সৌদিতে নারী কর্মী যাওয়ার হার যে কারণে কমছে

সৌদি আরবগামী নারী শ্রমিকদের বহির্গমন ছাড়পত্র নেয়ার আগে ট্রেনিং সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক হওয়া, অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ থেকে যাওয়া কর্মীদের অতিরিক্ত অভিবাসন খরচ আদায় করা এবং বিএমইটির বহির্গমন ছাড়পত্র গ্রহণের সময় কর্মকর্তাদের ‘অতিরিক্ত চাহিদা’ পূরণ করার কারণেই মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম শ্রমবান্ধব দেশটিতে সাম্প্রতিক সময়ে নারী শ্রমিক যাওয়ার হার কমে যাচ্ছে।

কাতারের সব খবর হোয়াটসঅ্যাপে পেতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন

সৌদি আরবে নারী জনশক্তি প্রেরণের সাথে সম্পৃক্ত একাধিক রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক নারী কর্মী যাওয়ার হার কমার বিষয়ে মতামত দেয়ার সময় এভাবেই তাদের অভিব্যক্তি তুলে ধরেন।

একইসাথে তারা বলছেন, প্রতিযোগিতামূলক শ্রমবাজারে অভিবাসন ব্যয় না কমাতে পারলে দিন দিন সৌদি আরবে নারী শ্রমিক যাওয়ার হার আরো কমে যাবে।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিসংখ্যান ঘেটে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত এই তিন মাসে মোট ২৪ হাজার ৯২২ নারী শ্রমিক সৌদি আরব, ওমান, জর্ডান, ইতালি, জাপান, ইউকে, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছেন।

এর মধ্যে সৌদি আরবে ৩ মাসে গিয়েছেন ১৯ হাজার ১৭৬ জন নারী। এরপরের অবস্থানে আছে ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার ও কুয়েত।

 কাতারে চাকরি খুঁজছেন? এখানে ক্লিক করুন

এরমধ্যে সৌদি আরবে গত জানুয়ারি মাসে ৫ হাজার ৩৬৭ জন নারী পাড়ি জমান। ফেব্রুয়ারি মাসে এটি বেড়ে ৭ হাজার ২৭৫ জনে দাঁড়িয়েছে।

কিন্তু মার্চ মাসে সেটি কমে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৪৮৪ জনে। এক মাসের ব্যবধানে প্রায় এক হাজারের মতো শ্রমিক দেশটিতে কম যায় বলে পরিসংখ্যানে উল্লেখ রয়েছে।

গতকাল শনিবার রাত ৮টা ৭ মিনিটে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো: শহিদুল আলমের সাথে এ প্রসঙ্গে জানতে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি টেলিফোন ধরেননি।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. আহমদ মুনিরুছ সালেহিনকে এ বিষয়ে জানতে হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হয়। তবে রাত সাড়ে ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

গতকাল রাত পৌনে ৮টার দিকে ঢাকার একজন প্রতিষ্ঠিত জনশক্তি ব্যবসায়ী নিজের পরিচয় গোপন করে বলেন, সৌদি আরবে নারী শ্রমিক যাওয়া এক মাসের ব্যবধানে যেটুকু কমেছে সামনের মাসে সেটি আরো কমবে।

জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেকগুলো কারণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়া ও আফ্রিকার কয়েকটি দেশ সৌদি আরবে নারী কর্মী পাঠানো শুরু করেছে। আগে এই দেশগুলো থেকে কর্মী যাওয়া বন্ধ ছিল।

এসব দেশ নতুন করে সৌদি আরবে নারী কর্মী প্রেরণ করায় তাদের সময় যেমন কম লাগছে তেমনি অভিবাসন খরচও বাংলাদেশের তুলনায় কম লাগছে। ওই ব্যবসায়ী উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘আমাদের দেশ থেকে একজন নারী কর্মী পাঠালে সৌদি নিয়োগকর্তার খরচ হচ্ছে ২৮০০-২৯০০ ডলার।

অপরদিকে নতুন ওপেন হওয়া দেশগুলো থেকে সৌদি আরবে কর্মী আনতে নিয়োগকারীর খরচ হচ্ছে ১৫০০ থেকে ১৬০০ ডলার। অভিবাসন ব্যয় কম হওয়ার পাশাপাশি তাদের কর্মী যেতে ১৫-২০ দিন অথবা সর্বোচ্চ এক মাস সময় লাগছে।

অপরদিকে আমাদের দেশ থেকে একজন নারী কর্মী যেতে হলে তাকে প্রথমে দুই মাসের ট্রেনিং নিতে হচ্ছে। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নেয়াসহ সবমিলিয়ে ৩ মাস সময় লেগে যাচ্ছে । তাহলে সৌদি আরব আমাদের দেশ থেকে কর্মী নেবে নাকি ওই সব দেশ থেকে নারী শ্রমিক নেবে?

এসব কারণে আমাদের নারী শ্রমিক যাওয়ার হার দিন দিন আরো কমবে বলে দাবি করেন তিনি। তা ছাড়াও আমাদের দেশ থেকে যেসব নারী শ্রমিক যাচ্ছে তাদের মধ্যে কারো কারো ফিজিক্যাল কন্ডিশন ও ওয়ার্কিং ক্যাপাসিটি কম রয়েছে বলে নিয়োগকর্তারা অভিযোগ করছেন।

যার কারণে তার প্রতিষ্ঠানের পাঠানো নারী শ্রমিকদের মধ্যে জরিমানা দিয়েই ১৮ জনকে দেশে ফেরত আনতে হয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ট্রেনিং সার্টিফিকেট ছাড়া বিএমইটি থেকে ক্লিয়ারেন্স করানো যায় সেক্ষেত্রে অভিবাসন খরচ বেড়ে যায়।

ট্রেনিং করালে বিএমইটিতে সব মিলিয়ে খরচ হয় ৫ হাজার টাকার মতো। কিন্তু ট্রেনিং সার্টিফিকেট ছাড়া কোনো কর্মীর বহির্গমন নিতে গেলেই তখন মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে কর্মকর্তাদের খুশি করাতে আন্ডারহ্যান্ডেলিংয়ের মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হয়।

সেটি স্বাভাবিক খরচের চেয়ে ৪-৫ গুণ। এসব খরচ না কমালে নারী কর্মী যাওয়ার হার আরো কমবে। অন্য দেশ থেকে যারা যাচ্ছেন শুনেছি তাদের নাকি ট্রেনিং সার্টিফিকেট লাগে না। বর্তমানে সৌদি আরবে ৫ শতাধিক রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক নারী কর্মী প্রেরণের সাথে সম্পৃক্ত।

এসব এজেন্সির মালিকদের বেশিরভাগ তুচ্ছ ঘটনায় বিএমইটিতে হওয়া নারী কর্মীদের দেয়া অভিযোগের প্রেক্ষিতে হয়রানির পাশাপাশি জরিমানাও গুনতে হচ্ছে।

সেক্ষেত্রে একজন নারী কর্মীর বিপরীতে নিয়োগকারীর দেয়া ২৮০০ ডলার ফেরত দেয়ার পাশাপাশি ওই নারী কর্মীকে দেশে ফিরিয়ে আনতে বিমান টিকিটের টাকা তাদের জরিমানা হিসাবে গুনতে হচ্ছে বলে এজেন্সি মালিকদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আরো পড়ুন

নয়াদিগন্ত

Loading...
,