শীর্ষ ৫ ব্যাংকের চারটিতেই রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে

জনশক্তি রফতানিতে রেকর্ড হলেও রেমিট্যান্স আয়ের ক্ষেত্রে ২০২২ সাল একদমই ভালো কাটেনি বাংলাদেশের। আগের বছরের তুলনায় প্রবাসী আয় কমেছে ৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

কাতারে চাকরি খুঁজছেন? এখানে ক্লিক করুন

দেশের রেমিট্যান্স আহরণকারী শীর্ষ পাঁচ ব্যাংকের চারটিরই এ সময়ে বড় পতন হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে রেমিট্যান্স আহরণকারী ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রবাহ কমেছে ২৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় আহরণকারী ব্যাংক ডাচ্-বাংলারও রেমিট্যান্স প্রবাহ ২৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ কমেছে। ৩২ দশমিক ৮৬ শতাংশ রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের।

কাতারের সব খবর হোয়াটসঅ্যাপে পেতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন

একই সময়ে সোনালী ব্যাংকেরও আহরণের হার কমেছে ২৩ দশমিক ৭১ শতাংশ। তবে রেমিট্যান্স আহরণে বড় প্রবৃদ্ধি হওয়ায় শীর্ষ পাঁচে উঠে এসেছে দ্য সিটি ব্যাংক লিমিটেডের নাম। গত বছর বেসরকারি খাতের ব্যাংকটির রেমিট্যান্স ৮৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ বেড়েছে।

রেমিট্যান্স আহরণে ২০২২ সালে (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) সাফল্য দেখিয়েছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট, পূবালী, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ও সাউথইস্ট ব্যাংক।

একই সঙ্গে উঠে এসেছে প্রবাসী আয় আহরণের শীর্ষ ১০ ব্যাংকের কাতারে। ৩৯১ শতাংশের বেশি প্রবাহ বেড়েছে ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের।

অন্যদিকে গত বছর রেমিট্যান্স প্রবাহ ১৬ শতাংশ কমে যাওয়ায় নিজেদের অবস্থান হারিয়েছে ব্যাংক এশিয়া। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

এককভাবে দেশের মোট রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের নিয়ন্ত্রণ ছিল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের হাতে। তবে গত বছর ব্যাংকটির এ হিস্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমেছে।

এ সময়ে দেশের সবচেয়ে বড় এ ব্যাংকটির মাধ্যমে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ৪৬৫ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। যদিও এর আগে ২০২১ সালে ব্যাংকটির মাধ্যমে প্রবাসীরা ৬১০ কোটি ৪২ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন।

এ হিসাবে গত বছর ইসলামী ব্যাংকের রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে ২৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। বড় পতনের কারণে ব্যাংকটির প্রবাসী আয় আহরণের হিস্যা নেমে এসেছে ২২ শতাংশে।

বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ের সবচেয়ে বড় বাজার সৌদি আরব। যদিও গত বছর মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ প্রায় ২১ শতাংশ কমেছে।

আর মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে প্রবাসী বাংলাদেশীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের বড় অংশই আসে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। তাতে দেখা যায়, ওই অঞ্চলের প্রায় সব দেশ থেকেই প্রবাসী আয় আসা কমেছে।

এক-তৃতীয়াংশ রেমিট্যান্স আহরণ কমে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বসবাসকারী প্রবাসীরা দেশে আগের চেয়ে কম অর্থ পাঠাচ্ছেন। এর নেতিবাচক প্রভাব ইসলামী ব্যাংকের রেমিট্যান্স প্রবাহের ওপর পড়েছে।’

‘তাছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রবাসীদের পাঠানো ডলারের সর্বোচ্চ দর বেঁধে দেয়ার পর দেশের অনেক ব্যাংক সে নির্দেশনা পুরোপুরি মানেনি। বেশি দর দিয়েও অনেক ব্যাংক মানি এক্সচেঞ্জগুলো থেকে রেমিট্যান্স কিনেছে।’

‘আমাদের ব্যাংকের রেমিট্যান্স প্রবাহ কিছুটা কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে এটিরও ভূমিকা আছে। তবে সম্প্রতি সেই প্রবাহ আবারো বাড়তে শুরু করেছে। আশা করছি, চলতি বছর আমাদের রেমিট্যান্স প্রবাহ অনেক বাড়বে।’

ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে ২০২১ সালে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৫৪ কোটি ৬৬ লাখ ডলার। গত বছর বেসরকারি খাতের ব্যাংকটির মাধ্যমে ১৯৪ কোটি ১৬ লাখ ডলার এসেছে।

এ হিসাবে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে ২৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ। প্রবাসী আয় আহরণের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের পরিস্থিতি আরো খারাপ। ব্যাংকটির রেমিট্যান্স প্রবাহ ৩২ দশমিক ৮৬ শতাংশ কমে গেছে।

২০২১ সালে অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে ২০৯ কোটি ৩৩ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। গত বছর তা ১৪০ কোটি ৫৩ লাখ ডলারে নেমে আসে। একই সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকেরও রেমিট্যান্স প্রবাহ ২৩ দশমিক ৭১ শতাংশ কমেছে।

শীর্ষ ব্যাংকগুলোর রেমিট্যান্স আহরণে ব্যর্থতার মধ্যেও এক্ষেত্রে বেশ সফল দ্য সিটি ব্যাংক লিমিটেড। আগের বছরের তুলনায় ২০২২ সালে বেসরকারি খাতের ব্যাংকটির প্রবাসী আয় প্রবাহ ৮৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ বেড়েছে।

২০২১ সালে সিটি ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ৪৭ কোটি ডলার। গত বছর ব্যাংকটির মাধ্যমে প্রবাসীরা ৮৬ কোটি ৮৭ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন।

রেমিট্যান্সে উচ্চপ্রবৃদ্ধি সিটি ব্যাংকের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানোর ফল বলে মন্তব্য করেন ব্যাংকটির শীর্ষ নির্বাহী মাসরুর আরেফিন। তিনি বলেন, ‘সিটি ব্যাংক রেমিট্যান্সের ৩০-৩৫ হাজার লেনদেন একদিনেই সম্পন্ন করতে পারে। প্রযুক্তিগত উত্কর্ষের কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে।’

শ্বের বৃহৎ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলো সিটি ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠাতে স্বচ্ছন্দ বোধ করে। সর্বাধুনিক সেবার কারণে প্রবাসী পরিবারগুলোও আমাদের ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স সংগ্রহে আগ্রহী হচ্ছে।’

মাসরুর আরেফিন বলেন, ‘২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্টের মধ্যেই সিটি ব্যাংক ৫৭ কোটি ডলার রেমিট্যান্স দেশে এনেছিল।’

‘এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের দর বেঁধে দেয়ায় কিছুটা ছন্দপতন হয়েছে। তবে এখন আবারো সিটি ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসার হার বাড়ছে। আশা করছি, চলতি বছর আমরা ১ বিলিয়ন ডলার প্রবাসী আয় আনতে পারব।’

বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক মিউচুয়াল ট্রাস্টের রেমিট্যান্স প্রবাহ গত বছর প্রায় ৬৭ শতাংশ বেড়েছে। ব্যাংকটি ২০২২ সালে ৮৫ কোটি ডলার প্রবাসী আয় দেশে এনেছে। ২০২১ সালে ব্যাংকটির মাধ্যমে দেশে এসেছিল ৫১ কোটি ডলার।

রেমিট্যান্সে বড় প্রবৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘রেমিট্যান্স আনার জন্য আমরা বিশ্বের বৃহৎ ফিনটেক কোম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তি করেছি। এ কারণে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের প্রবাহ বেড়েছে।’

‘মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে আমরা সেই অর্থ তাত্ক্ষণিক গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। সেবার মান ভালো হওয়ার কারণে আমাদের রেমিট্যান্স প্রবাহে বড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে।’

আরো পড়ুন

Loading...
,