ছুটিতে থাকা প্রবাসীদের টিকা পেতে যা করতে হবে
কিছুদিন আগে বাংলাদেশে সরকার ঘোষণা দিয়েছিল যে প্রবাসী শ্রমিকরা করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন এবং তাদের ক্ষেত্রে বয়স ভিত্তিক নিয়ম প্রযোজ্য হবে না।
প্রবাসী শ্রমিকদের অনেকেই অবশ্য অভিযোগ করছেন যে টিকা পেতে যেসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে সে সম্পর্কিত তথ্য তারা পাচ্ছেন না।
বৃহস্পতিবার ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে টিকা না পেয়ে সেখানে বিক্ষোভ করেছেন প্রবাসী শ্রমিকেরা।
বিক্ষোভের পর জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো বা বিএমইটি’র তরফ থেকে জানানো হয়েছে কাল থেকে সারা দেশে ৫৩ টি কেন্দ্রে প্রবাসী শ্রমিকদের নিবন্ধন শুরু হবে।
টিকা পেতে হলে যা করতে হবে
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো বা বিএমইটি’র অধীনে নিবন্ধন করে তবেই টিকার জন্য নিবন্ধন করা যাবে।
সংস্থাটির পক্ষ থেকে আজ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে বাংলাদেশের ৪২টি জেলায় বিএমইটি’র কার্যালয়ে প্রবাসী কর্মীরা সকাল নয়টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত সরাসরি গিয়ে নিবন্ধন করতে পারবেন।
এছাড়া সারা দেশে বিএমইটি’র যে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো রয়েছে তার মধ্যে নয়টি এবং নারায়ণগঞ্জের ইন্সটিটিউট অফ মেরিন টেকনোলজিতে গেলেও তারা করা যাবে।
নয়টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো হচ্ছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর, মাদারীপুর, মেহেরপুর, শরীয়তপুর, সুনামগঞ্জ, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম এবং লালমনিরহাটে অবস্থিত।
এছাড়া ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপের মাধ্যমেও নিবন্ধন করা যাবে। বিএমইটি থেকে দেয়া স্মার্টকার্ড না থাকলেও যেকোনো শ্রমিক এই নিবন্ধন করতে পারবেন। সেজন্য পাসপোর্ট নম্বর প্রয়োজন হবে।
অ্যাপে গিয়ে টিকার নিবন্ধন
এই নিবন্ধন করার পর তা সফল হলে তারপর সরকারের ‘সুরক্ষা’ ওয়েবসাইট বা অ্যাপে গিয়ে টিকার জন্য নিবন্ধন করতে হবে।
বিএমইটির নিবন্ধন করা থাকলে টিকার নিবন্ধনে বয়সের ক্ষেত্রে ৪০ বছর না হলেও প্রবাসী কর্মীরা টিকার জন্য নিবন্ধনের সুযোগ পাবেন।
সুরক্ষায় নিবন্ধনের পরে মোবাইল ফোনে মেসেজের মাধ্যমে টিকার কেন্দ্র ও তারিখ জানানো হবে।
শুধু নিবন্ধন করেই কেন্দ্রে চলে গেলে হবে না। মোবাইল ফোনে মেসেজের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য ফাইজারের টিকা
মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশের শ্রমিকদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য দেশ সৌদি আরব ঘোষণা করে যে সেখানে পৌঁছানোর পর শ্রমিকদের সরকার নির্ধারিত হোটেলে নিজ খরচে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।
কুয়েতেও একই নিয়ম। তবে টিকা দুটি ডোজই নেয়া থাকলে এই নিয়ম শিথিল থাকবে।
শ্রমিকদের কোয়ারেন্টিন প্যাকেজের জন্য ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকাও খরচ করতে হচ্ছে।
আর সেজন্যেই টিকায় অগ্রাধিকারের ব্যাপারে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে। তবে তারা শুনেছেন সৌদি আরব ও কুয়েত চীনের তৈরি টিকার সনদ গ্রহণ করা হবে না।
তাই প্রবাসী কর্মীরা ফাইজারের টিকা নিতে চান।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মোঃ শহিদুল আলম জানিয়েছেন প্রবাসী শ্রমিকদের ফাইজারের টিকা দেবার পরিকল্পনাই তারা করছেন। তিনি বলেছেন, “সরকারের হাতে যতক্ষণ ফাইজার থাকবে সেটা আমরাই পাবো সেরকমই কথা হয়েছে।”
বাংলাদেশের কাছে এই মুহূর্তে এক লাখের মতো ফাইজারের তৈরি টিকা রয়েছে। তবে ফাইজারের টিকার মূল সমস্যা হল এটি খুব কম তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়।
ফাইজারের টিকা মাইনাস ৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় রাখতে যা ঢাকা ছাড়া অন্য কোথাও সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে মুশকিল হচ্ছে এই টিকা নিতে হলে সকল শ্রমিকদের ঢাকায় আসতে হবে।
যে হাসপাতালগুলোতে প্রবাসী শ্রমিকেরা টিকা পাবেন
ঢাকার সাতটি হাসপাতালে শ্রমিকদের টিকা কেন্দ্র হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। কেন্দ্রগুলো হল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল।
