বাংলাদেশে চালু হচ্ছে সর্বজনীন পেনশন

আইন পাস হওয়ার প্রায় সাত মাস পর চালু হতে যাচ্ছে সর্বজনীন পেনশনের পাইলট কর্মসূচি।

আগামী ১৭ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়াল মাধ্যমে বহুল প্রতীক্ষিত এই পেনশন কর্মসূচির উদ্বোধন করতে পারেন বলে জানা গেছে।

উদ্বোধনের দিন থেকেই স্বল্প পরিসরে পরীক্ষামূলকভাবে সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা চালু হবে।

কাতারের সব খবর হোয়াটসঅ্যাপে পেতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ। এখন শুধু উদ্বোধনের জন্য অপেক্ষা।

পেনশন কর্মসূচি বাস্তবায়িত হবে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ।

কিন্তু নিয়োগবিধি ও জনবল কাঠামো চূড়ান্ত না হওয়ায় কর্তৃপক্ষ গঠনের পর ছয় মাসেও কর্তৃপক্ষের জন্য জনবল নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি।

এ কারণে এতদিন থমকে ছিল সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা চালুর কার্যক্রম। তবে অর্থ বিভাগ জানিয়েছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা, পেনশন কর্মসূচিতে যোগদানের যোগ্যতা ও নিবন্ধনপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করার বিধিমালা এবং জাতীয় পেনশন কর্মসূচি (স্কিম) বিধিমালা নামের তিনটি বিধিমালা ইতিমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে।

পেনশন কর্মসূচি উদ্বোধনের আগেই এগুলোর প্রজ্ঞাপন জারি হবে। আইন অনুযায়ী জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের একজন নির্বাহী চেয়ারম্যান ও চারজন সদস্য থাকবেন। এদের নিয়োগ করবে সরকার।

কাতারে চাকরি খুঁজছেন? এখানে ক্লিক করুন

সরকারের অনুমোদন নিয়ে এই কর্তৃপক্ষ নিজ নামে ঋণ নিতে পারবে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের এখনও কোনো কার্যালয় না থাকলেও সম্প্রতি অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কবিরুল ইজদানী খানকে নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়েছে অর্থ বিভাগ।

পেনশন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে গত বুধবার সচিবালয়ে পাঁচটি সংস্থার সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ।

কাতারের সব খবর হোয়াটসঅ্যাপে পেতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন

 সংস্থাগুলো হচ্ছে নির্বাচন কমিশন, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়, সোনালী ব্যাংক এবং বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেড।

অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, আপাতত চার শ্রেণির জনগোষ্ঠীর জন্য চার ধরনের পেনশন কর্মসূচি চালু করা হচ্ছে।

এর মধ্যে বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীদের জন্য ‘প্রগতি’, স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য ‘সুরক্ষা’, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ‘প্রবাসী’ এবং দেশের নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য ‘সমতা’ শীর্ষক কর্মসূচি চালু করা হচ্ছে।

উদ্বোধনের দিন কিছু গ্রাহক যাতে অনলাইনে পেনশন কর্মসূচিতে চাঁদা দিয়ে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন, সে জন্য দেশের আটটি জেলার জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়ে তাদের মডেল পেনশনার প্রস্তুত রাখতে বলেছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ।

জেলাগুলো হচ্ছে-গোপালগঞ্জ, সিলেট, রংপুর, পাবনা, বাগেরহাট, ময়মনসিংহ, রাঙামাটি এবং বরগুনা। একই ধরনের চিঠি দেওয়া হয়েছে কুয়ালালামপুর ও জেদ্দায় থাকা বাংলাদেশ মিশনেও।

কাতারে চাকরি খুঁজছেন? এখানে ক্লিক করুন

চিঠিতে ১২ আগস্টের মধ্যে পেনশন স্কিমসমূহে আগ্রহী সম্ভাব্য প্রার্থী ও তাদের নমিনির তালিকা জমা দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।

তালিকায় প্রার্থী ও নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি এবং নিবন্ধিত মোবাইল নম্বর চাওয়া হয়েছে।

‘প্রগতি’ ও ‘সুরক্ষা’ কর্মসূচির আওতায় মাসিক চাঁদার হার নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

কাতারের সব খবর হোয়াটসঅ্যাপে পেতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন

‘সমতা’ কর্মসূচিতে মাসিক চাঁদা ৫০০ টাকা। এ কর্মসূচিতে সমপরিমাণ অর্থাৎ ৫০০ টাকা করে চাঁদা দেবে সরকার। ‘প্রবাসী’ কর্মসূচিতে মাসিক চাঁদার হার ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা।

এই কর্মসূচিতে মার্কিন ডলার, ইউরো, কুয়েতি দিনার, সৌদি রিয়াল ইত্যাদি মুদ্রায় চাঁদা দিতে হবে। অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পেনশন কর্মসূচির আওতায় ঘরে বসেই চাঁদা দেওয়া যাবে।

এ জন্য একটি অ্যাপস তৈরি করা হয়েছে। যারা সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আসতে চান, তাদের আগে নিবন্ধন করতে হবে।

ব্যাংকের পাশাপাশি নগদ, বিকাশসহ যেকোনো মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও চাঁদা পরিশোধের সুযোগ রাখা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৮ বছর বয়সে এ স্কিমে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে বেসরকারি খাতের কর্মচারী বা প্রবাসীরা তাদের ৪২ বছরের চাঁদার তুলনায় ১২ গুণ বেশি লাভবান হতে পারবেন।

এ ছাড়া প্রগতি স্কিমের আওতায় বেসরকারি খাতের একজন কর্মচারী প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা চাঁদা দিলে মোট ২৫ লাখ ২০ হাজার টাকা চাঁদা দেবেন।

কাতারে চাকরি খুঁজছেন? এখানে ক্লিক করুন

৭৫ বছর বয়সে এসে তার মোট সরকারি পেনশনের পরিমাণ হবে মোট দেওয়া চাঁদার ১২.৩১ গুণ তথা ৩ কোটি ১০ লাখ ১৮ হাজার ৮৬০ টাকা।

যদি পেনশনভোগী ৭৫ বছরের আগে মারা যান, তা হলে তার নমিনি সেই বয়স (৭৫) পর্যন্ত একই হারে পেনশন পাবেন।

গত ২৪ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন পাস হয়। আইন অনুযায়ী ১৬ সদস্যের একটি পেনশন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হবে।

কাতারের সব খবর হোয়াটসঅ্যাপে পেতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন

পর্ষদের চেয়ারম্যান হবেন অর্থমন্ত্রী। সদস্য থাকবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, অর্থ বিভাগের সচিব, এনবিআর চেয়ারম্যান, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি, এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি এবং উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি।

পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সচিব হবেন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা দেশে এই প্রথম বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে।

বিষয়টি সম্পর্কে কারোরই বাস্তব কোনো অভিজ্ঞতা নেই। এ কারণে নির্বাহী চেয়ারম্যান ও সদস্য পদে নিয়োগের জন্য যোগ্য লোক পেতে কষ্ট হচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের প্রবিধি অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব মনির হোসেন চৌধুরী সময়ের আলোকে জানান, সবার জন্য পেনশন চালু করার বিষয়টি সরকারি দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি।

কাতারে চাকরি খুঁজছেন? এখানে ক্লিক করুন

তাই এটা দ্রুত বাস্তবায়নে সরকার আন্তরিক। তিনি জানান, উদ্বোধনের পর স্বল্প পরিসরে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করা হবে। কাজ চালাতে যে জনবল দরকার তা আপাতত নিয়োগ দেওয়া হবে।

সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে গেজেটে বলা হয়েছে, দেশের সর্বস্তরের জনগণের বিশেষত গড় আয়ু বাড়ার কারণে ক্রমবর্ধমান বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতাভুক্ত করা প্রয়োজন এবং ভবিষ্যতে কর্মক্ষম জনসংখ্যা হ্রাসের কারণে নির্ভরশীলতার হার বাড়বে-এ কারণে সর্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত আনুষঙ্গিক বিষয়ে বিধান করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়।

আইন অনুযায়ী সরকার যতক্ষণ এটিকে সব নাগরিকের জন্য বাধ্যতামূলক না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সর্বজনীন পেনশন ঐচ্ছিক থাকবে।

কাতারের সব খবর হোয়াটসঅ্যাপে পেতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন

জাতীয় পরিচয়পত্রের ভিত্তিতে ১৮ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়স থেকে ৫০ বছর বয়সি সব বাংলাদেশি নাগরিক পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।

যিনি ধারাবাহিকভাবে ১০ বছর চাঁদা প্রদান করবেন তিনি পেনশন পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন এবং চাঁদাদাতার বয়স ৬০ বছর পূর্তিতে পেনশন তহবিলে পুঞ্জীভূত মুনাফাসহ জমার বিপরীতে আজীবন পেনশন প্রদান করা হবে; পঞ্চাশোর্ধ্বরা ১০ বছর চাঁদা প্রদান শেষে যে বয়সে উপনীত হবেন সেই বয়স থেকে আজীবন পেনশন পাবেন; প্রত্যেক চাঁদাদাতার জন্য একটি পৃথক ও স্বতন্ত্র পেনশন হিসাব থাকবে এবং কর্মস্থল পরিবর্তন হলেও নতুন হিসাব খোলার প্রয়োজন হবে না।

কর্তৃপক্ষ থেকে সর্বনিম্ন চাঁদার হার নির্ধারণ করা হবে; মাসিক চাঁদা প্রদানে দেরি হলেও বিলম্ব ফিসহ পেনশন হিসাব চালু রাখা যাবে।

তবে আপাতত সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মচারীরা সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থার আওতাবহির্ভূত থাকবেন।

বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীরা এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারবে। একজন পেনশনার আজীবন পেনশন সুবিধা পাবেন বলে আইনে উল্লেখ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

গালফ বাংলা

Loading...
,