আরো ৮৭ রিক্রুটিং এজেন্সির অনুমোদন

বিদেশে জনশক্তি প্রেরণের কার্যক্রম চাঙ্গা রাখতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় প্রতি বছর রিক্রুটিং এজেন্সির নামে নতুন লাইসেন্স অনুমোদন দিচ্ছে।

তারই ধারাবাহিকতায় একাধিক শর্তসাপেক্ষে সম্প্রতি আরো ৮৭টি রিক্রুটিং এজেন্ট লাইসেন্স চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।

অনুমোদন পাওয়া লাইসেন্স মালিকদের ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে লাইসেন্স ফি ও জামানতের অর্থ পে-অর্ডারের মাধ্যমে বিএমইটির মহাপরিচালকের অনুকূলে জমা দিতে হবে।

কোনো কারণে জমা করতে ব্যর্থ হলে কোনো নোটিশ ছাড়াই লাইসেন্সের অনুমোদন বাতিল বলে গণ্য হবে বলে মন্ত্রণালয়ের দেয়া শর্তে উল্লেখ করা হয়েছে।

সেই হিসাবে গতকাল সোমবার পর্যন্ত কতগুলো রিক্রুটিং এজেন্সি শর্ত মোতাবেক পে-অর্ডার জমা দিয়েছে তা অবশ্য জানা সম্ভব হয়নি।

অভিযোগ রয়েছে, বিএমইটিতে রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্সের আবেদন করার সময় অধিকাংশ আবেদনকারী ব্যুরোর লাইসেন্স শাখায় নানাভাবে হয়রানির শিকার হন।

অনেক ভোগান্তির পরই তাদের বিএমইটি থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়। এ প্রসঙ্গে গতকাল সোমবার জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো: শহীদুল আলম এর বক্তব্য নিতে যোগাযোগ করা হয়।

কিন্তু তিনি টেলিফোন ধরেননি।

রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্সের অনুমোদন পাওয়া একাধিক মালিক নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ‘যারা নতুন লাইসেন্স পাওয়ার আবেদন করছেন তারাই জানেন, বিএমইটি থেকে লাইসেন্সের ক্লিয়ারেন্স পেতে কত ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হয়।

ফুটাব দেয়া থেকে শুরু করে মহাপরিচালকের দফতর পর্যন্ত যেতে পদে পদে শুধু ভোগন্তি আর ভোগান্তি। তাদের দাবি, সব কাগজপত্র ঠিক থাকার পরও বলা হয়, ‘এই কাগজ নাই, ওই কাগজ নাই। নানা অজুহাত।

আবার কর্মকর্তার মন জোগাতে পারলে তখন আর কোনো সমস্যা নাই। দ্রুত সব ওকে হয়ে যায়।’ এই হলো লাইসেন্স শাখার অবস্থা।

এক প্রশ্নের উত্তরে তারা বলছেন, লাইসেন্স শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কথা না শুনলে ওই আবেদনের ফাইল মাসের পর মাস চাপা পড়ে থাকারও নজির আছে।

তাদের মতে, জনশক্তি প্রেরণে গতি আনতে হলে বিএমইটি থেকে এসব হয়রানি ও অনিয়ম তদন্ত করে দ্রুত দূর করতে হবে।

একই সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারীদের কর্মকাণ্ড মনিটরিংয়ের আওতায় আনতে তখন কিছুটা স্বস্তি ফিরবে।

গত ১৬ এপ্রিল প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের (মনিটরিং শাখা) উপ-সচিব মুফিদুল আলম স্বাক্ষরিত নতুন রিক্রুটিং লাইসেন্স মঞ্জুরির আবেদন অনুমোদন করা প্রসঙ্গে বলা হয়, ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের নতুন রিক্রুটিং লাইসেন্স বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন ২০১৩ এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী (রিক্রুটিং এজেন্ট লাইসেন্স ও আচরণ, বিধিমালা ২০১৯ অনুযায়ী শর্ত সাপেক্ষে সরকার কর্তৃক অনুমোদন দিয়েছে।

অনুমোদন দেয়া লাইসেন্সগুলোর মধ্যে কোনোটি ব্যক্তি মালিকানাধীন, কোনোটি অংশীদারি আবার কোনোটি লিমিটেড কোম্পানির নামে দেয়া হয়েছে।

লাইসেন্স দেয়ার শর্তে বলা হয়েছে, রিক্রুটিং এজেন্টকে আইন ও বিধি অনুযায়ী আচরণ ও কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

লাইসেন্সের প্রত্যেক মেয়াদে (৩ বছর) রিক্রুটিং এজেন্টকে ন্যূনতম ২০০ জন কর্মী বিদেশে প্রেরণ করতে হবে। নির্বাচিত কর্মীদের প্রেরণের পূর্বে অবশ্যই প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে।

অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অংশীদারকে রিক্রুটিং এজেন্সির আচরণ বিধিমালা ও প্রাসঙ্গিক বিষয়ে ২ কার্যদিবসের প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করতে হবে।

শর্তপূরণ সাপেক্ষে তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুকূলে নতুন রিক্রুটিং লাইসেন্স ইস্যু করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার জন্য বিএমইটির মহাপরিচালককে নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে।

গতকাল নতুন লাইসেন্স দেয়া প্রসঙ্গে জানতে বায়রার সেক্রেটারি জেনারেল আলী হায়দার চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি একটি মিটিংয়ে রয়েছেন বলে জানান।

সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমানের সাথে এ প্রসঙ্গে জানতে যোগাযোগ করা হলে তিনি ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়ে জানান, আপনি পরে কল করতে পারেন।

তবে বায়রার একাধিক সদস্য বলেন, যেভাবে নতুন লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে সেভাবে ওই এজেন্সিগুলোর নামে কিন্তু বিদেশে লোক যাচ্ছে না?

এজেন্সিগুলো বাৎসরিক নবায়নের সময় শর্ত মোতাবেক লোক পাঠাতে পেরেছে কি না তা মন্ত্রণালয় থেকে কঠোরভাবে মনিটরিং করা উচিত। তাহলে এই সেক্টরে ফিরে আসতে পারে স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলা।

উল্লেখ্য, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী মোট রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্সের সংখ্যা রয়েছে ২ হাজার ১৪২টি।

এর মধ্যে বিদেশগামীদের সাথে অনিয়ম দুর্নীতি ও জাল জালিয়াতি করার অভিযোগে ২৬৯টি এজেন্সির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। অপর দিকে ৫১টি এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।

আরো পড়ুন

নয়াদিগন্ত

Loading...
,