প্রবাসী আয়ের জাদু শেষ হতে চলেছে

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘দেশে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে।

গত অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে মাত্র ২১ দশমিক ২৫ শতাংশ বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ হয়েছে, যা গত পাঁচ বছরে সবচেয়ে কম।

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, রেমিট্যান্সের (প্রবাসী আয়) জাদু শেষ হতে চলেছে। বিদেশে মানুষ যাওয়া ও প্রবাসী আয়ের প্রবাহ কমেছে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় গত জুলাইয়ে প্রবাসী আয় ২৮ শতাংশ কমেছে। এটা কি একটি পূর্বাভাস?

গতকাল রোববার এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ আয়োজিত ‘জাতীয় বাজেট ২০২১-২২ বাস্তবায়ন: পিছিয়ে পড়া মানুষেরা কীভাবে সুফল পাবে’ শীর্ষক সাংবাদিকদের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল মতবিনিময় সভায় ড. দেবপ্রিয় এসব কথা বলেন।

নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় বলেন, ভালো নেই ছোট ও মাঝারি শিল্প খাত। একদিকে ভোগব্যয় বেড়েছে, অন্যদিকে উপার্জন কমেছে। ফলে পিছিয়ে পড়া মানুষের সঙ্গে নতুন করে আরও মানুষ যুক্ত হচ্ছে, যা অর্থনীতি ও সমাজে চাপ তৈরি করছে।

ড. দেবপ্রিয় বিদায়ী অর্থবছরের তথ্য-উপাত্ত ও বর্তমান কোভিড পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বলেন, গণটিকা কর্মসূচি, প্রণোদনার ঋণ বিতরণ বাস্তবায়ন ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ–এই মুহূর্তে অর্থনীতির তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

অনুষ্ঠানে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেন, ‘যাঁরা আজ দেশ পরিচালনা করছেন, তাঁরা কতখানি আমাদের তাঁদের মানুষ মনে করেন, কিংবা আমরা কতখানি তাঁদের আমাদের মানুষ মনে করি–সেটা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়। সাধারণ মানুষের সঙ্গে সরকারের যেন একটা বিচ্ছিন্নতা ঘটে গেছে। আমরা কোভিড পরিস্থিতিতে সেটি আরও প্রকটভাবে দেখেছি।’

সুলতানা কামাল বলেন, দেশ পরিচালনার সঙ্গে জড়িতরা কিছু মানুষের স্বার্থরক্ষা করতে পারলে আত্মতুষ্টিতে ভোগেন। কিন্তু করোনায় তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। তাঁদের প্রতি নজর দেওয়ার কোনো সুস্পষ্ট পরিকল্পনা আমরা ২০২১-২২ বাজেটে দেখতে পাইনি।’

বাজেটে পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য আর্থিক ও খাদ্যসহায়তায় বরাদ্দ কম রাখা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান। এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।

পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে গণটিকা কর্মসূচির আওতায় আনতে বেসরকারি সংস্থাকে সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দেন স্বাস্থ্য খাতের বিশেষজ্ঞ মুশতাক রাজা চৌধুরী।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাজেটের অর্ধেক বরাদ্দ সরকারি কেনাকাটায়। অথচ এসব কেনাকাটা রাজনীতিবিদ, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদারদের কাছে জিম্মি।

শিক্ষকদের টিকার আওতায় আনা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতের কোনো রূপরেখা এবারের বাজেটে নেই বলে মন্তব্য করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী।

ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম বলেন, করোনার কারণে দেশের ছোট ও মাঝারি খাতের ৮০ লাখ উদ্যোক্তা কষ্টে আছেন। ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হুমকির মুখে।

Loading...
,