প্রবাসীদের সঙ্গে প্রতারণা, হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা 

বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাঙালিদের থাই লটারী পাইয়ে দেওয়ার নাম করে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি প্রতারক চক্র।

কাতারে বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরির খবর দেখতে এখানে ক্লিক করুন

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের সক্রিয় প্রতারক চক্রের সদস্যরা অন্যের এনআইডি কার্ড ব্যবহার করে ভুয়া ফেসবুক আইডি, ভুয়া ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ, বিকাশ, রকেট, উপায় ও ভুয়া নগদ নম্বর ব্যবহার করে হুন্ডির মাধ্যমে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
 
এতে করে প্রতারণার ফাঁদে পড়ে একদিকে যেমন নিঃস্ব হচ্ছে প্রবাসীরা অপরদিকে হুন্ডির মাধ্যমে টাকার লেনদেন হওয়ার কারণে সরকার মোটা অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

উপজেলা আইন-শৃঙ্খলার মিটিংয়ে বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা থাই গেমের নামে প্রতারণার মাধ্যমে প্রবাসীদের অর্থ আত্মসাৎকারীদের ধরে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে আসলেও প্রশাসন কোনো ব্যাবস্থা না নেওয়ার কারণে প্রতারক চক্রের সদস্যরা আরও বেশি সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, থাই জুয়া চক্রের সদস্যরা প্রথমে একটি স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে ভুয়া ফেসবুক আইডি ও ইমো আইডি খোলে। পরবর্তীতে ফেসবুক আইডিতে বুস্ট মেরে (ডলার রিচার্জ করে ইন্টারনেট কানেকসন নিয়ে থাকেন।

কাতারে বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরির খবর দেখতে এখানে ক্লিক করুন

পরবর্তীতে ওই প্রতারক চক্রটি ফেসবুকে থাইল্যান্ডের লটারির বিভিন্ন চমকপ্রদ বিজ্ঞাপণ দিয়ে একটি পোস্ট দেয়। ওই পোস্টে বলা হয় প্রবাসী বাঙালি ভাইয়েরা আপনারা খুব কম সময়ের মধ্যে থাই লটারি পেয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হতে পারবেন। এমন চমকপ্রদ বিজ্ঞাপণের মাধ্যমে প্রতারক চক্রের সদস্যরা ইমো নম্বর দিয়ে প্রবাসীদের ওই নম্বরের সঙ্গে সংযুক্ত হতে বলেন। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে থাই প্রতারক চক্রের এক সদস্য বলেন, আমরা যে ইমো নম্বর দিয়ে থাকি প্রবাসী বাঙালিরা কোনোভাবেই বুঝতে পারবে না এটি বাংলাদেশের নম্বর। তারা জানবে ওই ইমো নম্বরটি থাইল্যান্ডের। প্রতারক চক্রের সদস্যরা নিজেকে থাইল্যান্ডের লটারি অফিসের সদস্য পরিচয় দিয়ে প্রথমে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি করে ওই প্রবাসীকে থাই লটারির টিকেট কাটতে বলে। এবং আগেই টিকিটের নম্বর দেওয়ার নাম করে প্রবাসীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা দাবি করে। 

ওই সদস্য আরও বলেন, অনেক সদস্য প্রবাসীদের ভুয়া চেক তৈরি করে দিয়ে বলে ভাই আপনি এক কোটি রিয়াল পুরস্কার পেয়েছেন। চেক পাস করাতে ২০ হাজার কিংবা ৫০ হাজার রিয়াল দিবে হবে। পরবর্তীতে ওই প্রবাসী বিকাশ, নগদ ও রকেটের মাধ্যমে ওই টাকা দিয়ে থাকেন। এভাবে প্রতারণা করে প্রতারক চক্রের সদস্যরা কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

কাতারে বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরির খবর দেখতে এখানে ক্লিক করুন

সরেজমিনে উপজেলার নিতাই ইউনিয়নের ডাংগাপাড়া, নিতাই হাটখোলা, কাচারীপাড়া, বাহাগিলি ইউনিয়নের নয়ানখাল, উত্তর দুরাকুটি পশ্চিমপাড়াসহ ৯টি ইউনিয়নের উঠতি বয়সের হাজার হাজার নারী ও পুরুষ ওই প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য বনে গেছেন। তারা দিন রাত গোপন স্থানে মোবাইলের ইমো ও হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে প্রতিদিন প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রবাসীদের নিঃস্ব করে দিচ্ছেন।

বাহাগিলি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুজাউদ্দোলা লিপটন বলেন, কিশোরগঞ্জ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের প্রতারক চক্রের হাজার হাজার সদস্যরা দিনরাত প্রবাসী বাঙালিদের নিঃস্ব করে দিচ্ছে। আমরা বিষয়টি বার বার উপজেলা আইন-শৃঙ্খলার মাসিক মিটিংয়ে অবগত করলেও কোনো কাজ হচ্ছে না।


 
পুটিমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু সায়েম লিটন বলেন, থাই জুয়ারী ও প্রতারক চক্রের সদস্যেরা প্রবাসী বাঙালিদের কাছ থেকে প্রতারণা করে তাদের কষ্টের ইনকাম করা টাকা হাতিয়ে নিয়ে নতুন নতুন বাইক কিনছে। নতুন ছাদঢালাই বাড়ি করছে। তাদের দাপটে আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছি। অন্যদিকে প্রবাসী বাঙালিরা সহায় সম্বল হারিয়ে প্রবাসে হাহাকার করে বেড়াচ্ছে। অপরদিকে সরকার হারাচ্ছে মোটা অংকের রাজস্ব।

কিশোরগঞ্জ থানার ওসি তদন্ত শরীফ আহম্মেদ বলেন, সুনিদিষ্টি অভিযোগ পেলে অব্যশই ওই প্রতারকদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
 
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুর-ই আলম সিদ্দিকী বলেন, যারা যারা প্রতারণার মাধ্যমে প্রবাসী বাঙালিদের সঙ্গে প্রতারণা করে তাদের সর্বশান্ত করছে তাদের তালিকা করে দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

কাতারের সব খবর সরাসরি হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে ক্লিক করুন

আরও পড়ুন:

Loading...
,