নতুন ব্যাগেজ বিধিমালার ফাঁদে ৩২০ প্রবাসীর সোনার বার

দুটি করে বার আনা যাবে, এই কথা জেনে স্বর্ণ এনে বিপাকে পড়েছেন কয়েকশ প্রবাসী। তারা দেশে ফিরতে ফিরতেই সরকারের নিয়ম পাল্টে গেছে। একটির বেশি বার থাকলেই তা জব্দ হয়ে যাচ্ছে।
গত ১ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে এই সিদ্ধান্ত জানানোর পর শুধু তিন দিনে ৩২০ জন প্রবাসীর কাছ থেকে ১১৭ গ্রামের একটি করে বার জব্দ করা হয়েছে।
কাতারের সব খবর হোয়াটসঅ্যাপে পেতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন
এই স্বর্ণ ফেরত পেতে ভুক্তভোগীরা ঢাকা কাস্টমস হাউজে ঘোরাঘুরি করছেন। কিন্তু তারা সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানতে পারছেন না।
কাস্টমস কর্তৃপক্ষও বুঝতে পারছে, এই প্রবাসীরা না জেনে এই কাজ করেছেন। তাদের স্বর্ণ কীভাবে ফিরিয়ে দেওয়া যায়, সে বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে কথাও বলেছে সংস্থাটি।
এনবিআর পরামর্শ দিয়েছে, কিছু জরিমানা দিয়ে তা ফিরিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
এতদিন যে কোনো প্রবাসী ভরিতে দুই হাজার টাকা কর দিয়ে দুটি বার আনতে পারতেন। এই সুযোগে বৈদেশিক মুদ্রার বদলে দুটি করে স্বর্ণের বার এনে দেশে বেচে দিলে মুনাফা হত তিন লাখ টাকা বা এর চেয়ে বেশি।
তবে অর্থমন্ত্রী এই সুযোগ কমিয়ে দিয়েছেন। গত ১ জুন পেশ করা বাজেটে ব্যাগে করে স্বর্ণ আনার সুযোগ কমিয়ে কর বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
এখন থেকে প্রবাসীরা সঙ্গে করে আনতে পারবেন একটি বার। আর ভরি প্রতি কর দিতে হবে চার হাজার টাকা।
মন্ত্রী সেদিনই জানিয়ে দিয়েছেন, কেউ একটির বেশি বার আনলে সেটি বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে।
অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব করা বাজেট সংসদে অনুমোদন সাপেক্ষে কার্যকর হবে আগামী জুলাই থেকে। তবে সরকারের প্রচলিত বিধান অনুযায়ী যদি নতুন করারোপ করা হয়, তাহলে সেটি কার্যকর হয় সঙ্গে সঙ্গে।
ফলে ১ জুন দুপুরের পর দুটি স্বর্ণের বার আনার সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
না জেনেই বিপাকে মোমেনরা
অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব করা বাজেট সংসদে অনুমোদন সাপেক্ষে কার্যকর হবে আগামী জুলাই থেকে। তবে সরকারের প্রচলিত বিধান অনুযায়ী যদি নতুন করারোপ করা হয়, তাহলে সেটি কার্যকর হয় সঙ্গে সঙ্গে।
ফলে ১ জুন দুপুরের পর দুটি স্বর্ণের বার আনার সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
মন্ত্রী যখন এই প্রস্তাব উত্থাপনও করেননি, সে সময় ময়মনসিংহের আবদুল মোমেন দুটি বার নিয়ে বাংলাদেশের পথে বিমানে চড়েন। দেশে নামার পর তার একটি স্বর্ণবার জব্দ হয়ে যায়।
মোমেন সৌদি আরব যান ছয় বছর আগে। কাজ করতেন একটি মোটর পার্টস কোম্পানিতে। কোভিডের সময়ও দেশে আসেননি। চলতি বছরের শুরুতে ছুটি পেয়ে ফেরেন।
কাতারে চাকরি খুঁজছেন? এখানে ক্লিক করুন
ছুটি শেষে গত ১৯ মে তিনি আবার সৌদি যান। কিন্তু তাকে নতুন কাজ খুঁজতে বলা হয়। সে পথে না গিয়ে দেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
মে মাসের শেষ দিকে দুটি স্বর্ণের বার কেনেন মোমেন। দাম নেয় সাড়ে ৫৫ হাজার রিয়েল। বাংলাদেশি মুদ্রায় তা ১৬ লাখ টাকার মত।
দেশে বিক্রি করে পাওয়া যাবে ১৯ লাখ টাকার বেশি। এই বাড়তি তিন লাখ টাকা মুনাফা এবং পুঁজি নিয়ে দেশে কিছু করার চেষ্টা করবেন, এই ছিল পরিকল্পনা।
তার ফ্লাইট উড়াল দেয় ১ জুন স্থানীয় সময় ভোর ৩টায়। তখনও অর্থমন্ত্রী তার বাজেট পেশ করেননি। রাত সাড়ে ১১টায় তিনি যখন ঢাকা বিমানবন্দরে পৌঁছান, তখন থাকা দুটি স্বর্ণের বারের একটি অবৈধ হয়ে যায়।
আগের চেয়ে বেশি কর দেওয়ার বিষয়টি মেনে নিয়েছিলেন মোমেন। কিন্তু দ্বিতীয় বারটি জব্দ হয়ে যাবে, এ কথা শুনে হতভম্ভ হয়ে যান।
তর্কাতর্কির পর তার কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা শুল্ক আদায় করে পাসপোর্ট ও আরেকটি স্বর্ণের বার রেখে দেন কাস্টমসের কর্মকর্তারা।
সেদিন তার মত আর ১০৭ জনের বার জব্দ হয়েছে। পরের দুই দিনে জব্দ হয় আরও ২২৩ জনের।
বাংলাদেশের বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী মোমেনের জব্দ করা ১০ তোলার ওই স্বর্ণের বারের দাম ৯ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। এই স্বর্ণ ছাড় করার আশায় ঢাকা কাস্টমস হাউজে বারবার ধরনা দিচ্ছেন তিনি। কিন্তু লাভ হচ্ছে না।
গত মঙ্গল ও বুধবার ঢাকা কাস্টম হাউজ এলাকায় গিয়ে দেখা যায় আরও অনেক প্রবাসীকে। তারা কেউ নতুন বিধানের কথা জানতেন না। দুটি বার এনে ‘ধরা’ খেয়েছেন।
সরকার ‘মানবিক হয়ে’ তাদের স্বর্ণ ফিরিয়ে দেবে, এমন প্রত্যাশায় পার করছেন দিন।
কাস্টমস কর্মকর্তারা মনে করছেন, এই যাত্রীরা নতুন ব্যাগেজ আইনের কথা না জেনেই স্বর্ণ এনেছেন। কিন্তু বিমানবন্দরে নেমে শুল্ক পরিশোধ করতে গিয়ে ধাক্কা খেয়েছেন।
ঢাকা কাস্টম হাউজের প্রিভেন্টিভ শাখার উপ কমিশনার সৈয়দ মুকাদ্দেস হোসাইন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখানে আইন মেনেই সবটা করা হয়েছে।”
এখন কী হবে
কাস্টমসের একজন উপ কমিশনার জানান, নতুন ব্যাগেজ রুলের কারণে যাদের স্বর্ণ জব্দ করা হয়েছে তাদের বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করার জন্য তাদের কর্মকর্তারা একমত।
তারা এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরের মত চেয়েছেন।
এনবিআরের একজন সদস্য বলেছেন, এই স্বর্ণ ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে তারাও একমত।
তিনি বলেন, “কাস্টমস কর্মকর্তাদের বিচারিক ক্ষমতাও আছে। ন্যায় নির্ণয় করে ডিউটি ট্যাক্স বা জরিমানা আদায় করে দ্বিতীয় বারটি ছাড় করে দিতে পারেন তারা।”
আরো পড়ুন
BDNews24
