প্রবাসীদের স্বপ্ন আর বাস্তবতা

প্রবাস মানে দেশ ছেড়ে অন্য দেশে বসবাস। প্রবাস মানে মা-বাবা ভাইবোন আত্মীয়স্বজন পাড়া-প্রতিবেশী ছেড়ে নিঃসঙ্গ একাকী জীবনযাপন। প্রবাস মানে এক বুক দীর্ঘশ্বাস। প্রবাসে এসে কেউ চাকরি করে কেউবা করে ব্যবসা। দেশের অর্থনীতির সিংহভাগ চালিকাশক্তি প্রবাসীদের পাঠানো টাকা।

কাতারে বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরির খবর দেখতে এখানে ক্লিক করুন

একজন প্রবাসীর স্বপ্ন ভালো আয়-রোজগার করে পরিবারকে সচ্ছল করে স্বাবলম্বী হওয়া; সে স্বপ্ন নিয়েই দূর প্রবাসে আসা। প্রবাসে বেশির ভাগ মানুষ শ্রমিক অর্থাত্ শতকরা ৯৫ ভাগ শ্রমজীবী, বাকি ৫ ভাগ ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার ও ব্যবসায়ী। আমি ৯৫ ভাগ প্রবাসীর কথা বলছি। মরুভূমির দেশ মধ্যপ্রাচ্যের কথা বলছি।

পৃথিবীর সবচেয়ে গরম তাপমাত্রার দেশগুলো—সৌদি আরব সংযুক্ত আরব আমিরাত ওমান কুয়েত কাতার ও বাহরাইনের কথা বলছি। দেশ থেকে প্রবাসে যারা কাজ করতে আসে তাদেরকে দেশের ভাষায় বিদেশি কিংবা বহুল প্রচলিত ‘দুবাইওয়ালা’ বলা হয়।

কাতারে চাকরি খুঁজছেন? এখানে ক্লিক করুন

একজন প্রবাসীর কাছে পরিবারের সকল সদস্যের চাওয়া-পাওয়া আছে। প্রত্যাশা থাকবে এটা স্বাভাবিক। সিংহভাগ প্রবাসী ভালো অবস্থানে নাই। অনেকে অনেক অজানা খবর জানে না। একজন প্রবাসী যতই খারাপ অবস্থায় থাকুক না কেন ফোন করলে সে সবসময় বলে মাগো আমি ভালো আছি, বাবা আমি ভালো আছি। যে ছেলে কোনোদিন সকাল ৮টার আগে ঘুম থেকে ওঠেনি, ভাত থালায় নিয়ে খায়নি, তাকে প্রতিদিন সকাল ৫টায় ঘুম থেকে উঠে ভাত-তরকারি রান্না করে টিফিন বক্সে ভরে দুপুরের খাবারের জন্য কর্মস্থলে নিয়ে যেতে হয়।

কাতারে চাকরি খুঁজছেন? এখানে ক্লিক করুন

দেশে যেখানে ৩৫-৩৮ ডিগ্রি তাপমাত্রায় মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে যায়, সেখানে মরুর দেশে ৪৫-৫০ ডিগ্রি তাপমাত্রা সহ্য করে কাজ করতে হয়। তার পরও অনেকে যথাসময়ে বেতন পায় না; বেতন আটকে থাকে কারো তিন মাস কারো চার মাস। মালিকের কথার সঙ্গে কাজের মিল না থাকলে অনেকে অন্যত্র চলে যায়। তাদের ভিসা আইডি (বাতাকা/পতাকা) থাকে না, পুলিশের সঙ্গে লুকোচুরি খেলা খেলে কাজ করতে হয়। সরকার যদি আউট পাস না দেয় তাহলে বাড়িতেও যেতে পারে না। অনেকে আবার বেতন পায় না, শুধু খাবার খরচের টাকাটুকু পায়।

কাতারে চাকরি খুঁজছেন? এখানে ক্লিক করুন

প্রবাস জীবন যারা কাটিয়েছেন একমাত্র তারাই জানেন প্রবাসীদের দুরবস্থার কথা। প্রবাসীদের স্বপ্ন স্বপ্নই, বাস্তবতা কিন্তু অন্য রূপ। বাংলাদেশের মতো প্রবাসে ছুটি নেই বললেই চলে। বছরে শুধু ঈদ ও কোরবানিতে দুই থেকে তিন দিন ছুটি। ছুটিতে যেদিন দেশে ফিরবে সেদিনই প্রবাসীদের সবচেয়ে খুশির দিন। ছুটিতে দেশে এলে পরিবারের সদস্য-আত্মীয়স্বজন-প্রতিবেশীরা মনে করে অনেক টাকা ব্যাংকে জমা আছে, কিন্তু খরচ করছে না।

একজন প্রবাসী তার সাধ-আহ্লাদ জীবন-যৌবন মা-বাবার স্নেহ-আদর বাচ্চাদের ভালোবাসা সবকিছু ত্যাগ করে শুধু পরিবারের জন্য, দেশের জন্য। দেশের কাছে প্রবাসীরা রেমিডিয়ান্স যোদ্ধা, অর্থনীতির চালিকাশক্তি। কিন্তু দেশ সেই প্রবাসীদের কী সুবিধা দিয়েছে? জন্ম নিবন্ধন, ভোটার আইডি কার্ড, জমি বেচাকেনা, স্কুল-কলেজে বাচ্চাদের ভর্তির ব্যাপার বলুন কোনো জায়গায় প্রবাসীদের অগ্রাধিকার নেই। একজন প্রবাসী কলুর বলদের মতো খাটে। সে যদি চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরে আসে তার খবর কেউ রাখে না। শুধু তাই নয়, পরিবারের সদস্যদের কাছেও নিগৃহীত হয়।

কাতারে চাকরি খুঁজছেন? এখানে ক্লিক করুন

সব প্রবাসীর আয়-রোজগার এক নয়; তবে বেশির ভাগ প্রবাসীর জীবন এইরকম। সমাজের এদিক ওদিক তাকালে দেখতে পাবেন সামাজিক প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আর্থিক অনুদান প্রবাসীদের রয়েছে অনেক অবদান। তাই প্রবাসীদের প্রতি পরিবারের ও সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে।

প্রবাসীরা কি শুধু আজীবন দিয়েই যাবে? প্রবাসীদের পরিবারগুলো স্কুল-কলেজ, সরকারি-বেসরকারি কাজে, সামাজিক কাজে কি কোনো সুযোগ-সুবিধা পাবে না? প্রবাসীদের অনেক কথা অনেক ব্যথা গোপন থাকে—কেউ তা জানে না। নির্দ্বিধায় বলতে পারি—দেশের জন্য দশের জন্য পরিবারের জন্য একজন প্রবাসী একজন সৈনিকের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।

কাতারের সব খবর সরাসরি হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে ক্লিক করুন

আরও পড়ুন:

Loading...
,