তালেবানের ২৬ সদস্যের মন্ত্রিসভা

তালেবান শিগগিরই ২৬ সদস্যের মন্ত্রিসভার ঘোষণা দিতে যাচ্ছে। এতে ‘রাহবারি শূরা’ বা নেতৃত্বদানকারী কাউন্সিলের সব সদস্য অন্তর্ভুক্ত থাকবেন বলে জানা গেছে।

তালেবানের সুপ্রিম কমান্ডার হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা, তার সহকারী হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান সিরাজুদ্দিন হাক্কানি, তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ছেলে মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুব এবং তালেবান মিলিটারি কমিশনের প্রধানের সাথে কান্দাহার শহরে সরকার গঠন সম্পর্কিত শলা-পরামর্শ শুরু করেছেন বলে তালেবানের সাথে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র ভয়েস অব আমেরিকাকে জানিয়েছে।

এর আগে তালেবানের ঊর্ধ্বতন নেতা শের মোহাম্মদ আব্বাস স্টানিকজাই গত শনিবার টেলিভিশনে দেয়া ভাষণে বলেন, বর্তমানে তালেবান নেতৃত্ব আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে এবং বাইরে গ্রহণযোগ্য ও স্বীকৃত হবে এমন একটি সরকার গঠনে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল এবং ইসলামী আমিরাতের মধ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। খবর : ভয়েস অব আমেরিকা, রয়টার্স, জিও নিউজ, ডয়েচে ভেলে, সিএনএন, আলজাজিরা, বিবিসি, সিজিটিএন, নিউজ ১৮ ও আজতাক।

তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ ভয়েস অব আমেরিকাকে জানান, সরকার গঠনের প্রক্রিয়াসম্পন্ন প্রায়। তিনি জানান, তালেবান নেতৃত্ব মন্ত্রিসভার নাম চূড়ান্ত করার দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধান সহকারী সিরাজুদ্দিন হাক্কানি এবং অপর সহকারী প্রধান মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুবকে। এই মন্ত্রিসভায় ২৬ জন সদস্য থাকতে পারেন এবং কাউন্সিলের বাইরের লোকজনও এতে শামিল হতে পারেন। সর্বোচ্চ নেতা আখুন্দজাদা নিজে মন্ত্রিসভার সদস্যদের চূড়ান্ত অনুমোদন দেবেন বলে জানান জাবিউল্লাহ।

নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক : এ দিকে আফগানিস্তানের দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করার জন্য জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচ সদস্য দেশ গতকাল সোমবার জরুরি বৈঠকে বসেছে। দেশের পুরো নিয়ন্ত্রণ তালেবানের হাতে চলে যাওয়া এবং মার্কিন সেনা প্রত্যাহারে মাত্র এক দিন বাকি থাকার প্রেক্ষাপটে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো।

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডনের এক রিপোর্টে জানানো হয়েছিল, ফ্রান্স ও ব্রিটেন কাবুলে একটি নিরাপদ জোন প্রতিষ্ঠার একটি প্রস্তাব উত্থাপন করতে পারে। যেসব ব্যক্তি আফগানিস্তান থেকে চলে যেতে চায় তাদেরকে কাবুল বিমানবন্দরে নিরাপত্তা দেয়ার জন্য এবং দেশটিতে মানবিক ত্রাণ অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে ফ্রান্স ও ব্রিটেন এই প্রস্তাব উত্থাপনের চিন্তা করছে বলে জানায় ডন।

তা ছাড়া কয়েকটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের অংশগ্রহণে একটি ভার্চুয়াল বৈঠকের আয়োজন করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। আফগানিস্তান সম্পর্কে ভবিষ্যৎ কৌশল নির্ধারণের লক্ষ্যে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা ও বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে আনার কাজ শেষ পর্যায়ে পৌঁছানোর প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের সাথে এই বৈঠক করবে। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, ব্রিটেন, তুরস্ক, কাতার এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা বা ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো এই বৈঠকে যোগ দেবে।

মার্কিন ড্রোন হামলায় একই পরিবারের ৬ শিশুসহ নিহত ৯ : কাবুলে মার্কিন ড্রোন হামলায় ছয় শিশুসহ একই পরিবারের ৯ জন নিহত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, কাবুলের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আত্মঘাতী গাড়ি বোমা হামলা ঠেকাতে ওই হামলাটি চালানো হয়েছিল। ড্রোনের আঘাতে ওই গাড়িতে থাকা হামলাকারীরাও নিহত হয়েছে। তবে গাড়িতে কতজন ছিল, তা জানা যায়নি। ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ড গত রোববার জানায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রোববার আফগান রাজধানী কাবুলে বিমানবন্দরের প্রতি ‘আসন্ন’ হুমকি সৃষ্টিকারী সন্দেহভাজন আইএসআইএসকের আত্মঘাতী বোমারুর উপর একটি আত্মরক্ষামূলক বিমান হামলা চালিয়েছে।

মার্কিন সামরিক বাহিনী রোববার রাতে স্বীকার করে যে হামলায় বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ডের মুখপাত্র ক্যাপ্টেন বিল আরবান এক বিবৃতিতে বলেন, গাড়িটি ধ্বংস করার জেরে বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটেছিল। এতে আরো কিছু হতাহত হয়ে থাকতে পারে। তবে সেখানে আসলেই কী ঘটেছিল, তা অস্পষ্ট। আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। তিনি বলেন, নির্দোষ যেকোনো ক্ষতির জন্য আমরা গভীরভাবে দুঃখিত। সিএনএনের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর এই বিবৃতি দেয়া হয়। সিএনএনের খবরে বলা হয়, ড্রোন হামলায় ছয় শিশুসহ একই পরিবারের ৯ সদস্য নিহত হয়েছে। সিএনএনের হয়ে কাজ করছেনÑ এমন এক স্থানীয় সাংবাদিককে এ তথ্যটি জানিয়েছেন নিহতদের এক ভাই।

এ দিকে আমেরিকান কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে আলজাজিরা জানিয়েছে, রোববার কাবুল বিমানবন্দরে হামলা চালাতে আসা একটি দলের ওপর আগেভাগেই মার্কিন ড্রোন আক্রমণ হয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন আত্মঘাতী হামলাকারী নিহত হয়েছে। তবে রোববারের ঘটনাটি সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ এখনো পাওয়া যায়নি। অন্য দিকে তালেবান পৃথক দু’টি হামলার কথা জানিয়েছেন। এর মধ্যে একটি ছিল বড় ধরনের বিস্ফোরণ।

মার্কিন ড্রোন হামলার নিন্দা তালেবানের : আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে রোববার যুক্তরাষ্ট্রের চালানো ড্রোন হামলার নিন্দা জানিয়েছে তালেবান। দলের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, অন্য দেশে যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের হামলা বেআইনি। চীনা সংবাদমাধ্যমকে সিজিটিএনকে দেয়া লিখিত প্রতিক্রিয়ায় জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, আফগানিস্তানে যদি সম্ভাব্য কোনো হুমকি থাকে তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত বিষয়টি তালেবানকে জানানো। নির্বিচারে হামলা চালিয়ে বেসামরিক মানুষকে হতাহত করা উচিত নয়। রোববার কাবুল বিমানবন্দর এলাকায় মার্কিন ড্রোন হামলার প্রতিক্রিয়ায় এমন মন্তব্য করেন তালেবান মুখপাত্র।

কাবুলের আকাশে একাধিক রকেট প্রতিহত : কাবুল বিমানবন্দরের দিকে ধেয়ে আসা অন্তত পাঁচটি রকেটকে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনা নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা। শহরটি থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের একেবারে শেষ পর্যায়ে রকেট হামলার এই ঘটনা ঘটল। সোমবার স্থানীয় সময় সকালে এ রকেট হামলা হয় বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। যত রকেট উড়ে এসেছে, তার সবই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনা নিষ্ক্রিয় করতে পেরেছে কি না, তাৎক্ষণিকভাবে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এখন পর্যন্ত রকেট হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের কেউ হতাহত হয়নি বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে; তবে পরে এই তথ্য বদলেও যেতে পারে, বলেছেন ওই কর্মকর্তা। হোয়াইট হাউজও কাবুল বিমানবন্দরে রকেট হামলার ঘটনা নিশ্চিত করেছে। বিষয়টি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে জানানো হয়েছে, বিমানবন্দরের কার্যক্রম ‘নির্বিঘেœই চলছে’ বলে জানিয়েছেন হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি।

নিরাপদ প্রত্যাহারে তালেবানের সাথে ৯৮ দেশের চুক্তি : আফগানিস্তান থেকে বহুজাতিক বাহিনীর প্রত্যাহারে ৩১ আগস্টের ডেডলাইনের পরেও বিদেশী নাগরিক ও বিদেশ ভ্রমণের যথাযথ ডকুমেন্ট থাকা আফগান নাগরিকদের ‘নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল’ প্রত্যাহারের জন্য তালেবানের সাথে চুক্তি করেছে ৯৮টি দেশ। সোমবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর যৌথভাবে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়। তালেবানের সাথে চুক্তি করা ৯৮ দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, জার্মানি ও ফ্রান্স রয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা তালেবানের কাছ থেকে নিশ্চয়তা পেয়েছি যেসব বিদেশী নাগরিক ও ভ্রমণের অনুমোদন থাকা যেকোনো আফগান নাগরিককে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার সাথে দেশ ছাড়তে ও দেশের বাইরে ভ্রমণে অনুমতি দেয়া হবে।’

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, “আমাদের নাগরিক, দেশবাসী, বাসিন্দা, কর্মী, আমাদের সাথে কাজ করা আফগান এবং যারা ঝুঁকিতে আছেন, আফগানিস্তানের বাইরে তাদের অবাধ ভ্রমণ অব্যাহত রাখায় নিশ্চয়তা দিতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’ ‘খ্যাতনামা আফগানদের’ জন্য ভ্রমণের অনুমোদন অব্যাহত রাখা হবে।” এ দিকে রোববার মার্কিন প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক স্যুলিভান জানিয়েছেন, আফগানিস্তানে যেসব মার্কিনি থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তারা আফগানিস্তানে আটকা পড়ে থাকবেন না।

ভবিষ্যতে যখন তারা বের হয়ে আসতে চান, তখনই যেন তাদের বের করা আনা সম্ভব হয়, এই লক্ষ্যে ব্যবস্থাপনা চালু রাখা হবে বলে জানান তিনি। এ দিকে ফ্রান্স ও ব্রিটেন একত্রে সোমবার জাতিসঙ্ঘে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে মানবিকসহায়তা চালু রাখতে নির্দিষ্ট ‘সেফ জোন’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব উত্থাপনের পরিকল্পনা করছে।

তালেবানের সাথে ফ্রান্সের আলোচনা : ফরাসি প্রতিনিধি তালেবানের সাথে কথা বলেছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। রোববার তিনি বলেন, আফগানিস্তান থেকে ফরাসি নাগরিকদের উদ্ধার করা নিয়ে তালেবানের সাথে একাধিকবার কথা হয়েছে। তবে প্রশাসক হিসেবে তালেবানকে মেনে নেয়ার ক্ষেত্রে এখনো ফ্রান্স কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বলেও স্পষ্ট করেছেন ম্যাক্রোঁ।

এ দিকে সোমবার একাধিক পশ্চিমা দেশের ভার্চুয়াল বৈঠকে বসার কথা। সেখানে তালেবান নিয়ে তাদের সিদ্ধান্ত কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা। সাংবাদিকদের ম্যাক্রোঁ জানান, ফরাসি নাগরিকদের উদ্ধারের বিষয়ে তালেবানের সাথে একাধিকবার কথা বলেছে ফরাসি প্রশাসন। তালেবানরা উদ্ধারকাজে সহায়তা করছে। এখন পর্যন্ত কয়েক হাজার ফরাসিকে আফগানিস্তান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

ম্যাক্রোঁর বক্তব্য, এর ফলে তালেবানের সাথে ফ্রান্সের সম্পর্ক তৈরি হলো, এমন মনে করার কারণ নেই। ফ্রান্স তালেবানকে স্বীকৃতি দেবে কি না, তা নিয়ে এখনো স্পষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তিনটি বিষয় ফ্রান্সের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এক. মানবাধিকার। বিশেষ করে নারীদের অধিকার। দুই. যে আফগান নাগরিকরা বিদেশে চলে যেতে চাইছেন, তাদের যেতে দিতে হবে। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যাবে না। তিন. আফগানিস্তানে সন্ত্রাসবাদীদের ঘাঁটি তৈরি করার সুযোগ দেয়া যাবে না। এসব শর্ত পূরণ করলে স্বীকৃতির বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করবে ফ্রান্স।

নারীদের পোশাক নিয়ে নির্দেশনার অধিকার পাশ্চাত্যের নেই : আফগানিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও হিজবে ইসলামী দলের প্রধান গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার বলেছেন, আফগানিস্তানে নারীদের পোশাক নিয়ে কোনো ধরনের নির্দেশনা দেয়ার অধিকার পাশ্চাত্যের নেই। সোমবার কাবুলে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমের কাছে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই কথা বলেন। তিনি বলেন, ইসলামের মূলনীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখেই আফগানিস্তানে নারীদের পোশাক নির্ধারিত থাকবে। তালেবানের উচিত হবে যে নারী পোশাকের নির্ধারিত নীতিমালা মেনে চলবে, তাদেরকেই কাজের অনুমতি দেয়া।

হেকমতিয়ার বলেন, তালেবানের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর দেশটিতে যদি একটি সমন্বিত সরকারও গঠন করা হয়, তবুও যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা আফগানিস্তানকে স্বীকৃতি দেবে না। হেকমতিয়ার বলেন, নতুন সরকার গঠনের জন্য প্রতিষ্ঠিত কাউন্সিল তালেবানের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানদেরও নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা চাই তালেবান সরকার কার্যকরভাবে কাজ করুক এবং এর ফলে আমরা আফগান জনগণের কাছে আবেদন করছি তারা যেন নতুন সরকারকে সহায়তায় একত্রে কাজ করে।’ একইসাথে আফগানিস্তানে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করতে আবার ভারতকে হুঁশিয়ারি করেছেন হেকমতিয়ার। তিনি বলেন, ‘ভারতসহ সব দেশেরই আফগানিস্তানে শান্তি বজায় রাখায় স্বার্থ রয়েছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মতোই ভারতের উচিত হবে অতীতের ভুলকে স্বীকার করে নেয়া এবং কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ না করার ঘোষণা করা।’

তিনি আরো বলেন, কাবুলের বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপ থেকে দূরে থাকার বিষয়ে আফগান জনগণকে আশ্বস্ত করা ভারতীয় সরকারের দায়িত্ব। মঙ্গলবার আফগানিস্তান থেকে বহুজাতিক বাহিনীর প্রত্যাহারের এক দিন আগে এই সাক্ষাৎকার দিলেন গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার।

পাক-ভারত দ্বন্দ্বে তালেবানকে না জড়ানোর আহবান : ভারত ও পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ লড়াইয়ে আফগানিস্তানকে টেনে আনা উচিত হবে না বলে মন্তব্য করেছেন তালেবান নেতা শের মোহাম্মদ আব্বাস স্টানিকজাই। স্টানিকজাই তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে। এক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে স্টানিকজাই জানান, প্রতিবেশীদের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখতে চায় তালেবান। ভারতের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর জন্য পাকিস্তানকে তালেবান সাহায্য করতে পারে বলে কয়েকদিন ধরেই গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছিল। এ ব্যাপারে স্টানিকজাই বলেন, আমাদের তরফ থেকে এ ধরনের কোনো ইঙ্গিত দেয়া হয়নি। আমরা আমাদের সব প্রতিবেশী দেশের সাথে সুসম্পর্ক রাখতে চাই।

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার দীর্ঘ রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক দ্বন্দ্বের ব্যাপারে অবহিত আছেন জানিয়ে তালেবানের এই নেতা বলেন, আমরা আশা করব তারা নিজেদের আন্তঃদ্বন্দ্বে আফগানিস্তানকে ব্যবহার করবে না। তাদের দীর্ঘ সীমানা রয়েছে, তারা নিজেদের মধ্যে সেসব সীমান্তের লড়াই করতে পারে। এ জন্য তাদের আফগানিস্তানকে ব্যবহার করা উচিত হবে না। আমরাও কোনো দেশকে আমাদের ভূমি ব্যবহার করতে দেবো না।

এর আগে তালেবান জানিয়েছিল আফগানিস্তানে চলমাল ভারতের প্রকল্প নিয়ে তাদের কোনো সমস্যা নেই। গত ২০ বছরে আফগানিস্তানের রাস্তা, বাঁধ আর পার্লামেন্ট ভবনসহ বেশ কিছু প্রকল্পে কাজ করেছে ভারত। দেশটিতে ভারতের কয়েকটি প্রকল্প চলমানও রয়েছে। এ ব্যাপারে তালেবানের মুখপাত্র সুহাইল শাহিন জানিয়েছিলেন, আফগানদের ভালোর জন্যই চলমান প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ করতে হবে।

Loading...
,