান: রাশিয়া

মস্কো জানিয়েছে, রাজধানী ঘিরে ফেলার পর প্রথমে তালেবানের নিরস্ত্র একটি দল কাবুলে প্রবেশ করে এবং আফগান সরকার ও যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের অস্ত্র সমর্পণের নির্দেশ দেয়।
তালেবানের প্রধান সশস্ত্র শাখাটি কাবুলে ঢোকে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পরে এবং শহরে কারফিউ জারি করে।
আফগানিস্তানের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির চেয়ে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী তালেবানের হাতেই কাবুল নিরাপদ বলে মনে করছে রাশিয়া।
ধর্মভিত্তিক দলটিকে প্রশংসায় ভাসিয়ে কাবুলে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি ঝিরনোভ সোমবার এ কথা বলেন। যদিও সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে রাশিয়ায় সরকারিভাবে এখনও কালো তালিকাভুক্ত তালেবান।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, মস্কোর মতে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের আমলে কাবুল যতটা নিরাপদ ছিল, তালেবানের শাসনের প্রথম ২৪ ঘণ্টায় তার চেয়ে বেশি নিরাপদ ছিল শহরটি।
রুশ রাষ্ট্রদূতের এই মন্তব্যকে তালেবানের সঙ্গে মস্কোর সম্পর্ক জোরদারের চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। যদিও কট্টরপন্থি গোষ্ঠীটিকে এখনও আফগানিস্তানের বৈধ শাসকদল হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে না রাশিয়া।
১৯৮৯ সালে আফগানিস্তানে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, তথা বর্তমান রাশিয়ার আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয় পেতে মুজাহিদিন বাহিনীকে সহযোগিতা করেছিল তালেবান।
রাশিয়ার ভাষ্য মতে, সাবেক উপনিবেশ আফগানিস্তানের এই অস্থিরতা যেন এশিয়ার মধ্যাঞ্চলে না ছড়ায়, তা নিশ্চিত করতে চায় মস্কো। একই সঙ্গে আফগান ভূখণ্ড যেন অন্যান্য উগ্রবাদী সংগঠনগুলোর চারণক্ষেত্র না হয়ে ওঠে, তাও নিশ্চিতের ওপর জোর দিচ্ছে রুশ সরকার।
অবিশ্বাস্য দ্রুততায় তালেবানের আফগানিস্তান দখলের ঘটনায় অন্যান্য দেশের মতো রাশিয়াও বিস্মিত বলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
কিন্তু ক্ষমতা দখলের পর থেকে এখন পর্যন্ত তালেবান শাসকদলের আচরণ ‘প্রশংসনীয়’ বলে মনে করেন ঝিরনোভ।
মস্কোর ইখো মোস্কভি রেডিও স্টেশনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘তালেবানের আচরণ ভালো, ইতিবাচক ও গঠনপূর্ণ। পরিস্থিতি এখন শান্তিপূর্ণ ও ভালো। কাবুলও শান্ত হয়ে আসছে।
‘আশরাফ ঘানির অধিনে শহরটির যে পরিস্থিতি ছিল, তার চেয়ে তালেবানের আমলে কাবুল বেশি নিরাপদ।’
তালেবান রাজধানী ঘিরে ফেললে রোববার দেশ ছেড়ে পালান ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি। রক্তপাত এড়াতে এ সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানান তিনি। তার বর্তমান অবস্থান অজানা।
ঝিরনোভ বলেন, ‘আফগানিস্তানের নির্বাচিত সরকার তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে। এরপর সর্বত্র নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়; ক্ষমতা নিয়ে বিশৃঙ্খলার মধ্যে লুটপাটও শুরু হয়েছিল।’
তিনি জানান, রাজধানী ঘিরে ফেলার পর প্রথমে তালেবানের নিরস্ত্র একটি দল কাবুলে প্রবেশ করে এবং সরকার ও যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের অস্ত্র সমর্পণের নির্দেশ দেয়। তালেবানের প্রধান সশস্ত্র শাখাটি কাবুলে ঢোকে ঘানি পালিয়ে যাওয়ার পর এবং শহরে কারফিউ জারি করে।’
কাবুলে রুশ দূতাবাসের নিরাপত্তার দায়িত্ব তালেবান নিয়েছে বলেও জানান ঝিরনোভ। দূতাবাসে শতাধিক রুশ কূটনীতিক অবস্থান করছে।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ভারতসহ প্রায় সব দেশ কাবুলে দূতাবাস বন্ধ করে কূটনীতিক ও নাগরিকদের ফিরিয়ে নিচ্ছে।
ব্যতিক্রম কেবল চীন ও রাশিয়া। দুটি দেশের সঙ্গেই সম্পর্ক জোরদারে কাজ করছে তালেবানও। গত সপ্তাহে চীন সফর করে তালেবানের একটি প্রতিনিধি দল। এর আগে রুশ কূটনীতিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতেরও আশ্বাস দেয় গোষ্ঠীটি।
কাবুলের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এমনকি মেয়েদের স্কুলগুলোতেও স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে ঝিরনোভ।
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক জোটের সেনারা আফগানিস্তান ছাড়তে শুরু করলে চলতি বছরের মে মাস থেকে আগ্রাসী হয়ে ওঠে তালেবান। মাত্র তিন মাসে দেশের দুই-তৃতীয়াংশ ও ১০ দিনে রাজধানী কাবুলসহ ২২টির বেশি প্রাদেশিক রাজধানী নিয়ন্ত্রণে নেয় গোষ্ঠীটি।
যুক্তরাজ্যে অবস্থিত রুশ দূতাবাস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে লিখেছে, ‘ওয়াশিংটনের আফগানিস্তান ত্যাগের মাধ্যমে এটাই প্রমাণ হচ্ছে যে ভূরাজনৈতিক নক্ষত্র যুক্তরাষ্ট্র প্রভাব হারাতে বসেছে।’
