সৌদি শ্রমবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বিদেশীরা

বিদেশ যাওয়ার পর আকামা জটিলতায় বেকার জীবন কাটানো, কোম্পানি মালিকের বিরুদ্ধে ঠিক মতো বেতন পরিশোধ না করা, কখনো কখনো কর্মীদের তুচ্ছ ঘটনায় নির্যাতনসহ নানা অভিযোগ ওঠার পর বাংলাদেশের প্রধান শ্রমবাজার সৌদি আরবে জনশক্তি প্রেরণে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

কাতারে চাকরি খুঁজছেন? এখানে ক্লিক করুন

বলা যায় দেশটি থেকে বিদেশী শ্রমিকরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।

২০২২ সালের জানুয়ারি মাসের তুলনায় চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সৌদি আরবগামী শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। যদিও সার্বিকভাবে বিদেশগামী শ্রমিকের সংখ্যা এক লাখেরও বেশি ছাড়িয়েছে।

কাতারের সব খবর হোয়াটসঅ্যাপে পেতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন

এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম দেশ ওমানে কর্মী যাওয়ার হার তুলনামূলক বেড়েছে বলে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ব্যুরোর পরিসংখ্যান ঘেটে দেখা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সৌদি আরবে কর্মী গেছে (নারী-পুরুষ) ৪২ হাজার ৬৯৭ জন । অথচ গত বছর একই সময়ে দেশটিতে শ্রমিক গিয়েছিল ৭১ হাজার ১৭২ জন। তুলনামূলক হিসাবে দেশটিতে শ্রমিক যাওয়ার হার প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।

গত বছরের তুলনায় এ বছর ওমানে শ্রমিক যাওয়ার হার অবশ্য বেড়েছে। এই বছরের জানুয়ারি মাসে দেশটিতে শ্রমিক গেছে ১৭ হাজার ৬৯৪ জন। অপর দিকে ২০২২ সালের একই সময়ে শ্রমিক গিয়েছিল ১৪ হাজার ৫১৫ জন।

বাংলাদেশের বৃহৎ শ্রমবাজার সৌদি আরবে শ্রমিক যাওয়ার গতি কমার পেছনে কী কারণ থাকতে পারে তা জানতে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো: শহিদুল আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

তবে জনশক্তি ব্যুরোর একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, সৌদি আরবে নিয়োগকারী কোম্পানিগুলো চাহিদাপত্র দিলেও যাওয়ার পর আকামা নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। এর ফলে অনেকে কাজের বৈধতা না পেয়ে বেকার জীবন কাটাতে থাকে।

আবার যাওয়ার পর আকামা জটিলতায় অনেকে কাজ করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে কারাগারে যাচ্ছে। আবার যে নিয়োগকারী কোম্পানিতে ভিসা জটিলতা নাই সেখানকার কিছু কোম্পানিতে রয়েছে বেতনের সমস্যা। এর মধ্যে নারী-পুরুষ কর্মীদের মারধর করার ঘটনাও ঘটছে।

এসব কারণে দেশটিতে গিয়ে অনেক শ্রমিক বিপদের মধ্যে আছে। যা অনেক ক্ষেত্রে সমাধান করা সম্ভব হয় না। এর ফলে সৌদি আরবগামী শ্রমিকরা মুখ ফিরিয়ে মালয়েশিয়ামুখী হচ্ছে বলে রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকরা মনে করছেন।

জনশক্তি রফতানির সাথে জড়িতরা বলছেন, এসব ঘটনা ছাড়াও কাকরাইলের বিএমইটিতে সৌদি আরবসহ অন্যান্য দেশের একক/দ্বৈত ও গ্রুপ ভিসার শ্রমিকদের বহির্গমন ছাড়পত্র নিতে প্রতিদিন রয়েছে নানা ধরনের ভোগান্তিও।

জানা গেছে, বিদেশগামী শ্রমিকদের বহির্গমন ছাড়পত্র দেয়ার নামে জনশক্তি ব্যুরোতে পদে পদে চলছে হয়রানি আর ভোগান্তি। পাশাপাশি চলছে নীরব অনিয়ম আর ‘ঘুষ বাণিজ্যের’ ঘটনা। এ নিয়ে বারবার নানাভাবে অভিযোগ জানানো পরও কর্তৃপক্ষ অনেকটাই নির্বিকর থাকছেন বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।

শুধু তা-ই নয়, সময়মতো এজেন্সি মালিকরা বহির্গমন ছাড়পত্র নেয়ার পরও স্মার্ট কার্ড না পাওয়ার কারণে প্রায় বিদেশগামী শ্রমিকদের যাত্রা বিলম্বিত, কখনো কখনো ফ্লাইট বাতিল হওয়ারও অভিযোগ রয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে জনশক্তি কর্মসংস্থান ব্যুরোতে খোঁজ নিতে গেলে জানা যায়, প্রতিদিন বিদেশগামী শ্রমিকদের ক্লিয়ারেন্স নিতে এজেন্সি মালিকদের প্রতিনিধিরা তাদের কর্মীদের চাহিদা অনুযায়ী যথাসময়ে ফাইল জমা করেন।

নিয়ম মোতাবেক ফাইল জমা হওয়ার পর বিকেল থেকে সন্ধ্যা এমনকি রাত ৮-৯টা পর্যন্তও এসব ফাইল ক্লিয়ারেন্স দেয়া ও স্মার্ট কার্ড বিতরণের কাজ চলে। এর মধ্যে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও ওমানগামী শ্রমিকের ছাড়পত্র নেয়ার সংখ্যা বেশি বলে এজেন্সির প্রতিনিধিরা জানান।

গত সপ্তাহে রাত ৯টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এজেন্সি প্রতিনিধিরা তাদের কর্মীদের স্মার্ট কার্ড পাওয়ার জন্য হুড়োহুড়ি, চিল্লাচিল্লি করছেন। কেউ কেউ বলছেন, ‘ও ভাই, আমার কার্ডটা তো হয়ে গেছে। দয়া করে দিয়ে দেন না।’

‘তাড়াতাড়ি না দিলে আমার লোকটার ফ্লাইট মিস হয়ে যাবে আজ।’ এভাবে আকুতি করে প্রতিনিধিদের স্মার্ট কার্ড সংগ্রহ করতে দেখা যায়। আবার কেউ কেউ ক্ষুব্ধ হয়ে কপালসিবল গেট ধাক্কাতে থাকে। কেউবা টেবিলে উঠে ভেতরে হাত ঢুকিয়ে স্মার্ট দিতে বলে। এটি প্রতিদিনকার চিত্র।

এ প্রসঙ্গে উপস্থিত এজেন্সির প্রতিনিধিরা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, ‘আর বইলেন না, এই ঘটনা প্রতিদিনের। এভাবেই আমাদের যুদ্ধ করে স্মার্ট কার্ড সংগ্রহ করতে হয়।’

তাদের কারো কারো অভিযোগ- ভেতরে থাকা লোকজনের হাতে টাকা গুঁজে দিলে সাথে সাথে কার্ড চলে আসে। স্মার্ট কার্ড আগেই হয়ে গেলেও দায়িত্বরতরা ঘুষ নেয়ার জন্যই কার্ড না হওয়ার ভনিতা করতে থাকে। আমরাও উপায় না পেয়ে তাদের টাকা দিয়েই কার্ড নিয়ে যাচ্ছি।

সচেতন ব্যবসায়ীদের দাবি- বিএমইটি থেকে অনিয়ম দুর্নীতি দূর করতে না পারলে এর প্রভাব পড়বে জনশক্তি প্রেরণের ওপর।

তাই এ ব্যাপারে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিষয়টির তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই বলে জানান তারা।

আরো পড়ুন

Loading...
,