প্রবাসী কর্মীদের জন্য এক ডোজের টিকা নির্ধারণের সুপারিশ

প্রবাসী কর্মীদের জন্য গন্তব্য দেশের অনুমোদন সাপেক্ষে এক ডোজের টিকা ক্রয় করার সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি ফর মাইগ্রেন্টস (বিসিএসএম)।

মঙ্গলবার  (১৩ জুলাই) বিকালে অনলাইনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে টিকার প্রক্রিয়া সহজিকরণের জন্য ১৩টি সুপারিশ করে এই জোট।

সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য ও উদ্দেশ্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি ফর মাইগ্রেন্টস-বিসিএসএম’র কো-চেয়ার এবং ওয়ারবে ডেভেলপমেন্ট   ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুল হক। মডারেটর হিসেবে সংবাদ সম্মেলনের বিষয়বস্তু উপস্থাপন করেন রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি রিসার্চ মুভমেন্টের (রামরু)  প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার ড. তাসনিম সিদ্দিকী।

সংবাদ সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের অভিবাসী কর্মীদের পাঠানো অডিও ও ভিডিও বার্তা প্রচার করা হয়।  এতে তারা টিকাগ্রহণের নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় যেসব প্রতিকূলতার সম্মুখিন হচ্ছেন, তা তুলে ধরেন।

সৌদি আরবে  অভিবাসী কর্মীদের কোয়ারেন্টিনের হোটেল খরচ বাবদ সরকার যে ২৫ হাজার টাকা করে ভর্তুকি  দিচ্ছে, তা অন্যান্য গন্তব্য দেশের ক্ষেত্রেও কার্যকরের দাবি ওঠে সংবাদ সম্মেলনে।

অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্লামেন্টারিয়ানস ককাস ফর মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের সদস্য আহসান আদেলুর রহমান এমপি।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়,  টিকাদান কর্মসূচিতে টিকা গ্রহীতার অগ্রাধিকার তালিকায় অভিবাসী কর্মীদেরকে ৩ নম্বরে সংযুক্ত করার যে পদক্ষেপ সরকার নিয়েছে তা প্রশংসনীয়।

জাতীয় সংসদের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যেও অভিবাসী কর্মীদের ২ ডোজ টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার বিষয়টি উঠে এসেছে। অভিবাসীর প্রয়োজন বিবেচনায় রেখে ফাইজার এবং মডার্নার কোভিড-১৯ টিকা আমদানির  ক্ষেত্রেও সরকার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

এছাড়াও কোয়ারেন্টিনে হোটেল খরচ বাবদ  ২৫ হাজার টাকা করে অর্থ ভর্তুকি দিচ্ছে। প্রবাসী অ্যাপ চালু করার কারণে অভিবাসীরা বিএমইটি বা  ডিইএমও অফিসে না এসেও নিবন্ধিত হতে পারছেন।

সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক  কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের  মন্ত্রী ইমরান আহমেদ সারাদেশে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও  প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) আওতাধীন ৬৪টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) ও ৬টি  ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি (আইএমটি)-তে অভিবাসী কর্মীদের জন্য হেল্প ডেস্ক স্থাপনের  উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এ সবই সরকারের স্বদিচ্ছা প্রকাশ করে।

তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, ‘মাঠপর্যায়ে বিসিএসএম-এর বিভিন্ন সদস্য সংস্থা তাদের কর্ম এলাকায় সরকারের সঙ্গে মিলিত হয়ে টিকার নিবন্ধন  প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করছে। এসব সংগঠন তাদের এলাকার অভিবাসীদের জেলা কর্মসংস্থান ও  জনশক্তি অফিসের (ডিইএমও) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসে নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় শ্রম দিচ্ছেন।

যে কোনও  অনলাইন কার্যক্রম শুরু করতে গিয়ে প্রাথমিকভাবে কিছুটা বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়, যা ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যায়। টিকার ক্ষেত্রেও আমরা লক্ষ্য করছি যে, কিছু কিছু বিষয়ে অভিবাসীরা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন।’

টিকার জন্য নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় যে প্রায়োগিক জটিলতা দেখা যাচ্ছে, সেগুলোর সমাধান সহজেই  সম্ভব উল্লেখ করে ১১টি সুপারিশ জানিয়েছে বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি ফর মাইগ্রেন্টস (বিসিএসএম)।

এর মধ্যে আছে বিদেশগামী সকল অভিবাসীর টিকাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে সরকার যেসব  পদক্ষেপ নিয়েছে, সেগুলো গুরুত্বপূর্ণ। তবে এসব পদক্ষেপের পাশাপাশি একটি ডোজে দেওয়া  সম্ভব এমন টিকা অভিবাসীদের জন্য কেনা করা যেতে পারে। তবে সেই টিকাটি অবশ্যই দেশে  অনুমোদিত হতে হবে।

যেহেতু ‘আমি প্রবাসী’ এবং ‘সুরক্ষা’ অ্যাপ পরিচালনায় সরকারের বাইরেরও বিভিন্ন সংগঠন যুক্ত আছে, সেক্ষেত্রে ফরমের অবশ্যই ডিসক্লেইমার যুক্ত করতে হবে এই বলে যে, সরকার  ব্যতিরেকে এই ডাটা অন্য কোনও সংস্থার কাজে ব্যবহৃত হবে না।  ফরম সাবমিট করার ৭২ ঘণ্টার ভেতরে টিকা প্রক্রিয়া সম্পর্কে অভিবাসীকে অবহিত করার যে  কথা বলা হয়েছে, তা পূরণের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে। নিরাপত্তাজনিত ক্লিয়ারেন্স প্রক্রিয়া বিলম্বিত করলে সে বিষয়ে এসএমএস পাঠাতে হবে।

‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপে যেহেতু বিদেশ গমনেচ্ছুদের যে কেউ ফরম পূরণ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে  ভিসা হয়ে যাওয়া বা অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা পূরণ করা অভিবাসীদের টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন  একই অ্যাপে পরিচালনা না করে, খুব ছোট কোনও ফরমে তাদের ডেটা সংগ্রহ করলে টিকা নেওয়া দরকার— এমন অভিবাসীদের কম ঝক্কি পোহাতে হবে। নিবন্ধন সাবমিট করার পর সংশোধনের উপায় নেই। সেক্ষেত্রে প্রতিটি বিষয় বারবার সতর্কতার  সঙ্গে যাচাই করার জন্য প্রিভিউ অপশন যোগ করতে হবে। গন্তব্য দেশভেদে অনুমোদিত ভ্যাকসিনের নাম গণমাধ্যমে বিশেষভাবে প্রচার করা প্রয়োজন, যাতে করে অভিবাসীরা সঠিক টিকাটি পাচ্ছেন কিনা, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেন। সনদ  প্রদানের সময় বিষয়টি অভিবাসীকে অবহিত করা। অভিবাসীদের সঙ্গে একমত হয়ে বিসিএসএম প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের  মন্ত্রীর কাছে যারা একই দেশে পুনরায় অভিবাসীত হচ্ছেন এবং যাদের স্মার্ট কার্ড কার্যকর, তাদের এই নিবন্ধন ফি’র আওতামুক্ত করতে অনুরোধ করছি।

ভুলভাবে টাকা চলে গেলে তা ফেরত পাবার নিয়মাবলী প্রতিষ্ঠিত করে স্পষ্টভাবে অভিবাসীদের  জানিয়ে দেওয়ার জন্য দাবি করছি। যেহেতু অনেক অভিবাসীই নিবন্ধিত হবেন, সে ক্ষেত্রে বেশি ব্যান্ডউইথ এর সার্ভার নিশ্চিত করার  প্রয়োজন।  দুটি নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পর্কে অভিবাসীদের স্পষ্ট ধারণা দিতে হবে। অধিকাংশ অভিবাসী বা  তার পরিবারের সদস্য অনলাইন নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় অভ্যস্ত নয়, সেক্ষেত্রে দুটো নিবন্ধনের প্রতিটি  ধাপ ভিডিও টিউটোরিয়ালে হাতে-কলমে শেখাতে হবে এবং তা রেডিও, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন  প্রচার মাধ্যমে অভিবাসীদের দেখাতে হবে এবং  একইসঙ্গে অভিবাসীদের নিয়ে কর্মরত সংস্থাগুলো টিকা প্রদানের জন্য দুটি অনলাইন  রেজিস্ট্রেশনের ধাপগুলো সম্পর্কে ভিডিও টিউটোরিয়াল তৈরি করে তা স্থানীয় ডিশ-চ্যানেলের  মাধ্যমে প্রচার করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে বিসিএসএম’র চেয়ার ড. সি আর আবরারসহ রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (রামরু), ওয়ারবি ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, বধাক, বাংলাদেশি অভিবাসী মহিলা শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশন (বমসা), মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ),আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), বাসুগ, অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম (ওকাপ), হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস), ইমা রিসার্চ ফাউন্ডেশন, ইন্টারন্যশনাল নেটওয়ার্ক অব অল্টারনেটিভ ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন (ইনাফি) বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কন্সট্রাকশন অ্যান্ড উড ওয়ার্কার্স ফেডারেশন (বিসিডব্লিউডব্লিউএফ),ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল অ্যাকশন (ইপসা),বাংলাদেশ অভিবাসী অধিকার ফোরাম (বোয়াফ), বাস্তব,রাইটস যশোর,সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট কমিউনিকেশন্স (ডেভকম) লি., চেঞ্জ মেকার্স এবং ফিল্মস ফর পিস ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

Loading...
,