ঢাকা এয়ারপোর্টে প্রবাসীদের কাছে অতিরিক্ত ভাড়া দাবি: দেখার কেউ নেই

কুয়েত থেকে ঢাকা এসেছেন হোসেন আলী। সোমবার সকালে শাহ্‌জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান তিনি। নিজ জেলা সাতক্ষীরায় যাবেন।

এজন্য আগে নবীনগর গিয়ে সেখান থেকে বাসে উঠবেন। বিমানবন্দরে পার্কিং করা একটি প্রাইভেটকারের সঙ্গে দরদাম করলেন। গাড়িচালক নবীনগর যেতে ভাড়া হাঁকালেন ২ হাজার টাকা।

কাতারে চাকরি খুঁজছেন? এখানে ক্লিক করুন

হোসেন আলী বলেন, এয়ারপোর্ট থেকে নবীনগরের ভাড়া আছে সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকা। কিন্তু এখানে সব গাড়ি বেশি ভাড়া চাইছে। ২ হাজার টাকার কমে কেউ যেতে চাইছে না। ঢাকায় পা দেয়ার পর প্রথম গাড়িতে উঠবো তাতেই বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছে।

আমাদের ঘাম ঝরা টাকা এভাবে খরচ করতে কষ্ট লাগে। তাও উপায় না পেয়ে বাধ্য হচ্ছি। বাসায় তো যাওয়া লাগবে।

কাতারের সব খবর হোয়াটসঅ্যাপে পেতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন

এয়ারপোর্ট বিমানবন্দর থেকে টঙ্গী যাবেন জহিরুদ্দিন। গাড়ির জন্য ৩০ মিনিট দাঁড়িয়ে আছেন। দরদাম করে একটি প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করলেন ১ হাজার টাকায়।

তিনি বলেন, এখান থেকে টঙ্গী মাত্র ৭ কিলোমিটার রাস্তা। অথচ ১ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে যাওয়া লাগছে। ৪০০-৫০০ টাকার ভাড়া ৬০০-৭০০ হতে পারতো। কিন্তু ১ হাজার টাকার নিচে কেউ যাচ্ছে না।

সোমবার সকালের বিমানে মতিন মিয়া ঢাকা এসেছেন মালয়েশিয়া থেকে। যাবেন আবদুল্লাহপুর। এয়ারপোর্ট টার্মিনাল থেকে বের হয়ে গাড়ির ভাড়া দরদাম করেছেন। পরে প্রাইভেটকারে ৬০০ টাকায় উঠলেন তিনি।

বলেন, এখান থেকে বাসে গেলে ১৫ টাকা লাগে। কিন্তু সঙ্গে ভারি ব্যাগ আছে। এগুলো নিয়ে বাসে যাওয়া যাবে না। বাধ্য হয়ে গাড়ি নেয়া লাগলো। এই সুযোগটা নিচ্ছে গাড়ি চালকরা। বেশি ভাড়া নিচ্ছে আমাদের থেকে।

তার মতো একই অভিযোগ কাওসার মিয়ার। দোহা থেকে এসেছেন তিনি। যাবেন কেরানীগঞ্জ। প্রাইভেটকার চালক ২৫০০ টাকা ভাড়া চায়।

কাওসার বলেন, এখান থেকে কেরানীগঞ্জে কোনোভাবেই ২৫০০ টাকা ভাড়া না। ১৮০০ টাকা বলছি তাও গাড়ি পাচ্ছি না। জেদ্দা থেকে এসেছেন নাজির মিয়া।

তিনি বলেন, পুরাতন একটা প্রাইভেট নিলাম খিলগাঁও পর্যন্ত ১৫০০ টাকা ভাড়া। ভাড়াটা বেশি। অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি তাই নিয়ে নিলাম।

সরজমিন শাহ্‌জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ঘুরে ও সূত্রে জানা গেছে, বিমানবন্দরে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা ইজারা নিয়েছে পলাশ ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠান।

মাঠে একটি গাড়ি পার্কিংয়ে জন্য ৮০ টাকা নেয় তারা। এছাড়া বহুতল কার পার্কিংয়ে প্রতিটি গাড়ির জন্য নেয়া হয় ১০০ টাকা।

এসব গাড়ি ৩ ঘণ্টার জন্য রাখা যায় পার্কিংয়ে। যাত্রীদের নিয়ে আসা কিংবা ব্যক্তিগত এসব গাড়ির বাইরেও তাদের অধীনে প্রতিদিন ৪৫০-৫০০টি প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন পরিবহন এয়ারপোর্ট এলাকায় গাড়ি পার্কিং সুবিধা পায়।

যারা নিয়মিত এয়ারপোর্ট থেকে বিভিন্ন এলাকায় ভাড়ায় চলে। নিয়মিত ভাড়ায় চলা এসব গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য ২৫০ টাকা করে নেয় ইজারাদার প্রতিষ্ঠানটি। এতে করে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত পার্কিং করে রাখার সুবিধা দেয়া হয়।

এয়ারপোর্ট এলাকায় ভাড়ায় চালিত এসব গাড়ি চালকরা নিজেদের ইচ্ছামতো ভাড়া হাঁকাচ্ছে। যাত্রীরা অভিযোগ করছেন, এসব গাড়িচালক প্রবাসী যাত্রীদের থেকে তুলনামূলক বেশি ভাড়া নিচ্ছেন। দেশে ফেরার সময় প্রবাসীরা পরিবার-পরিজনের জন্য নিয়ে আসেন নানান উপহার।

এতে তাদের লাগেজ কিংবা ব্যাগগুলো ভারী হয়ে যায়। কিন্তু গাড়ি পার্কিং পর্যন্ত ট্রলি ব্যবহার করতে না পারায় এসব ভারী ব্যাগ হাতে কিংবা কাঁধে নিয়েই বহন করতে হয়।

এতে বিমানবন্দরে নেমেই মালপত্র নিয়ে বিপাকে পড়তে হয় প্রবাসীদের। তাই বাধ্য হয়েই এয়ারপোর্টের ভেতরে পার্কিং করা গাড়ি ভাড়া নিয়ে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে।

তবে এয়ারপোর্ট থেকে নিয়মিত ভাড়ায় চলা এসব গাড়ির ভাড়া নির্ধারণ করা নেই। তাই যে যার যার মর্জিমতো বেশি ভাড়া নিচ্ছেন। এদিকে যারা এয়ারপোর্টে নিয়মিত গাড়ি ভাড়ায় চালান তারা বলছেন, এয়ারপোর্ট এলাকায় গাড়ি চালাতে খরচও তাদের বেশি হয়।

যাত্রী না পেয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। এছাড়া যাত্রীদের কাছে ভারী বস্তা থাকায় গাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এজন্য তাদের ভাড়াও সেভাবে সমন্বয় করতে হয়।

এয়ারপোর্টে মাইক্রোবাস নিয়ে নিয়মিত ভাড়ায় চলেন পাপ্পু হোসেন। তিনি নিজেই গাড়ি কিনে পাঁচ বছর ধরে এয়ারপোর্টে ভাড়ায় চালান।

পাপ্পু বলেন, পার্কিংয়ের জন্য এখানে ২৫০ টাকা দেয়া লাগে। যে গাড়িতে যাত্রী এনে দেয় তাকেও ২০০-৩০০ টাকা দেয়া লাগে। গাড়ি ধোয়া- মোছার খরচ আছে। সব সময় যাত্রী পাওয়া যায় না। সারা দিন এখানে থাকলে আমাদের চা-নাস্তার খরচও ২০০ টাকার মতো।

আমাদের খরচ যেমন, তেমন ভাড়া চাই। তাছাড়া গাড়ির অপচয় আছে। প্রতিদিন যদি ৪-৫ হাজার টাকা ক্যাশ না থাকে তাহলে আমাদের তেমন লাভ হয় না। ফারুক হোসেন দীর্ঘদিন ধরে এয়ারপোর্টে প্রাইভেটকার ভাড়ায় চালান।

তিনি বলেন, দেখা যায় আমরা বেশি ভাড়া নেই। কিন্তু আমাদের তেমন লাভ হয় না। মাসে ২০-২৫ হাজার টাকা আয় হয়।

একদিনে ৪-৫ হাজার টাকা ক্যাশ হলে সেখান থেকে গাড়ির মালিককে দেয়া লাগে। আমাদের খাওয়া-খরচ আছে। এসব বাদ দিলে বেশি টাকা থাকে না। আবার প্রতিদিন এক সমান আয়ও হয় না।

আরো পড়ুন

MZamin

Loading...
,