দিল্লির রোমানিয়ান দূতাবাসে ১০ হাজার শ্রমিকের ভিসা আটকা

দিল্লির রোমানিয়ান দূতাবাসে ২০২২ সালে জমা হওয়া ১০ হাজার শ্রমিকের ওয়ার্ক পারমিট ফাইলবন্দী হয়ে আছে।

এসব ওয়ার্ক পারমিটের বিপরীতে যথাসময়ে কর্মীর নামে ভিসা ইস্যু না হওয়ার কারণে বিদেশগামীদের যাত্রা অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে।

বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ এবং সিনিয়র সচিব ড. আহমদ মুনিরুছ সালেহীনকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়েছে।

কাতারের সব খবর হোয়াটসঅ্যাপে পেতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন

ভুক্তভোগী বিদেশগামী কর্মীদের অভিযোগ, পাসপোর্ট ও নগদ টাকা (সিকিউরিটি) রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর অফিসে জমা দিয়ে মাসের পর মাস পেরোনোর পরও বিদেশ যাওয়ার সঠিক সময় তারা জানতে পারছেন না।

রিক্রুটিং এজেন্সির অফিসে যোগাযোগ করলে তাদের এই তো ভিসা চলে আসছে, হয়ে যাবে ইত্যাদি বলে আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন। এতে বিদেশ যাত্রার ব্যাপারে তাদের মধ্যে হতাশা তৈরি হচ্ছে।

রোমানিয়ায় কর্মী পাঠানোর সাথে সম্পৃক্ত একাধিক ব্যবসায়ীর সাথে যোগাযোগ করা হলে গতকাল তারা নিজেদের নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, ২০২৩ সালে রোমানিয়া সরকার নতুন করে কোনো ভিসা ইস্যু করেনি। তারা বলেন, নতুন ভিসা ইস্যু তো পরের কথা, ২০২২ সালে যতগুলো ওয়ার্ক পারমিট তারা দিয়েছিল তারমধ্যে এখনো ২০-২২টি এজেন্সির প্রায় ১০ হাজার ওয়ার্ক পারমিট দিল্লির রোমানিয়া দূতাবাসে পেন্ডিং হয়ে আছে।

ভিসা না দেয়ায় আমরা ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আমরা বিদেশগামীদের আজ হবে, কাল হবে বলে শুধু সময় নিচ্ছি। এভাবে শ্রমিকদের কাছ থেকে আর কত সময় নেবো?

কেন দিল্লির রোমানিয়া দূতাবাস ভিসা ইস্যু করছে না, জানতে চাইলে তারা বলেন, শ্রমিক যাওয়ার পর পালিয়ে যাচ্ছে এর জন্যই রোমানিয়া সরকার বাংলাদেশীদের নামে ভিসা ইস্যু করতে ‘গড়িমসি’ করছে।

রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকরা বলছেন, প্রতিদিন ১৫০টি পাসপোর্ট জমা নেয়ার কথা, সেখানে জমা নিচ্ছে ১০ থেকে ২০টি। ২০২২ সালের ওয়ার্ক পারমিটের বিপরীতে ভিসা ইস্যু না হওয়া প্রসঙ্গে তারা বলেন, এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে শুধু বলছে দিচ্ছি, দেবো।

কাতারে চাকরি খুঁজছেন? এখানে ক্লিক করুন

দাউদকান্দি এলাকার একজন বিদেশগামী বলেন, আমি পল্টনের আকরাম টাওয়ারের একটি অফিসে পাসপোর্ট ও নগদ ৫০ হাজার দিয়েছি প্রায় ১ বছর হলো। কিন্তু আজো আমার ভিসা আসছে না। কি করবো হিসাব মেলাতে পারছি না। তাই কয়েকদিন ঢাকায় থেকে গ্রামে চলে এসেছি।

এরমধ্যে শুনেছি কাকরাইলের বিএমইটি অফিসে ঝামেলা হয়েছিল। এর জের ধরে ভিসা অফিস ঢাকা থেকে দিল্লি চলে যায়। সমস্যায় পড়ে যাই আমরা। এখন দিল্লি থেকে ভিসা পাওয়াটা অনেক কষ্টকর হবে বলে মনে হচ্ছে।

তবে রোমানিয়াতে অবস্থানরত বাংলাদেশী ব্যবসায়ী ও এশিয়া কন্টিনেন্টাল গ্রুপের (বিডি) স্বত্বাধিকারী লোকমান শাহ গতকাল বলেন, বাংলাদেশী শ্রমিকরা এদেশে আসার পর পালিয়ে যাওয়ায় রোমানিয়া সরকার খুবই ক্ষুব্ধ। তারমতে পালানো বন্ধে আমাদের সরকারের কঠোর আইন করা উচিত।

যদি শ্রমিক পালানো বন্ধ করা যায়, তাহলে পূর্ব ইউরোপের ৬টি দেশে (রোমানিয়া, সার্বিয়া, বুলগেরিয়া, ক্রোয়েশিয়া, কসোভো এবং মেসিডোনিয়া) ১ মিলিয়ন দক্ষ কর্মীর কর্মসংস্থান করা সম্ভব হবে। এতে আমাদের জিডিপি অনেক বাড়বে।

এক প্রশ্নের জবাবে লোকমান শাহ বলেন, বাংলাদেশের লোক পালানোর কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে অনেক সমালোচনা শুনতে হচ্ছে রোমানিয়া সরকারকে। তিনি এ ব্যাপারে আমাদের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার জন্য অনুরোধ জানান।

নতুবা সম্ভবনাময় শ্রমবাজার যেকোনো সময় হুমকিতে পড়তে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন।

প্রসঙ্গত, পূর্ব ইউরোপের নতুন এবং সম্ভবনাময় শ্রমবাজারটি দ্বিতীয় দফায় চালু হওয়ার পর বেশকিছু শ্রমিক দেশটিতে পাড়ি জমান। কিন্তু যাওয়ার আগে কর্মী পালাবে না, এমন নিশ্চয়তা দিয়ে স্ট্যাম্পে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর কর্মকর্তার কাছে চুক্তি করেন শ্রমিকরা।

তারপরও বেশিরভাগ শ্রমিক দেশটিতে যাওয়ার পরই পালিয়ে ইতালিসহ ইউরোপের অন্য দেশে চলে গেছেন বলে রোমানিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত প্রতিবেদকের কাছে আগেই নিশ্চিত করেছিলেন।

এর জের ধরে রোমানিয়ান সরকার চলতি বছর (২০২৩) একজন বাংলাদেশী কর্মীর নামে কোনো চাহিদাপত্র এখন পর্যন্ত ইস্যু করেনি বলে একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রোমানিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত দাউদ আলী গতকাল বিকেলে বলেন, অভিযোগটি সঠিক নয়। আমার জানা মতে, রোমানিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসটি দিল্লিতে চলে গেছে। সেখানে তারা ভিসা দিচ্ছে।

তবে অনেক শ্রমিকরা রোমানিয়ায় গিয়ে অন্য দেশে পালিয়ে যায়। এ কারণে তারা বাংলাদেশী শ্রমিকদের ওপর খুশি নয়। এ জন্যই ভিসা ইস্যুর গতি কিছুটা কম। ভিসা তুলনামূলক কম ইস্যু হচ্ছে।

আরো পড়ুন

NayaDiganta

Loading...
,