জ্বালানি তেলের বাজারে নতুন প্রতিযোগিতা
অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন থেকে সরে আসছে উন্নত বিশ্বের দেশগুলো। কেবল উত্তোলন নয়, ব্যবহারের জন্যও বিকল্প খুঁজছে সেইসব রাষ্ট্রসমূহ যাদের একসময়ের অর্থনীতি ছিল জ্বালানি তেল নির্ভর।
মূলত কার্বন নিঃসরণ কমাতেই এসকল উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তবে সম্প্রতি জ্বালানি তেলের বাজারে যুক্ত হয়েছে গায়ানা, সুরিনাম এবং ঘানা।
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের বৃহত্তম শহর হিউস্টনে তিন দেশের সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত অফশোর টেকনোলজি কনফারেন্সে বলা হয়, দক্ষিণ আমেরিকার প্রতিবেশী দুটি দেশ গায়ানা ও সুরিনাম অফশোর বেসিনে কয়েককোটি ব্যারেলের তেলের খনি আবিষ্কার করেছে।
বাজারে চাহিদা থাকা অবস্থায় তারা তাদের এই খনিজ সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে চায়। অন্যদিকের আফ্রিকার দেশ ঘানাও দেশটির খনিজ তেল উত্তোলনে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা যায়।
কনফারেন্সে ঘানার জ্বালানিমন্ত্রী মেথিউ ওপোকু প্রেম্ফ বলেন, ‘আফ্রিকায় আমাদের লাখ লাখ মানুষ এখনো বিদ্যুৎ সুবিধাবঞ্চিত। ফলে বর্তমান বিশ্ব জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে ঝুঁকলেও আমাদের ভিন্ন পথে হাঁটতে হবে। জ্বালানি তেলের যেসব প্রাকৃতিক উৎস রয়েছে, সেগুলো অব্যবহূত রাখার সুযোগ নেই।’
ঘানায় প্রায় ৫০০ কোটি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের প্রাকৃতিক মজুদ রয়েছে। এসব জ্বালানি তেল উত্তোলনে তত্পর হয়ে উঠেছে দেশটি। এরই অংশ হিসেবে গত মাসে ১৬৫ কোটি ডলার ঋণের আবেদন করা হয়েছে। এটি সংসদীয় অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
এদিকে চলতি বছরের শুরুর দিকে বিশ্বের শীর্ষ জ্বালানি তেল উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠান এক্সন ঘানার গভীর সমুদ্র থেকে জ্বালানি তেল উত্তোলন প্রকল্প থেকে সরে আসে। মূলত প্রকল্পাধীন অঞ্চলটি ভূমিকম্পের প্রবল ঝুঁকিতে থাকায় এ প্রকল্প থেকে বের হয়ে আসে এক্সন। ফলে প্রকল্প সমুন্নত রাখা এবং জ্বালানি তেল ও গ্যাস ব্লকের উন্নয়নের জন্য বড় অংকের এ ঋণ ঘানার জন্য জরুরি হয়ে পড়ে।
কনফারেন্সে গায়ানার ভাইস প্রেসিডেন্ট ভারাট জাগডিও বলেন, ‘ছোট দেশ হওয়ায় বড় পরিসরে জ্বালানি তেল উত্তোলনের সক্ষমতা ও ফ্রেমওয়ার্ক আমাদের নেই। ফলে আমাদের জ্বালানি তেল খাত দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হবে না। তবে আমরা ধীরে ধীরে এ খাত সম্প্রসারণের ধারা অব্যাহত রেখেছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘গায়ানার তিন-চতুর্থাংশই বনাঞ্চল দিয়ে ঘেরা। কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে এটি আমাদের বড় ধরনের সুবিধা দিচ্ছে। জ্বালানি তেল ও গ্যাস উত্তোলনের কারণে যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ হবে তাতে ভারসাম্য বজায় রাখবে বৃহৎ এ বনাঞ্চল।’
তার দেয়া তথ্যমতে, ক্ষুদ্র এ দেশ বর্তমানে দৈনিক এক লাখ ব্যারেলেরও বেশি অপরিশোধিত জ্বালানি উত্তোলন করছে। এসব তেলের বেশির ভাগই আসে এক্সন ও হেস পরিচালিত স্টাব্রেক ব্লক থেকে।
এদিকে সুরিনামের রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি তেল কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্যাট্রিক বার্নিংস বলেন, ‘জ্বালানি তেল ও গ্যাস খাত দিন শেষে আমাদের কতটুকু দিচ্ছে তা অনুভব করতে হবে। তাছাড়া নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে স্থানান্তরের জন্য আমাদের ব্যাপক বিনিয়োগ প্রয়োজন। আরো পাঁচটি ব্লকে উত্তোলন দ্রুত শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি তেল কোম্পানিটির।’
অব্যবহূত জ্বালানি তেল উত্তোলনের লক্ষ্যে ফ্রান্সের টোটালএনার্জিস, কাতার পেট্রোলিয়াম ও যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন করপোরেশনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছে। এরই মধ্যে কোম্পানিগুলো মূল ভূখণ্ডের বাইরে তিনটি ব্লক থেকে জ্বালানি তেল উত্তোলনের অনুমতি পেয়েছে।
