পরিবারপ্রতি গড় প্রবাসী আয় ২ লাখ ১০ হাজার টাকা

দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়ার অন্যতম একটি কারণ প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্জন।

বৈধ চ্যানেলে বছরে ২০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিদেশি মুদ্রা পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন প্রবাসীরা। পাশাপাশি পরিবারেও সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনছেন তারা।

কাতারের সব খবর হোয়াটসঅ্যাপে পেতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন

সরকারি জরিপ সংস্থা বিবিএসের তথ্যানুযায়ী, দেশের প্রতিটি পরিবারের বছরে গড় প্রবাসী আয় ২ লাখ ১০ হাজার ৫৪ টাকা। ২০১৬ সালে একেকটি পরিবারের বছরে গড় প্রবাসী আয় ছিল ১ লাখ ৩৩ হাজার ৭৮ টাকা।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, কয়েক বছর ধরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রবাসী দক্ষতা অর্জন করে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়েছেন। যে পরিমাণ প্রবাসী বিদেশে গিয়েছেন, সে পরিমাণ আয় দেশে আসছে না।

প্রবাসীদের আয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশই বৈধ চ্যানেলে আসে না বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

বিবিএসের তথ্যানুযায়ী, প্রবাসী আয় পাঠানোর দিক থেকে শীর্ষে আছেন চট্টগ্রাম বিভাগের মানুষ। বিদেশে থাকা প্রবাসীর ৩৭ দশমিক ৯৪ শতাংশই এ বিভাগের। প্রবাসী আয়ের দিক থেকেও এ বিভাগ শীর্ষে রয়েছে।

বছরে প্রবাসী আয়ের ৪৩ দশমিক ১৪ শতাংশই চট্টগ্রাম বিভাগের মানুষদের পাঠানো। ২০১৬ সালেও বরাবরের মতোই শীর্ষে ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগের প্রবাসীরা।

কাতারে চাকরি খুঁজছেন? এখানে ক্লিক করুন

ওই সময় এ বিভাগের মধ্যে প্রবাসীর ৪৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ ছিলেন, প্রবাসী আয়ের ৪১ দশমিক ৭৮ শতাংশ আসত তাদের মাধ্যমে। শতাংশের হিসাবে ২০২২ সালে চট্টগ্রামের প্রবাসী কমলেও এ বিভাগের প্রবাসী আয় অন্য বিভাগের তুলনায় বেড়েছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত খানা আয়-ব্যয় জরিপের হিসাবে এ তথ্য উঠে এসেছে।

দেশের সব বিভাগের তথ্য-বিশ্লেষণে দেখা যায়, চট্টগ্রাম বিভাগের একটি পরিবার বছরে গড়ে প্রবাসী আয় গ্রহণ করেন ২ লাখ ৫৪ হাজার টাকা, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় আসে ঢাকা বিভাগের পরিবারগুলোতে।

ঢাকা বিভাগের একটি পরিবারের বছরে গড় আয় ২ লাখ ২৪ হাজার ৬৩ টাকা। তৃতীয় সর্বোচ্চ খুলনা বিভাগের পরিবারে, ১ লাখ ৮৭ হাজার টাকা, চতুর্থ অবস্থানে ময়মনসিংহের ১ লাখ ৮৬ হাজার ২৮ টাকা, পঞ্চম অবস্থানে রাজশাহীর পরিবারগুলোতে ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা, ষষ্ঠ সিলেটে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা, সপ্তম অবস্থানে রংপুরে ১ লাখ ৬ হাজার টাকা। সবচেয়ে কম প্রবাসী আয় আসে বরিশাল বিভাগের পরিবারগুলোতে।

এ বিভাগের প্রতিটি পরিবার বছরে গড়ে ১ লাখ ৪ হাজার টাকা গ্রহণ করে থাকে।

চট্টগ্রাম ও বরিশালের প্রবাসী আয়ে বড় ধরনের পার্থক্য থাকার কারণ হিসেবে অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বরিশাল পিছিয়ে পড়া অঞ্চল।

চট্টগ্রাম বিভাগের যারা যান তারা পরস্পরকে চেনেন। তাদের আত্মীয়স্বজন ও ভাইয়েরাই তাদের নিয়ে যান।

পারিবারিক বন্ধনের কারণে অনেক দিন থেকেই বিদেশি তারা বেশি যাচ্ছেন। চট্টগ্রাম বিভাগের মানুষ বহুদিন ধরেই মধ্যপ্রাচ্যে যান, ফলে তাদের কোনো দালাল ধরতে হয় না।

তিনি বলেন, দালাল না ধরলে সুবিধা হলো চাকরিটাও ভালো পাওয়া যায়। এ এলাকার মানুষ কেউ যদি একটি ভালো কোম্পানিতে কাজ করেন, তিনি চেষ্টা করেন তার ভাইকে ওই কোম্পানিতে নেওয়ার জন্য।

অনেক দিন ধরে থাকার পর কেউ চিন্তা করেন তার মেয়ের জামাইকে নিয়ে এসে সেখানে ভালো একটা বেতনে চাকরি দিতে। এ কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের লোকজন অনেক সংঘবদ্ধ।

এ বিভাগের মানুষজন কখনো বেকার থাকেন না, তাদের স্বজনরাই তাদের চাকরি জোগাড় করে দেন। তারা জানেন কীভাবে কাজ জোগাড় করতে হয়। অন্যদিকে বরিশাল অঞ্চলের মানুষ দক্ষতা ও যোগাযোগ ইত্যাদি দিক থেকে পিছিয়ে আছে।

তবে শঙ্কার বিষয় হলো বিবিএসের জরিপেই উঠে এসেছে, দেশে ব্রোকারদের মাধ্যমে বিদেশ থেকে অর্থ আসার হার বেড়েছে।

২০১৬ সালে একটি পরিবার বছরে ব্রোকারদের মাধ্যমে গ্রহণ করত ১ লাখ ৬২ হাজার টাকা, কিন্তু ২০২২ সালে এসে একটি পরিবার একই মাধ্যমে গড়ে সংগ্রহ করে ২ লাখ ৭ হাজার টাকার বেশি।

জরিপের তথ্য-বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রবাসীরা অর্থ পাঠানোর সবচেয়ে বিশ^স্ত মাধ্যম হিসেবে দেখছেন ব্যাংক ও ট্রাভেল এজেন্সিগুলোকে।

ব্যাংক খাতের মাধ্যমে প্রবাসীরা তাদের পরিবারের কাছে বছরে গড়ে ২ লাখ ৮১ হাজার টাকা পাঠিয়ে থাকেন। এ ছাড়া ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে পরিবারগুলো ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা গ্রহণ করে থাকে।

তবে ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে তুলনামূলক কম প্রবাসী টাকা পাঠিয়ে থাকেন।

টাকা হাতে পাওয়ার অন্য মাধ্যমগুলোর মধ্যে জনপ্রিয় মাধ্যম হলো ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন, মানিগ্রাম ও বন্ধু-বান্ধব।

ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে প্রতিটি পরিবার গড়ে ১ লাখ ৪৯ হাজার টাকা পায়, মানিগ্রামের মাধ্যমে পায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, বন্ধুদের মাধ্যমে পায় ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা।

সরকারি হিসাবে দেখা যায়, প্রবাসীদের ৮ শতাংশের বেশি মানুষ গড়ে ২৫ হাজার টাকা পাঠান প্রতি বছরে।

২৫ হাজার থেকে ৪৯ হাজার টাকা পাঠান ৬ দশমিক ৫২ শতাংশ, ৫০ হাজার থেকে ৯৯ হাজার টাকা পাঠান ১২ শতাংশ।

প্রতি বছর গড়ে এক থেকে দেড় লাখ টাকা পাঠান ১৫ শতাংশ প্রবাসী, দেড় থেকে ১ লাখ ৯৯ হাজার টাকা পাঠান ১৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ, ২ লাখ থেকে ৩ লাখ টাকা পাঠান ১৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ, ৩ থেকে ৪ লাখ গড়ে পাঠান ১৩ শতাংশ এবং ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা পাঠান ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ প্রবাসী।

আরো পড়ুন

DeshRupantor

Loading...
,