মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল-আমিরাত সম্পর্কের প্রভাব

ইরানকে মোকাবিলা করতে আরব বিশ্বকে কাছে টানতে চাইছে ইসরায়েল। গত ডিসেম্বরে আমিরাত সফর করেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট।
মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্কের অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখেন। তারা কি পারবে ইরান ও উদীয়মান তুরস্ককে ঠেকাতে? লিখেছেন তৃষা বড়ুয়া
ইসরায়েলের উদ্যোগ
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট গত বছরের ডিসেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করেন। ইসরায়েলের মন্ত্রী-এমপিরা বিভিন্ন সময়ে আমিরাতে গেলেও এই প্রথম দেশটির কোনো সরকার প্রধান আমিরাত সফর করলেন।
নাফতালি বেনেটের সফর নানা কারণে আলাদা গুরুত্ব বহন করছে। আরব বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ২০২০ সালে আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের প্রক্রিয়া শুরু করে ইসরায়েল।
আমিরাতে প্রধানমন্ত্রীর প্রথম সফরের বিষয়টি ইসরায়েল দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে বেশ ফলাও করে প্রচার করলেও আমিরাতের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করতে রাজি হননি।
উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিষয়ের গবেষক হুসেইন আইবিশ জানান, প্রতিষ্ঠার বহু বছর পর সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে উষ্ণতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়তে সক্ষম হয়েছে ইসরায়েল।
প্রতিবেশী আরব দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েল যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখতে চাইছে, প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেটের সফর সেই বার্তা আরও পরিষ্কারভাবে দিয়েছে।
অবশ্য মধ্যপ্রাচ্য ঘিরে ইসরায়েলের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন বেশ কয়েকটি শর্তের ওপর নির্ভর করছে। তার মধ্যে সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন ও উপসাগরীয় অঞ্চলে অন্যতম শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ইরানের বিষয়ে পদক্ষেপ উল্লেখযোগ্য।
ঐতিহাসিক সম্পর্ক
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠা হয়। ৭২ বছরের মধ্যে আরব বিশ্বের কেবল দুটি দেশ মিসর ও জর্ডান ইসরায়েলকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়।
প্রতিষ্ঠার পর ইসরায়েলিদের প্রতি প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর বিদ্বেষ এত প্রকট ও স্পষ্ট ছিল যে, দেখে মনে হতো শত্রুতাপূর্ণ পরিবেশে দাঁড়িয়ে থাকা ছোট জাতি রাষ্ট্র ইসরায়েল বর্তমান যুগের স্পার্টা। কেবল সামরিক শক্তির ওপরই এর অস্তিত্ব পুরোপুরি নির্ভরশীল।
প্রতিষ্ঠার পর পশ্চিমা বিশ্ব বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রকে মিত্র হিসেবে পায় ইসরায়েল। ১৯৫৬ সালে মিসরের প্রেসিডেন্ট জামাল আবদেল নাসের সুয়েজ খালকে জাতীয়করণ করলে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সংকট দেখা দেয়।
মধ্যপ্রাচ্যে আন্তর্জাতিক সেই সংকট চলাকালে ইরান ও তুরস্কের সঙ্গে কিছুটা ঘনিষ্ঠ হয় ইসরায়েল। তবে গত কয়েক দশকে তুরস্ক ও ইরানের নানা ধরনের পদক্ষেপ ওই সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বর্তমানে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রনীতির বড় অংশ ওই দুই দেশের হুমকি বিবেচনায় রেখে প্রণয়ন করা হয়।
ফিলিস্তিন ইস্যু
আরব বিশ্ব ও ইসরায়েলের মধ্যে বৈরী সম্পর্কের প্রধান কারণ ফিলিস্তিন ইস্যু। ১৯৬৪ সালে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও আরব বিশ্বের সঙ্গে ঐক্যের লক্ষ্য নিয়ে রাজনৈতিক দল প্যালেস্টাইন লিবারেশন অরগানাইজেশন প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯৭৪ সালে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অরগানাইজেশনকে ফিলিস্তিনের জনগণের একমাত্র প্রতিনিধিত্বকারী দল হিসেবে ঘোষণা দেয় আরব বিশ্বের আঞ্চলিক সংস্থা আরব লিগ।
আরব লিগের বার্তা ছিল পরিষ্কার ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষাবলম্বন এবং একই সঙ্গে ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা। এমনকি ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে আরব লিগ একটি চুক্তিতে পৌঁছানোরও উদ্যোগ নেয়।
তবে বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে ফিলিস্তিন ইস্যুতে ন্যায়সংগত অবস্থান থেকে সরে আসে আরব লিগভুক্ত দুটি দেশ। ১৯৭৯ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে মিসর। অন্যদিকে ১৯৯৪ সালে ইহুদি রাষ্ট্রটির সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে জর্ডান।
১৯৯১ সালে মাদ্রিদ শান্তি সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনায় বসে আরব বিশ্বের দেশগুলো। ইসরায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইসহাক রাবিন ফিলিস্তিন-ইসরায়েল ইস্যুতে ১৯৯৩ সালে যুগান্তকারী অগ্রগতিতে পৌঁছান।
তবে ১৯৯৫ সালে ইসহাক রাবিনকে হত্যা করা হলে ওই অগ্রগতি বাধাপ্রাপ্ত হয়। এরপর ইসরায়েলের ক্ষমতায় বসেন কট্টর জাতীয়তাবাদী নেতা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, যার দুই রাষ্ট্র সমাধানের বিষয়ে কোনো আগ্রহ নেই।
নেতানিয়াহু মনে করেন, ফিলিস্তিন ইস্যু বাদ রেখে আরব বিশ্বের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করা সম্ভব। তার এই দৃষ্টিভঙ্গি দুই দশক পর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় আব্রাহাম অ্যাকর্ড নামের এক চুক্তির মধ্য দিয়ে বাস্তব রূপ পায়।
আব্রাহাম অ্যাকর্ড
২০২০ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় চারটি দেশের সঙ্গে আব্রাহাম অ্যাকর্ড স্বাক্ষর করে কূটনৈতিক মাইলফলক অর্জন করে ইসরায়েল।
এই চুক্তির ফলে প্রথমে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন এবং পরে সুদান ও মরক্কোর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক হয় ইহুদি রাষ্ট্রটির। আমিরাত ও ইসরায়েল সবসময়ই নিজেদের মধ্যে গোপন নিরাপত্তা সম্পর্ক রেখে চলে আসছে।
ওই চুক্তির পর বাণিজ্য সম্পর্ক, বৈজ্ঞানিক সহযোগিতাসহ আরও কয়েকটি ক্ষেত্রে সম্পর্ক জোরদারের অঙ্গীকার করে উভয় দেশ। পশ্চিমতীরে ইসরায়েল দখলদারি তৎপরতা স্থগিত করবে এটি ছিল আব্রাহাম অ্যাকর্ডে উল্লিখিত শর্ত। খেয়াল করার বিষয়, স্বাক্ষরকারী দেশগুলো চুক্তিতে ইসরায়েলের দখলদারি তৎপরতা স্থগিত করার কথা বলেছে, বন্ধ করতে বলেনি।
ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের সময় সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, সুদান ও মরক্কো নিজেদের পৃথক পৃথক এজেন্ডা উপস্থাপন করে। ইরান ও তুরস্কের আঞ্চলিক শান্তি ‘বিনষ্ট’ করার কর্মকাণ্ডে উদ্বেগের কথা জানায় আমিরাত।
মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের তুলনামূলকভাবে উদারপন্থি রাষ্ট্র হিসেবে দাবি করে দেশটি। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের আধিপত্য বন্ধ করতে চায় বাহরাইন।
সুদান চায়, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সন্ত্রাসবাদের যে তালিকা যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে, সেখান থেকে তাদের নাম মুছে ফেলা হোক।
আর মরক্কোর ইচ্ছা, পশ্চিম সাহারার ওপর তাদের দাবিকে যেন মৌন স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ইসরায়েলের শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা ইঙ্গিত দেন, আব্রাহাম অ্যাকর্ডে পরবর্তী স্বাক্ষরকারী দেশ হতে যাচ্ছে ওমান।
আব্রাহাম অ্যাকর্ড স্বাক্ষরের পর ইসরায়েলের সঙ্গে মরক্কো ও বাহরাইনের সম্পর্কের উন্নতি ঘটে। সুদানের সঙ্গে সম্পর্ক আগের মতোই টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তবে সবচেয়ে লক্ষণীয় ইসরায়েল ও আমিরাতের সম্পর্ক।
২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর আব্রাহাম অ্যাকর্ড স্বাক্ষরের পর উভয় দেশ বেশ কয়েকটি অর্থনৈতিক চুক্তি করে। গত বছর ইসরায়েল ও আমিরাতের মধ্যে সাড়ে ৬০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের বাণিজ্য হয়।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক রাজনীতিবিষয়ক গবেষণা সংস্থা আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের গবেষক কেনেথ পোলাক বলেন, ‘ইসরায়েল ও আমিরাত উভয়ই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়ে যথেষ্ট আগ্রহী।
কৌশলগত ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উভয় দেশ আগামীতে আরও অনেক উন্নয়ন ঘটাবে। তবে লক্ষ্য অর্জনে তাদের বেশ কিছু বাধাও অতিক্রম করতে হবে।’
ইরানের হুমকি
ইসরায়েল ও আরব বিশ্বের মধ্যে সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সাহায্যকারীর ভূমিকা পালন করছে ইরানের হুমকি। ইসরায়েল ও সৌদি আরব (সুন্নি দেশ) উভয়ই ইরানকে (প্রধানত শিয়া) অপছন্দ করে।
অবশ্য ফিলিস্তিন ইস্যুতে সৌদি আরব ও ইসরায়েলের অবস্থান ভিন্ন। সিরিয়াকে নিয়ে সৌদি আরব ও তুরস্ক একই মনোভাব পোষণ করে। কিন্তু এই দুই দেশ লিবিয়া ও তুরস্কের সাম্রাজ্যবাদী উচ্চাকাক্সক্ষার বিষয়ে একমত নয়।
এটিও ইসরায়েলকে হুমকির মুখে ফেলেছে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ঐতিহাসিকভাবে মিত্র। তবে ইয়েমেন থেকে আমিরাত সরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলে ওই দুই দেশের সম্পর্ক শীতল হয়ে পড়ে।
যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও সৌদি আরবের প্রতি বিদ্বেষের জায়গা থেকে একত্রিত হয়েছে তিন দেশ ইরান, সিরিয়া ও লেবানন। প্রতিরোধের অক্ষ নামে তারা গঠন করেছে এক শিয়া জোট।
ইরান বিষয়ে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্রও। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলকে তীব্র সমর্থনের পাশাপাশি ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়েও আগ্রহী।
গবেষক কেনেথ পোলাক বলেন, ‘আরব বিশ্ব ও ইসরায়েল ইরানের হুমকি বিবেচনায় নিয়ে এক হয়েছে। আব্রাহাম অ্যাকর্ড এক ঢিলে দুই পাখি মেরেছে।
একদিকে এটি বিংশ শতাব্দীর আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের অবসান ঘটাতে সহায়তা করেছে। পাশাপাশি এই চুক্তি একবিংশ শতাব্দীর ইরান ও প্রতিরোধের অক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধের শুরুতে ভূমিকা রাখছে।’
অবশ্য গবেষক হুসেইন আইবিশ ইরানবিরোধী ব্লকের ঐক্য নিয়ে অতটা আশাবাদী নন। তিনি মনে করেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেটের আমিরাত সফর ইরানবিরোধী ব্লককে শক্তিশালী করবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
তবে ইরান বিষয়ে ইসরায়েল ও সৌদি আরবের অবস্থান এক নয়। ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েল ছায়াযুদ্ধে লিপ্ত। সিরিয়া ও ইরাকে ইসরায়েলের সেনা অবস্থান করছে। তবে ইরানের সঙ্গে গাঢ় কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করছে আমিরাত।
পদক্ষেপের ভিন্নতার কারণে এ মুহূর্তে ইরানের বিরুদ্ধে শক্তিশালী সমন্বিত ঐক্য গড়ে ওঠার সম্ভাবনা ক্ষীণ। ইরানের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে কোনো ধরনের সংঘর্ষ নেই তেহরানের। কিছু ক্ষেত্রে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে যা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে সমাধান করা হয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরবের রাজনীতি নানা কারণে জটিল হয়ে পড়েছে। গবেষক হুসেইন আইবিশ মনে করেন, ইসরায়েলের কূটনৈতিক পুরস্কার হতে গিয়ে সৌদি আরবকে চড়া মূল্য দিতে হয়েছে আর রাজনৈতিক হিসাবও আগের চেয়ে অনেক জটিল হয়ে পড়েছে।
সৌদি আরবের অভ্যন্তরীণ উদ্বেগজনক রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও বিশ্ব রাজনীতির মঞ্চে দেশটির ইসলামি নেতৃত্বের কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর যেকোনো রাজনৈতিক উদ্যোগ সৌদিদের চিন্তাভাবনায় প্রভাব ফেলবে।
আমিরাতের পদাঙ্ক তারা অনুসরণ করবে কি-না বা করলেও কবে করবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। ইরানের হুমকির পাশাপাশি পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্কও এক্ষেত্রে বিবেচ্য।
সৌদি আরবের মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন ও সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যার কড়া সমালোচনা করে যুক্তরাষ্ট্র। পূর্বসূরিদের মতো মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছে।
সৌদি আরবের মনে হওয়া স্বাভাবিক, আমিরাতের মতো ইসরায়েলের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখলে যুক্তরাষ্ট্রের নেকনজরে পড়বে তারা। আর এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা চুক্তির পথ আরও প্রশস্ত হবে।
অবশ্য ফিলিস্তিনের সমস্যার সমাধান না করে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করলে সমালোচনার মুখে পড়বে সৌদি আরব। এর মাধ্যমে ২০০২ সালের আরব শান্তি উদ্যোগ লঙ্ঘন করবে দেশটি।
২০০২ সালে আরব-ইসরায়েলের যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে বৈরুত সম্মেলনে আরব শান্তি উদ্যোগ (সৌদি উদ্যোগ নামে বেশি পরিচিত) নামের একটি প্রস্তাব উত্থাপন করে আরব লিগ।
এতে বলা হয় পশ্চিমতীর, গাজা, গোলান মালভূমি, লেবাননসহ দখলকৃত অঞ্চল থেকে ইসরায়েল তাদের সেনা পুরোপুরি প্রত্যাহার করবে। আর এর বিনিময়ে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে আরব বিশ্ব। আরব লিগের মধ্যে সৌদি আরবই মূলত সে সময় ওই উদ্যোগ নিয়েছিল।
কূটনৈতিক প্রভাব
আরব দেশগুলো মনে করতে পারে, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করলে ফিলিস্তিনি অধ্যুষিত পশ্চিমতীর ও গাজা উপত্যকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে ইসরায়েল। বাস্তবে যদিও এমনটা ঘটেনি।
গত বছর ইসরায়েল পূর্ব জেরুজালেম থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করতে গেলে দুপক্ষের সংঘর্ষ বাধে। টানা ১১ দিনের সংঘর্ষে ৬৬ শিশুসহ আড়াইশোর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় গাজা উপত্যকা।
সে সময় সংঘর্ষ বন্ধে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল আমিরাত। তবে ফিলিস্তিনের প্রতি ইসরায়েলের আগ্রাসী তৎপরতার কোনো ধরনের সমালোচনা করেনি তারা। অনেকে আশা করেন, আমিরাত, বাহরাইনের মতো সৌদি আরবও আব্রাহাম অ্যাকর্ডে সই করলে ফিলিস্তিনে ইসরায়েল তার দখলদারি তৎপরতা থেকে সরে আসবে।
তবে আদতে এমনটা হবে কি-না, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। আরব বিশ্বের অন্যান্য দেশকেও ইসরায়েলের কাছে টানার সম্ভাবনা রয়েছে। আর সেটি হলে ইরান আরও ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিরোধের অক্ষকে আরও শক্তিশালী করবে।
এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ তুরস্কের ক্রমবর্ধমান জোরালো সামরিক শক্তিকে কোনোভাবেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আমিরাতের সঙ্গে ইসরায়েলের সখ্য অন্যান্য আরব রাষ্ট্রের সঙ্গে তুরস্কের দূরত্ব আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আঞ্চলিক সংঘর্ষে নিজেদের অবস্থান আরও পাকাপোক্ত করার লক্ষ্যে নির্দিষ্ট প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ইসরায়েল বন্ধুত্ব গড়ে তুলছে এমনটাও মনে করছেন অনেকে।
গবেষক কেনেথ পোলাক বলেন, ‘ইসরায়েলের জনগণ ও আমিরাতসহ সুন্নি আরব রাষ্ট্র উভয় পক্ষের প্রত্যাশা, ইসরায়েল সরকারের সঙ্গে আরব দেশের সুসম্পর্ক ইরানকে আগ্রাসী মনোভাব থেকে সরে আসতে বাধ্য করবে। এমনকি মধ্যপ্রাচ্যে শিয়া দেশটির ক্ষমতা খর্ব করতেও সহায়তা করবে এই সম্পর্ক।
’ ইসরায়েল এরই মধ্যে ইরান ও ইরানপন্থি সশস্ত্র সংগঠনের সঙ্গে পরোক্ষ যুদ্ধে লিপ্ত। অন্যদিকে উপসাগরীয় আরব দেশগুলো ইরানকে কূটনৈতিকভাবে মোকাবিলা করছে।
ইরানের বিরুদ্ধে এক হয়ে বা একে অন্যের পক্ষে যুদ্ধ করার ইচ্ছা আমিরাত বা ইসরায়েল কারোরই এ মুহূর্তে নেই। ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে কি-না, তা সময়ই বলে দেবে।
হোয়াটসঅ্যাগে সব খবর পেতে চাইলে যুক্ত হোন এই গ্রুপে
কাতারের গুরুত্বপূর্ণ খবরের আপডেট পেতে এখানে ক্লিক করে পেজে লাইক দিয়ে রাখুন
নিচের দিকে স্ক্রল করে আরও গুরুত্বপূর্ণ খবর পড়ুন
দেশ রুপান্তর
