রেমিট্যান্সে বোনাস: সরকারের চেয়ে বেশি দিচ্ছে দুই ব্যাংক
২০১৯-২০ অর্থবছর অর্থাৎ ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচক প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। দুই ঈদে এর সঙ্গে ১ শতাংশ বেশি টাকা দিচ্ছে অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক।
বিদেশ থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠালে সরকার যে দুই শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে, দুই রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাংক তার সঙ্গে আরও এক শতাংশ যোগ করছে।
রূপালী ও অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে কেউ বিদেশ থেকে অর্থ পাঠালে বাংলাদেশে সে টাকা তুললে ডলারের বিনিময় হারের সঙ্গে ৩ শতাংশ হারে বেশি পাওয়া যাবে।
২০১৯-২০ অর্থবছর অর্থাৎ ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচক প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। নতুন বাজেটেও সুবিধা অব্যাহত রাখা হয়েছে।
অর্থাৎ কোনো প্রবাসী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে তার স্বজন ১০২ টাকা পাচ্ছেন। তবে দুই ঈদকে সামনে রেখে যে সেই স্বজন ১০৩ টাকা তুলতে পারছেন রূপালী ও অগ্রণী ব্যাংক থেকে।

এই বাড়তি প্রণোদনা প্রথমে দেয়া শুরু করে অগ্রণী ব্যাংক। গত বছরের ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় বাড়তি প্রণোদনা দেয় ব্যাংকটি। এবারও রোজার ঈদের আগে ১ এপ্রিল থেকে ফের সেই বাড়তি প্রণোদনা দেয়া শুরু করে তারা। পরে রূপালী ব্যাংকও গত রোজায় এই উদ্যোগে যুক্ত হয়। দুটি ব্যাংকই কোরবানির ঈদ পর্যন্ত সুবিধা চালিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অগ্রণী ব্যাংকের এমডি শামস-উল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনাভাইরাস বিশ্ব অর্থনীতিকে তছনছ করে দিয়েছে। সবাই আশঙ্কা করেছিল, এই মহামারির মধ্যে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ একেবারে কমে যাবে।
সে শঙ্কা থেকেই আমরা গত বছরের রমজান মাস থেকে শুরু করে ১৩ আগস্ট পর্যন্ত সরকারের ২ শতাংশ প্রণোদনার সঙ্গে বাড়তি আরও ১ শতাংশ প্রণোদনা দিয়েছিলাম। এবারও এপ্রিল থেকে শুরু করেছি। বাড়তি এই সুবিধা দেবো কোরবানির ঈদ পর্যন্ত।’
এর ফলে ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স অনেক বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গত দুই অর্থবছরে (২০১৯-২০ ও ২০২০-২১) সরকারি ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে যে রেমিট্যান্স এসেছে তার ৪০ শতাংশই এসেছে অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে।
‘তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এখন থেকে বছরের বড় দুই উৎসবকে সামনে রেখে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে বাড়তি ১ শতাংশ প্রণোদনা দেবো।’
বাংলাদেশ ব্যাংকও এ বিষয়ে অনুমতি দিয়েছে বলে জানান তিনি।
রূপালী ব্যাংকের উপমহাব্যবস্থাপক মনির হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা গত রোজার ঈদ থেকে এই বাড়তি প্রণোদনা দিচ্ছি। এখনও চলছে; কোরবানির ঈদ অবধি চলবে।’
দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিভিন্ন দেশে থাকা সোয়া কোটিরও বেশি বাংলাদেশির পাঠানো অর্থ বা রেমিট্যান্স। দেশের জিডিপিতে সব মিলিয়ে এর অবদান ১২ শতাংশের মতো।
করোনা মহামারিতে গত বছরের মার্চ থেকে বৈশ্বিক পরিস্থিতি ওলটপালট হয়ে যাওয়ায় রেমিট্যান্সও কমে গিয়েছিল। মার্চে দেশে করেনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর এপ্রিল মাসে মাত্র ১০৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। কিন্তু তার পর থেকেই উল্লম্ফন অব্যাহত রয়েছে। রেকর্ডের পর রেকর্ড হচ্ছে।
গত ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২০-২১ অর্থবছরের দুই দিন (২৯ ও ৩০ জুন) বাকি থাকতেই ২৪ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৬ দশমিক ৪০ শতাংশ বেশি।
দুই দিনের রেমিট্যান্স যোগ হলে গেলো অর্থবছরের মোট রেমিট্যান্সের পরিমাণ ২৫ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
এই সময়ে অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২৮৫ কোটি ডলার। যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৬২ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরে মোট রেমিটেন্সের ১১ দশমিক ৬ শতাংশই এসেছে অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে।
২০১৯-২০ অর্থবছরে এই ব্যাংকের মাধ্যমে ১৭৬ কোটি ২৮ লাখ ডলার দেশে এসেছিল।
রূপালী ব্যাংকের মাধ্যমে ৮০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে এবার। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এসেছিল ৪০ কোটি ডলারের মতো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মহামারির মধ্যেও রেমিট্যান্সের এই উল্লম্ফন সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। আর এর উপর ভর করেই অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ এখন ৪৬ বিলিয়ন ডলারের উপরে অবস্থান করছে।’
