পাসপোর্ট পেতে চরম ভোগান্তি

পাসপোর্টের ফরম নিতে লম্বা লাইন। আগারগাঁওয়ের পাসপোর্ট অফিস থেকে লাইন শুরু হয়ে ঠেকেছে পাশের সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের গেট পর্যন্ত।
অফিসে আসা পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের ফরম দেয়ার জন্য মাত্র ২ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। শুধু ফরমের জন্যই নয়, পাসপোর্ট হাতে পাওয়া পর্যন্ত ১ জন গ্রাহককে নানা ঝুট-ঝামেলা পোহাতে হয়।
বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন প্রবাসী এবং তাদের স্বজনরা। ভোগান্তি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য অফিসের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ পর্যন্ত করেছেন।
কাতারের সব খবর হোয়াটসঅ্যাপে পেতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন
আবেদন করে দ্রুত পাসপোর্ট না পাওয়া, পাসপোর্ট সংশোধনের জন্য আবেদন করেও ডেলিভারি দ্রুত না পাওয়া, ঢাকাসহ মেট্রোপলিটন এলাকায় থানা ভাগ হয়ে যাওয়ায় রেন্যু হওয়া পাসপোর্ট দ্বিতীয়বার আবেদন করা, ছবি ঠিকমতো না উঠা, বর্ডার মেশিন মাঝে মাঝে অচল হওয়া ও জমা দেয়া ডকুমেন্টে আরও বেশি জমা দেয়া নিয়ে গ্রাহকরা চরম ভোগান্তিতে আছেন।
এ ছাড়াও ৩ কারণে পাসপোর্ট পেতে দেরি হচ্ছে বলে জানা গেছে।
কাতারে চাকরি খুঁজছেন? এখানে ক্লিক করুন
পাসপোর্ট অফিসের পর্যাপ্ত পরিমাণের প্রিন্ট মেশিন না থাকা, জনবলের অভাব, এবং পুলিশ ভেরিফিকেশন ঢিলেঢালা হওয়ার কারণে পাসপোর্টে জট লেগে থাকে।
পাসপোর্ট অফিসের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এই ৩ কারণ জানানো এবং এই ৩ কারণ দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেয়ার জন্য বলা হয়েছে।
কিন্তু, এখন পর্যন্ত এই ৩ কারণ সমাধান না হওয়ায় পাসপোর্ট ডেলিভারির ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাসপোর্ট অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এমআরপি সরবরাহ করা হচ্ছে না।
শুধুমাত্র ই-পাসপোর্ট ডেলিভারি দেয়া হচ্ছে। করোনার সময় এমআরপি বন্ধ হয়ে যায়। সরজমিন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পাসপোর্ট, ভিসা, ইমিগ্রেশন) সেলিনা বানু মানবজমিনকে জানান, ‘করোনার সময় পাসপোর্টে জট লেগেছিল। আস্তে আস্তে সেটি দূর হয়েছে। ডেলিভারি দ্রুত সহজ করার জন্য প্রশাসন বিভাগ কাজ করছে।’
গতকাল সকালে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অফিসের সামনে গিয়ে দেখা যায়, যারা নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করবেন এবং রেন্যু করবেন তারা ফরম সংগ্রহের জন্য দাঁড়িয়ে আছেন।
পৌনে ১ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পরও তারা কেউ কেউ ফরম পাননি। এ ছাড়াও পাসপোর্ট অফিসের ১ নম্বর ভবনের দ্বিতীয় তলায় ছিল প্রচণ্ড ভিড়।
লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা সাব্বির আহমেদ নামে একজন জানান, তিনি ২০১৮ সালে এমআরপি পাসপোর্ট করতে দিয়েছিলেন। কিন্তু, তার পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার বিষয়টি ঝুলে যায়।
কারণ হিসেবে তিনি জানতে পেরেছিলেন যে, তার স্কুল সার্টিফিকেট ও জন্মনিবন্ধনে দু’রকম নাম রয়েছে। এ নিয়ে দিনের পর দিন পাসপোর্ট অফিসে ঘুরতে হয়েছে। ভোগান্তিতে পড়েন চরমে।
সবুজ নামে একজন শিক্ষার্থী জানান, তার স্কুল সার্টিফিকেটে ইমরান হোসেন সবুজ লেখা আছে। ভোটার নিবন্ধনে মো. ইমরান হাওয়ার কারণে তার পাসপোর্ট আটকা আছে।
বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার পাসপোর্ট অফিসে আসলেও এর সুরাহা পাওয়া যায়নি। তিনি আজ আবার এসেছেন।
আরিফুল ইসলাম নামে আরেক পাসপোর্ট প্রত্যাশী গ্রাহক জানান, তার ভোটার আইডি ও জন্মনিবন্ধনে নামের গরমিল থাকার কারণে পাসপোর্ট পেতে দেরি হচ্ছে।
বিষয়টি দ্রুত সমাধান করার আশ্বাসও দিয়েছেন পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
সূত্র জানায়, যারা রেন্যু করার জন্য আবেদন করছেন তারা এখন থানা ভাগ হওয়া নিয়ে জটিলতায় আছেন। গত ১৩ বছরে ঢাকায় মোট ১০টি নতুন থানা হয়েছে। অনেক এলাকা ভেঙে নতুন থানা করা হয়েছে।
আবার জনসংখ্যা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য নতুন করে থানা স্থাপন করেছে সরকার। এতে অনেক পাসপোর্ট গ্রাহকের নতুন করে ঠিকানাগত জটিলতার মধ্যে পড়েছে।
এটিতে বেশি সমস্যা হয় পুলিশ ভেরিফিকেশন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে গ্রাহকের ঠিকানা খুঁজে না পেয়ে পাসপোর্ট অফিসে রিপোর্ট দেন যে এটির ঠিকানা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সূত্র জানায়, যাদের নিজ এলাকার ডাকঘর পরিবর্তন হয়েছে ওইসব আবেদনকারীর তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনলাইনে পুলিশের কাছে চলে যায়। পুলিশ সেগুলো দেখে ভেরিফিকেশন করে রিপোর্ট দিয়ে দেয়।
অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ দেখে যে, গ্রাহক আবেদনপত্রে যে ঠিকানা দিয়েছে, সেখানে তিনি নেই। ঠিকানা মোতাবেক তাকে না পাওয়ার কারণে প্রতিবেদন দিতে দেরি হয়। এর কারণে পাসপোর্ট প্রদানেও বিলম্ব হয়।
আরো পড়ুন
ManabZamin
