সেপ্টেম্বরে আসছে টাকা-রুপি কার্ড, চালু হবে ডিসেম্বরে

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্যে রুপির ব্যবহার শুরু হয়েছে গতকাল থেকে। দুই দেশের মধ্যে আমদানি-রফতানি প্রক্রিয়াকে আরো সহজ করতে সেপ্টেম্বরে আসছে টাকা-রুপি ডুয়াল কারেন্সি কার্ড। তবে সব প্রক্রিয়া শেষে সেটি চালু হতে ডিসেম্বর লেগে যেতে পারে।
কাতারের সব খবর হোয়াটসঅ্যাপে পেতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্যে রুপির ব্যবহারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এ তথ্য জানান।
রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক ও ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশন যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
বাংলাদেশ থেকে প্রথম রুপিতে রফতানি চালান পাঠিয়েছে বগুড়ার তামিম ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি রফতানি করেছে ধানের কুঁড়া থেকে তৈরি অপরিশোধিত তেল।
১ কোটি ৬০ লাখ রুপির বিনিময়ে এ তেল নিয়েছেন ভারতের এক আমদানিকারক। এর ঋণপত্র বা এলসি খোলে ভারতের আইসিআইসিআই ব্যাংক।
আর রফতানিকারকের ব্যাংক ছিল স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (এসবিআই) বাংলাদেশ শাখা। এছাড়া রুপিতে দেশের প্রথম আমদানি করেছে বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান নিতা কোম্পানি লিমিটেড। এর জন্য ১ কোটি ২০ লাখ রুপির এলসি খোলা হয় এসবিআইয়ের ঢাকা অফিস থেকে।
কাতারে চাকরি খুঁজছেন? এখানে ক্লিক করুন
ভারতীয় রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানেরও ব্যাংক এসবিআই বাংলাদেশ শাখা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কভিড ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্ব অর্থনীতির অভিঘাত মোকাবেলা নিয়ে আলোকপাত করেন বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। তিনি বলেন, ‘ক্রমবর্ধমান ভূরাজনৈতিক জটিলতায় বিশ্বের দেশগুলো অর্থনৈতিকভাবে লড়াই করছে।’
‘রুপিতে ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যের সূচনা এ জটিলতাগুলোকে হ্রাস করবে এবং বাণিজ্যিক উন্নয়নের জন্য নতুন পথ উন্মুক্ত করবে। এরই মধ্যে আমরা টাকা-রুপি ডুয়াল কারেন্সি কার্ড চালুর প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি। সেপ্টেম্বরের মধ্যে কার্ড প্রস্তুত হয়ে যাবে।’
‘এরপর ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনের দরকার পড়বে। চালু হতে ডিসেম্বর নাগাদ লেগে যাবে। এ কার্ড দেশের পাশাপাশি ভারতে গিয়েও ব্যবহার করা যাবে।’
ডলার সাশ্রয়ের অংশ হিসেবে এ কার্ড চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে জানিয়ে গভর্নর বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে যারা ভারতে যান, তারা সঙ্গে মার্কিন ডলার নিয়ে যান।
ভারতে যাওয়ার পর সেই ডলারকে রুপিতে রূপান্তর করে খরচ করতে হয়। নতুন এ কার্ড চালু হলে আর দুবার মুদ্রা বিনিময় করতে হবে না।
কার্ড ব্যবহার করলে বিনিময় হারের খরচ কিছুটা বাঁচবে। এ কার্ড দেশে যেমন ব্যবহার করা যাবে, তেমনি ভারতে গিয়েও ব্যবহার করা যাবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের অন্যতম বড় বাণিজ্য অংশীদার ভারত। বাংলাদেশ সেখান থেকে বছরে ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে।
আর ভারতে রফতানি করে ২০০ কোটি ডলারের পণ্য। দীর্ঘদিন ধরেই দুই দেশের মধ্যে এ আলোচনা চলছিল। ব্যবসায়ীরাও এর দাবি করে আসছেন অনেক দিন ধরে। এবার তা বাস্তব রূপ পেল।’
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা, বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিঞা, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মো. সলিমুল্লাহ, সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আফজাল করিম, ইস্টার্ন ব্যাংকের এমডি আলি রেজা ইফতেখার, এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বারের সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ ও বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশের সোনালী ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংক এবং ভারতের স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ও আইসিআইসিআই ব্যাংক উভয় দেশের মধ্যে রুপিতে লেনদেনের দায়িত্বে থাকবে। আপাতত রুপিতে শুরু হলেও ভবিষ্যতে টাকায়ও হবে এ বাণিজ্য।
এ বিষয়ে বক্তারা জানান, রুপি ব্যবহার করে আমদানি-রফতানির মূল্য বিনিময় জনপ্রিয় হয়ে উঠলে দুই দেশের লেনদেনের ক্ষেত্রে ডলারের ওপর চাপ কমবে। তাছাড়া আমদানিকারক ও রফতানিকারকদের দুবার মুদ্রা বিনিময়ের খরচ কমবে। এতে লেনদেন নিষ্পত্তিতে সময়ও বাঁচবে।
রুপিতে লেনদেন কার্যক্রম চালুর পর ব্যাংকগুলো এ মুদ্রায় এলসি করতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংক তাতে অনুমতি দেবে। বাংলাদেশের কোনো ব্যবসায়ী আমদানি বা রফতানির ক্ষেত্রে রুপিতে এলসি খুলতে চাইলেও তা করতে পারবেন।
ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে রুপিতে বাণিজ্য শুরু হওয়ার বিষয়টি একটি ল্যান্ডমার্ক ইভেন্ট। গত এক দশকে বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে।
এটা আমাদের মধ্যে যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের মাধ্যমে দৃশ্যমান হয়েছে। এখন দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সর্ববৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার হচ্ছে বাংলাদেশ। ভারতে বাংলাদেশের রফতানিও গত বছর ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।
রুপিতে বাণিজ্য বৈদেশিক রিজার্ভের ওপর কিছুটা চাপ কমাবে। এটা নতুন অধ্যায়ের একটি সূচনা। অনেকের কাছে এটার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে এটা মাত্র সূচনাপর্ব।’
বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার দেশ ভারত। গত এক দশকে দুই দেশের বাণিজ্য দারুণ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
তবে বেশির ভাগ বাণিজ্য ভারতের পক্ষে রয়েছে। এ ঘাটতি পূরণে দরকার কার্যকর ব্যবসায়িক পরিবেশ। তবে নতুন এ মেকানিজম ব্যবসা বাড়াতে সহায়ক হবে বলে আশা করছি।’
কারেন্সি সোয়াপ ব্যবস্থা বা নিজস্ব মুদ্রা বিনিময়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের আলোচনা চলছিল প্রায় এক দশক ধরে। বিষয়টি নতুন করে সামনে আসে গত বছরের ডিসেম্বরে ভারতের দিল্লিতে অনুষ্ঠিত দুই দেশের বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে।
সে সময় ভারতের পক্ষ থেকে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের মাধ্যম ভারতীয় মুদ্রা রুপি ব্যবহারের প্রস্তাব দেয়া হয়। এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয়ার কথা ওই বৈঠকেই জানিয়ে দেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। পরে তিনি দেশে ফিরে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে এ সম্পর্কে জানালে সবাই সম্মতি দেয়।
আরো পড়ুন
BanikBarta
