ভারতের রপ্তানি প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক দশক ধরে ৩০ হাজার কোটি ডলারের কমবেশি পর্যায়ে রয়ে গেছে ভারতের রপ্তানি।
এমনকি, বাংলাদেশের মতো তুলনামুলক অনেক ছোট প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছেও রপ্তানি বাজার হারিয়েছে ভারত।
বাংলাদেশের রপ্তানি খাত নিয়ে একটি ইতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি। প্রতিবেদনে ‘ভারতের রপ্তানি প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ’ মন্তব্য করে নরেন্দ্র মোদি সরকারের সমালোচনা করা হয়েছে।
ছয় দিন আগে প্রকাশিত ‘মোদির সাত বছরের শাসনামলে ভারতীয় অর্থনীতির স্বরূপ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যথেষ্ট উৎপাদন ও রপ্তানি করতে পারছে না ভারত।
মোদি সরকারের সবচেয়ে বড় প্রচারণার কেন্দ্র ছিল ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ বা স্থানীয়ভাবে চাহিদার সকল পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে স্বনির্ভরতা অর্জন ও রপ্তানি বৃদ্ধির উদ্যোগ। এর মাধ্যমে ভারতকে বৈশ্বিক রপ্তানির শক্তিকেন্দ্রে রূপদানের অভিপ্রায় ছিল কেন্দ্র সরকারের।
বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বা লালফিতার দৌরাত্ম্য কমানোকে এখানে প্রধান লক্ষ্য হিসেবে রাখা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সবচেয়ে বড় লক্ষ্য ছিল, উৎপাদনকে মোট জিডিপির ২৫ শতাংশে রূপ দেওয়া। মোদির সরকারের সপ্তম বছরে এসে যার পরিমাণ ১৫ শতাংশে রয়ে গেছে।
কিন্তু, তার চেয়েও বাজে ঘটনা হলো, উৎপাদন খাতে কর্মসংস্থান গত পাঁচ বছরে প্রায় অর্ধেক কমেছে বলে জানা যায় সেন্টার ফর ইকোনমিক ডেটা অ্যান্ড অ্যানালাইসিসের সূত্রে।
‘অন্যদিকে, এক দশক ধরেই ৩০ হাজার কোটি ডলারের কমবেশি পর্যায়ে রয়ে গেছে রপ্তানি। এমনকি, মোদির অধীনে বাংলাদেশের মতো তুলনামুলক অনেক ছোট প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছেও রপ্তানি বাজার হারিয়েছে ভারত।’
বিবিসির দুই সাংবাদিক নিখিল ইনামদার ও অপর্ণা আলুরি লিখেছেন প্রতিবেদনটি। প্রতিবেদনে ‘ভারতের রপ্তানি প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ’ উপ-শিরোনামে তারা বিশ্বব্যাংকের তথ্য ব্যবহার করে লিখেছেন, ২০১১ সালে পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রায় ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। প্রবৃদ্ধির এই ইতিবাচক ধারা প্রতিবছরই বজায় ছিল। ২০১৯ সালে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ শতাংশের মতো।
অন্যদিকে, ২০১১ সালে ভারতের রপ্তানি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৫ শতাংশ। ২০১২ সালে প্রবৃদ্ধি নেমে আসে ৬ শতাংশে। ২০১৩ সালে হয় ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। এরপর পর পর দুই বছর নেতিবাচক (নেগেটিভ) প্রবৃদ্ধি হয়। ২০১৪ সালে ভারতের রপ্তানি কমে ১ শতাংশের মতো। ২০১৫ সালে কমে ৫ শতাংশ।
২০১৬ সালে পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধিতে ফেরে ভারত; তবে তা ছিল খুব সামান্য ৪ শতাংশ। ২০১৭ সালেও ছিল ৪ শতাংশ। ২০১৮ সালে অবশ্য প্রবৃদ্ধি বেড়ে ১১ শতাংশে ওঠে। কিন্তু ২০১৯ সালে প্রবৃদ্ধি নেমে আসে ৫ শতাংশে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এই সাত বছরে ভারতের বাণিজ্যিক নীতিও প্রভাবিত হয়। স্বনির্ভরতাকে গতিশীল করতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রবল সংরক্ষণশীল বাণিজ্য নীতি নিয়েছে মোদি প্রশাসন, অনেক আমদানি পণ্যেই আরোপ করেছে উচ্চ শুল্ক। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এসব উদ্যোগ সমালোচিতও হয়, নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হয় রপ্তানির বাজার।’
প্রতিবেদনে মোদি সরকারের সাত বছরের অর্থনীতির হালচাল তুলে ধরে বলা হয়, ২০২৫ সাল নাগাদ ভারতকে ৫ লাখ কোটি ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মোদি। সেই অঙ্গীকার এখন রূপ নিয়েছে সুদূর পরাহত স্বপ্নে।
আরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি, লালফিতার দৌরাত্ম্য হ্রাস আর দেশকে সমৃদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক নতুন শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হন নরেন্দ্র মোদি। তারপর, ২০১৪ ও ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনেও বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়; বড় আকারের সংস্কারের আশাবাদকে শক্তিশালী রূপ দেয়।
কিন্তু, রাজনীতির ময়দান কাঁপালেও বিগত সাত বছরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার পারফরম্যান্স ছিল অনেকগুণ নিষ্প্রভ। মহামারি করোনাভাইরাস তার পিছিয়ে থাকা কর্মতৎপরতাকে আরও বড় আঘাতে পশ্চাদমুখী করে তুলেছে। এভাবে এশিয়ার তৃতীয় বৃহৎ অর্থনীতি কীভাবে মোদির অধীনে চালিত হয়েছে, তা নিয়েই বিশদ এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
বাংলাদেশের রপ্তানির চিত্র
বাংলাদেশের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি থেকে ১৫ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সেই আয় আড়াই গুণের বেশি বেড়ে ৪০ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। কিন্তু করোনার কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা কমে ৩৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে যায়।
তবে মহামারির মধ্যেও চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক ধারা ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২০-২১ অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) ৩ হাজার ৫১৮ কোটি (৩৫.১৮ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ-এর সভাপতি ফারুক হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অর্থবছরের শেষ মাস জুনেও রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত আছে। আমরা আশা করছি, অর্থবছর শেষে ১৫ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি হবে।
‘মহামারির এই কঠিন সময়ে এটা একটা বড় সাফল্য বলে আমি মনে করি। সরকারের প্রণোদনা আমাদের এক্ষেত্রে সহায়তা করেছে।’
