সৌদি থেকে ফিরেই সোজা জঙ্গি ক্যাম্পে

সৌদি আরবে একটি মসজিদে ইমামতি করতেন যুবক আবদুর রব (২৮)। সেখানে থাকা অবস্থায় ভার্চুয়াল বিভিন্ন মাধ্যমে জিহাদি পোস্ট ও ভিডিও দেখে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন।

পরে অনলাইনে রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের একটি ভিডিও কমেন্টের সূত্র ধরে পরিচয় হয় আরও কিছু তরুণের সঙ্গে। কয়েকজনকে নিয়ে নিজেই গড়ে তোলেন একটি নেটওয়ার্ক।

কাতারের সব খবর হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে ক্লিক করুন

একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সৌদি থেকে চলে আসেন দেশে। বিমানবন্দর থেকে বাড়িতে না গিয়ে সরাসরি চলে যান জঙ্গি ক্যাম্পে।

সেই জঙ্গি ক্যাম্পে আল-কায়েদার মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের সশস্ত্র জিহাদ করার পরিকল্পনা নিয়েই সংঘটিত হচ্ছিলেন তারা।

অবশ্য কোনো অঘটন ঘটানোর আগেই রবিবার রাতে রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, চট্টগ্রাম ও টেকনাফ থেকে দলনেতা আবদুর রবসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগ (সিটিটিসি)।

কাতারে চাকরি খুঁজছেন? এখানে ক্লিক করুন

গ্রেপ্তার অন্যরা হচ্ছে সাকিব (২৩), শামীম হোসেন (১৮), নাদিম শেখ (১৯), আবছার (২০) ও সাইদ উদ্দিন (১৮)।

গতকাল সোমবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের সিটিটিসি প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান এসব তথ্য জানান।

এদিকে, গতকাল বিকেলে গ্রেপ্তারদের পাঁচ দিনের রিমান্ডে মঞ্জুর করেছে আদালত। অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান বলেন, ‘গ্রেপ্তার আবদুর রব সমন্বয়ক হয়ে সবাইকে অনলাইনে একত্রিত করে শরিয়াহভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন, জিহাদ, প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা করত।

পরবর্তী সময়ে তাদের অনলাইনে বিদেশে অবস্থানরত এক বাংলাদেশি সহযোগীর সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে অডিও-ভিডিও কলে যোগাযোগ স্থাপন করে।

বিদেশে অবস্থানরত ওই ব্যক্তি সবাইকে জিহাদের জন্য উদ্বুদ্ধ করে। এরপর সেই সদস্য লিবিয়ায় অবস্থানরত আরও একজন বাংলাদেশি এবং টেকনাফের স্থানীয় একজনের সঙ্গে সবার পরিচয় করিয়ে দেয়।

সম্মিলিত আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয় আবদুর রব, শামীম, সাকিব, নাদিম, সাইদসহ অন্য যারা জিহাদে রাজি তারা প্রথমে টেকনাফ গিয়ে তাদের স্থানীয় সহযোগীদের মাধ্যমে ট্রেনিং গ্রহণ করবে। পরে তারা বাংলাদেশে ইসলামি শাসন কায়েমের জন্য জিহাদ করবে।’

তিনি বলেন, ‘গত বছর নভেম্বর প্রথম সপ্তাহে সবাইকে নিজ নিজ ব্যবস্থাপনায় টেকনাফে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। সে অনুসারে গত ১৬ নভেম্বর সাকিব ও নাদিম টেকনাফ যায়।

স্থানীয় সহযোগী ও গ্রেপ্তার আবছার তাদের টেকনাফে ভাড়া বাসায় থাকার ব্যবস্থা করে দেয়। গ্রেপ্তার দলনেতা আবদুর রব ছুটি না পাওয়ায় যথাসময়ে দেশে আসতে ব্যর্থ হলে তারা টেকনাফের বাসায় অবস্থান করে এবং অপেক্ষা করতে থাকে।

গত ২২ নভেম্বর আবদুর রব দেশে এলে তার সহযোগী শামীম ঢাকা শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে রিসিভ করে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের অন্য সহযোগীদের ভাড়া করা বাসায় নিয়ে যায়।

সেখানে অবস্থান করে বিভিন্ন শলাপরামর্শ করে। দুদিন পর আবদুর ও শামীম মিলে সাকিবের সঙ্গে যোগাযোগ করে অন্যান্য সহযোগীর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।’

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জানায়, পাহাড়ি অঞ্চলে ট্রেনিং নিয়ে বাংলাদেশে ইসলামি শাসন কায়েমের জন্য জিহাদ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল তারা।

গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করা হয়েছে বলে জানান সিটিটিসির প্রধান।

কে এই আবদুর রব? : অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান বলেন, ‘জিহাদের সমন্বয়ক মাওলানা আবদুর রব একজন কোরআনে হাফেজ এবং কওমি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন।

২০১৯ সালের জুন মাসে সৌদি আরবে চলে যান। সেখানে একটি মসজিদের ইমাম, পাশাপাশি হেফজ শিক্ষা দিতেন। সৌদিতে অবস্থানকালে তিনি অনলাইনে বিভিন্ন জিহাদি পোস্ট ও ভিডিও দেখে জিহাদের জন্য অনুপ্রাণিত হন।

অনলাইনে রোহিঙ্গা নির্যাতনের একটি ভিডিও কমেন্টের সূত্র ধরে সাইদের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। একইভাবে শামীম, সাকিব, নাদিমসহ ও আরও কয়েকজনের সঙ্গে পরিচয় হয়।

৫ দিনের রিমান্ড : রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় করা সন্ত্রাস বিরোধ আইনের মামলায় গ্রেপ্তার ছয় জঙ্গির পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।

গতকাল তাদের আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিটিটিসির উপপরিদর্শক রফিকুল ইসলাম।

আরও খবর পড়ুন

গালফ বাংলা

Loading...
,