সেপ্টেম্বরে বিশ্বে শীর্ষ পারফর্মকারী মুদ্রা পাকিস্তানি রুপি

পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও নিরাপত্তা সংস্থার যৌথ উদ্যোগে ডলারের অবৈধ হাওলা-হুন্ডির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ফলও মিলছে দ্রুত।

চলতি সেপ্টেম্বরে বিশ্বব্যাপী শীর্ষ পারফর্মকারী মুদ্রা হিসেবে স্থান করে নিয়েছে পাকিস্তানি রুপি। থাইল্যান্ডের বাথ ও দক্ষিণ কোরিয়ার ওনকে পেছনে ফেলে মুদ্রাটির মান বেড়েছে ৬ শতাংশ পর্যন্ত।

এ ধারা অব্যাহত থাকলে রুপি বছরের সবচেয়ে সেরা মুদ্রায় পরিণত হবে বলে ব্লুমবার্গ ও রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

কাতারে বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরির খবর দেখতে এখানে ক্লিক করুন

কয়েক বছর ধরে চরম অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বাড়ছে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা।

ডলারের বিপরীতে রুপির অব্যাহত পতনে জ্বালানি তেলসহ নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাড়ছে জনরোষ। তাই রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে দেশটির অর্থনীতিকেও সামাল দিতে হচ্ছে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৫ সেপ্টেম্বর ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানি মুদ্রার রেকর্ড দরপতন হয়ে ৩০৭ রুপিতে পৌঁছে।

কিন্তু কঠোর নজরদারি এবং অবৈধ হুন্ডির বিরুদ্ধে অভিযানের পর গত বৃহস্পতিবার ডলারপ্রতি বিনিময় হার নেমে এসেছে ২৮৭ রুপিতে। বিশ্লেষকদের ধারণা, এ ধারা অব্যাহত থাকলে পাকিস্তানি রুপি বছরের সেরা মুদ্রা হিসেবে স্থান করে নিতে পারে।

কাতারে কোথায় কী অফার চলছে- দেখতে ক্লিক করুন এখানে

ডলারের কারসাজি ঠেকাতে দেশটির মানি এক্সচেঞ্জগুলোয় নিরাপত্তা বাহিনী ফেডারেল এজেন্সির সদস্যদের দিয়ে নজরদারি বাড়ায় পাকিস্তান সরকার। সাদা পোশাকে নিরাপত্তাকর্মীদের সাঁড়াশি অভিযান ডলার মজুদদারদের বিরুদ্ধে চাপ সৃষ্টি করে।

একই সঙ্গে ছোট এক্সচেঞ্জগুলোয় বিদেশী মুদ্রা রাখার বিষয়ে শর্ত বেঁধে দেয় দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর ডলারের দর স্বচ্ছ রাখতে এবং নজরদারি জোরদার করতে সব বড় ব্যাংককে নিজস্ব এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার জন্য বলা হয়। নানামুখী এসব উদ্যোগই দেশটির ডলারের বাজারে স্বস্তি আনছে।

রুপির এমন অর্জনকে ‘স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় আশার সঞ্চার’ বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী আনোয়ারুল হক কাকার। ডলারের এ স্থিতিশীল মূল্য আমদানীকৃত মূল্যস্ফীতি এবং নিত্যপণ্যের দাম কমাতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন দেশটির অর্থমন্ত্রী।

পাকিস্তানের মুদ্রা ব্যবসায়ীরা বলছেন, যৌথ অভিযানের পর কালোবাজার থেকে কয়েক হাজার মিলিয়ন ডলার ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবেশ করেছে।

এ বিষয়ে করাচিভিত্তিক আর্থিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আলফাবিটা কোর সলিউশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খুররম শেহজাদ বলেন, ‘পাকিস্তানের খোলাবাজারে অবৈধ হাওলা ও হুন্ডি বাণ্যিজ্যের অনেক ফাঁক-ফোকর ছিল। দাম বাড়লে মজুদদার ও রফতানিকারকরা তাদের কাছে থাকা ডলার খোলাবাজারে বিক্রি শুরু করত।’

রুপির অবমূল্যায়নের তুলনায় এখনো যথেষ্ট মান অর্জন হয়নি বলে মনে করছেন পাকিস্তানের অর্থনীতিবিদ ফাহাদ রউফ। ইসমাইল ইকবাল সিকিউরিটিজের এ প্রধান গবেষক বলেন, ‘গত কয়েক বছর পাকিস্তানের রুপি সবচেয়ে দুর্বল মুদ্রা হিসেবে পারফর্ম করছে।

তাই এখনো নিজের অবস্থান ফিরে পেতে অনেক দূর যেতে হবে রুপিকে। রিজার্ভের অবস্থাও এখনো স্বস্তিদায়ক অবস্থান থেকে অনেক দূরে রয়েছে।’

কাতারে কোথায় কী অফার চলছে- দেখতে ক্লিক করুন এখানে

পাকিস্তানের রিজার্ভ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ছিল ৭ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার, যা দিয়ে দুই মাসেরও আমদানি দায় মেটাতে পারবে না দেশটি। তবে দেউলিয়াত্ব এড়াতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ পেতে পাকিস্তান গত জুলাইয়ে চুক্তি করেছে।

আইএমএফ যেখানে বাজারভিত্তিক ডলারের মূল্য নির্ধারণের বিষয়টিকে অন্যতম শর্ত হিসেবে রেখেছে।

মুদ্রার মান বাড়লেও পাকিস্তানের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থার অবশ্য আমূল কোনো পরিবর্তন হয়নি। সামনের মাসগুলোয়ও দেশটির মূল্যস্ফীতি উচ্চস্তরে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জ্বালানির উচ্চশুল্ক সমন্বয় এবং মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতায় এ শঙ্কা সামনে আসছে। এখন দেশটিতে এশিয়ার সর্বোচ্চ ২৯-৩১ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি রয়েছে।

তাছাড়া আগামী জানুয়ারির শেষে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও আসন পুনর্বিন্যাসের কারণে তা আরো পিছিয়ে যেতে পারে। ফলে সাবেক প্রেসিডেন্ট ইমরান খানের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে নতুন যেকোনো আন্দোলন দেশটির বাজার পরিস্থিতি আরো খারাপ অবস্থা তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এদিকে চলতি মাসে কলম্বিয়ান পেসো ও শ্রীলংকান রুপিকে পেছনে ফেলে আফগানিস্তানের আফগানি অন্যতম শক্তিশালী মুদ্রা হিসেবে সামনে এসেছে।

দেশটির তালেবান সরকার ডলারের ব্যবসায় বিভিন্ন ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। স্থানীয় বাণিজ্যে ডলার ও পাকিস্তানি রুপির ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে দেশটি, যাতে আফগানির ব্যবহারকে অপরিহার্য করা যায়।

অনলাইন বাণিজ্যেও ডলারের বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে দেশটি। এর বিপরীতে বিদেশী সহায়তা এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধির কারণে দেশটির মুদ্রার মান বাড়ছে বলে মনে করে ব্লুমবার্গ।

কাতারের সব খবর হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে ক্লিক করুন

Loading...
,