শিশুদের গোপনীয়তা ভঙ্গে টিকটককে ১৬ কোটি ডলার জরিমানা

একের পর এক দেশে নিষেধাজ্ঞার পর এবার যুক্তরাজ্যে আর্থিক জরিমানার মুখে পড়তে হলো টিকটককে। চীনের জনপ্রিয় শর্ট ভিডিও প্ল্যাটফর্মকে মোটা অঙ্কের অর্থ জরিমানা করেছে যুক্তরাজ্যের তথ্য কমিশন।

মূলত টিকটকের বিরুদ্ধে শিশুদের গোপনীয়তা ভঙ্গের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এই জরিমানা করা হয়।

কাতারের সব খবর হোয়াটসঅ্যাপে পেতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন

বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যের তথ্য কমিশনারের কার্যালয় অনুমান করেছে, ২০২০ সালে টিকটক ১৩ বছরের কম বয়সী ১০ লাখেরও বেশি শিশুকে প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছে, যার ফলে তাদের নিজেদের নিয়মই ভঙ্গ হয়েছে।

দেশটির তথ্য কমিশনার জন এডওয়ার্ডস বলেন, ‘শিশুরা বাস্তব জগতের মতো ডিজিটাল জগতেও নিরাপদ কি না, তা নিশ্চিত করার জন্য আইন রয়েছে। টিকটক সেই আইনগুলো মানেনি।’

টিকটকের একজন মুখপাত্র আইসিওর সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত জানিয়ে সিএনএনকে বলেন, ‘প্ল্যাটফর্ম থেকে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের দূরে রাখতে টিকটক অনেক কাজ করে থাকে।’

এদিকে সরকারি কর্মকর্তাদের ডিভাইসে টিকটক বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া।

শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মটির নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে মঙ্গলবার (৪ মার্চ) টিকটকে ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয় অস্ট্রেলিয়ার সরকার।

সিএনএনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার পরামর্শ মোতাবেক ক্যানবেরার অ্যাটর্নি জেনারেল মার্ক ড্রেফুস নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘পদক্ষেপটি যত দ্রুত সম্ভব কার্যকর করা হবে।’

অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত টিকটকের চীনা মহাপরিচালক লি হান্টার এই সিদ্ধান্তে হতাশা জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের মতে, সিদ্ধান্তটি রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত।’

টিকটকের তথ্যমতে, চলতি বছরের শুরুতে অস্ট্রেলিয়ায় ১৮ বা তার বেশি বয়সী টিকটক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৮৩ লাখ।

অ্যাপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শও জি চিউ বলেন, ‘চীনা সরকার কখনোই তাদের কাছে ব্যবহারকারীদের তথ্য চায়নি। ভবিষ্যতে কখনো চাইলেও তারা দেবে না।’

সাম্প্রতিক সময়ে নিরাপত্তা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে সরকারি ডিভাইসে নিষিদ্ধ করা হয় টিকটক।

একই কারণ দেখিয়ে গত ৩১ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মকর্তাদের অফিসের ডিভাইসে টিকটক নিষিদ্ধ করেছে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো।

সিএনএনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ন্যাটোর দুজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ন্যাটোর দেওয়া ডিভাইসে আনুষ্ঠানিকভাবে টিকটক ডাউনলোড নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’

প্রযুক্তিগত বিধিনিষেধের কারণে আগেও ন্যাটোর ডিভাইসে টিকটক ব্যবহারে করা যেত না। তবে এবার আনুষ্ঠানিকভাবেই এই অ্যাপ নিষিদ্ধ করা হলো।

ন্যাটোর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সিএনএনকে জানান, ন্যাটোর সাইবার নিরাপত্তা সবার আগে। টিকটক ন্যাটো ডিভাইসে ব্যবহারযোগ্য নয়।

নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কারণে চীনের এই জনপ্রিয় শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মটিকে নিষিদ্ধ করেছে ন্যাটো।

এর আগে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীদের কাছে থাকা সরকারি ফোনে টিকটক অ্যাপ নিষিদ্ধ করা হয়। নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে ১৬ মার্চ এই সিদ্ধান্ত নেয় যুক্তরাজ্য সরকার।

এদিকে টিকটকের চীনের মালিকানা বিক্রি করতে বাইটড্যান্সের ওপর চাপ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি ইউরোপের আরেকটি দেশ বেলজিয়ামের সরকারি ফোনেও নিষিদ্ধ হয় টিকটক।

বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্রিটিশ সরকার আশঙ্কা করছে, টিকটকের মাধ্যমে সরকারি ফোনে থাকা সংবেদনশীল তথ্য চীন সরকারের হাতে চলে যেতে পারে।

যুক্তরাজ্যের ক্যাবিনেট মন্ত্রী অলিভার ডাউডেন বলেন, টিকটক অ্যাপে জারি করা এই নিষেধাজ্ঞা ‘সতর্কতামূলক’ পদক্ষেপ হিসেবে নেওয়া হয়েছে এবং তা অবিলম্বে কার্যকর হবে।

এদিকে ব্যবহারকারীদের তথ্য চীন সরকারের কাছে হস্তান্তর করার অভিযোগ অস্বীকার করেছে টিকটক।

টিকটকের গভর্নমেন্ট রিলেশনস অ্যান্ড পাবলিক পলিসি ইন ইউরোপের ভাইস প্রেসিডেন্ট থিও বার্ট্রাম বলেন, ‘মূলত ভূরাজনীতিকে প্রাধান্য দিয়েই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে আমরা মনে করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভয় নয়, বাস্তবতার ভিত্তিতে আমরা তাদের সবকিছু বিবেচনা করতে বলেছি।’

আরো পড়ুন

আজকের পত্রিকা

Loading...
,