বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে

উড়ন্ত বিমানে বার্ডহিট রোধে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বসানো হয়েছে ৫টি গ্যাস ক্যানন মেশিন। এসব মেশিন উচ্চশব্দের মাধ্যমে বন্যপ্রাণী ও পাখি তাড়াতে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু মেশিনগুলো অচল হয়ে পড়ায় পাখি তাড়ানোর কাজে আসছে না। ফলে বিমানের উড্ডয়ন ও অবতরণ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

বার্ডহিটে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে সিভিল অ্যাভিয়েশনের (সিএবি) ফ্লাইট সেফটি কর্তৃপক্ষের এক পরিদর্শন প্রতিবেদনে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

কাতারে বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরির খবর দেখতে এখানে ক্লিক করুন

দ্রুত এসব বিষয়ের সমাধান করার তাগিদ দিয়ে শাহজালাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে সিএবির ফ্লাইট সেফটি পরিদর্শন বিভাগ। প্রসঙ্গত শীত প্রায় আসন্ন। এ সময়ে দেশে পাখির আনাগোনা অনেক বেড়ে যায়। তাই এ সময় বার্ডহিট দুর্ঘটনার ঝুঁকিও অনেক বেড়ে যাবে।

দেশি-বিদেশি এয়ারলাইন্স কোম্পানিগুলো বলছে বিশ্বের সব বিমানবন্দরে বার্ডহিট রোধে অত্যাধুনিক ক্যানন মেশিন বসানো থাকে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, শাহজালালে বসানো মেশিনগুলো নিম্নমানের, সস্তা ও অনুন্নত দেশ থেকে আমদানিকৃত। তাই এগুলো শুরু থেকেই পাখি তাড়াতে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। এর আগে একইভাবে রেডিয়েশন যন্ত্র (লেজার লাইট) বসিয়েও কোনো ফল আসেনি।

কাতারে চাকরি খুঁজছেন? এখানে ক্লিক করুন

এক-একটি উড়োজাহাজের মূল্য ১২শ থেকে ১৫শ কোটি টাকা। কয়েক কোটি টাকা ব্যয় করে ইউরোপের উন্নতমানের গ্যাস ক্যানন মেশিন স্থাপন করা হলে পাখির উপদ্রব থেকে তথা দুর্ঘটনা থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এটি আমলে নিচ্ছে না।

জানা গেছে, প্রতিবছর শীতের মৌসুমে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শিয়াল ও পাখির উপদ্রব বেড়ে যায়। বিদেশ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে মৌসুমি পাখি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং এর আশপাশের এলাকায় আশ্রয় নেয়। তখন বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ অনেক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। গত জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত এমন ২৬টি বার্ডহিটের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনা বেড়েই চলেছে।

কাতারে চাকরি খুঁজছেন? এখানে ক্লিক করুন

ফ্লাইট সেফটি পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে-১৪বি-তে বেশ কিছু লাইট ও সাপ্লিমেন্টারি লাইট নষ্ট হয়ে পড়েছে। কিছু ফ্লাশ লাইট জ্বলে না।

ট্যাক্সি ওয়ে ‘এন’-এর ‘ভিওআর’ চেক সিগন্যাল লাইট নতুন করে লাগানো দরকার। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা প্রয়োজন। বিমানবন্দরে কর্মরতদের ট্রেনিং রেকর্ডও সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা উচিত।

কাতারে চাকরি খুঁজছেন? এখানে ক্লিক করুন

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছেÑ বিমানবন্দর রানওয়েতে যানবাহন চলাচলের জন্য অ্যারোড্রাম ম্যানুয়াল অনুযায়ী, ১৫ কিলোমিটারের বেশি বেগে যানবাহন না চালানোর নির্দেশনা থাকলেও তার যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে না। বিমানবন্দরে কোনো স্পিড লিমিট সিগন্যাল নেই। কন্ট্রোল টাওয়ার এবং ফায়ার স্টেশনের মাঝে কোনো ক্রাশ বেল পরিলক্ষিত হয়নি। এ ছাড়া গ্যাস ক্যানন চালানোর জন্য কন্ট্রোল টাওয়ারে কোনো রিমোট কন্ট্রোল সিস্টেমও নেই। রিপোর্টে ফ্লাইট নিরাপত্তা বাড়ানো এবং উড়োজাহাজের মসৃণ ও নিরাপদ অপারেশনের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

বিমানবন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অ্যাভিয়েশন খাতের বড় আতঙ্ক হচ্ছে পাখির আঘাত বা বার্ডহিট। উড়োজাহাজ যখন আকাশে ওড়ে, তখন বিপরীত দিক থেকে পাখি আঘাত করে।

এমনকি পাখি এয়ারক্রাফটের ডানায় থাকা ইঞ্জিনের ভেতরেও কখনো কখনো ঢুকে পড়ে। এতে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে, এমনকি ইঞ্জিনে আগুনও

ধরে যেতে পারে। বার্ডহিটের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এয়ারক্রাফট মেরামতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। কারণ ইঞ্জিনে সমস্যা হলে ইঞ্জিন প্রস্তুতকারী কোম্পানিকে জানাতে হয়। ওই কোম্পানির বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীরা এসে সব কিছু চেক করে নির্দেশনা দেওয়ার পর মেরামত করতে হয়। এতে একদিকে শিডিউল বিপর্যয় হয়, অন্যদিকে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়।

এ ঘটনা শুধু বিমানে বা দেশীয় এয়ারক্রাফটের বেলায়ই হচ্ছে তা না, বিদেশি উড়োজাহাজেও ঘটছে। দীর্ঘদিন ধরেই শাহজালাল, চট্টগ্রামের শাহ আমানত এবং সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাখি ও শিয়াল তাড়ানোর কার্যকর যন্ত্র নেই। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোতেও একই অবস্থা বিরাজ করছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমনিতেই শাহজালালে বণ্যপ্রাণীর উপদ্রব ও বার্ডহিটের ঘটনা বেড়েছে, সেই তুলনায় এগুলো রোধে প্রয়োজনীয় যন্ত্রের স্বল্পতা রয়েছে। পাখি তাড়ানোর যন্ত্রও অপ্রতুল। তার ওপর এসব যন্ত্র কাজ না করায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরও বেড়ে গেছে।

কাতারে চাকরি খুঁজছেন? এখানে ক্লিক করুন

বিশ্বের প্রায় সব দেশেই বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে যানবাহন চলাচলের নিয়ম মানা হয়। রয়েছে স্পিড মিটার এবং সেটা নিয়মিত মনিটরিং করা হয়। শাহজালালে স্পিড মিটার না থাকায় আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে এর দায় কর্তৃপক্ষের ওপর বর্তাবে।

এ বিষয়ে শাহজালালের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. কামরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, বিমানবন্দর এরিয়া ইনস্পেকশন করা একটা রেগুলার প্রসেস। কমিটি ইনস্পেকশন করে যেসব ঘাটতি দেখতে পায়, সেগুলো দ্রুত পূরণের তাগিদ দিয়ে বেবিচককে চিঠি দিয়ে অবহিত করে।

কাতারে চাকরি খুঁজছেন? এখানে ক্লিক করুন

বেবিচক সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়। তিনি আরও বলেন, রানওয়েতে লাইট না থাকলে তো বিমান চলাচলই করতে পারত না। এগুলো সব সময় রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়।

কাতারের সব খবর সরাসরি হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে ক্লিক করুন

আরও পড়ুন:

Loading...
,