দেড় যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ ঋণ সংকটে ২৬ দরিদ্র দেশ

Loading...

দেড় যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ ঋণ সংকটে ২৬ দরিদ্র দেশ

বিশ্বের সবচেয়ে দারিদ্র্যপীড়িত ৪০ শতাংশ মানুষ বসবাস করে এমন ২৬টি দেশে নাজুক অর্থনীতিতে ঋণ সংকট বড় আকার ধারণ করেছে। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০০৬ সাল থেকে যেকোনো সময়ের তুলনায় দেশগুলো এখন বেশি ঋণগ্রস্ত।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অন্যান্য অভিঘাতের কারণে এসব দেশের অর্থনীতি আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে পদক্ষেপ প্রয়োজন। খবর রয়টার্স ও আলজাজিরা।

কাতারের সব আপডেট পেতে জয়েন করুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে

Loading...

চলতি সপ্তাহের এ প্রতিবেদন থেকে দেখা যাচ্ছে, সংকটে পড়া দেশগুলোর বেশির ভাগই সাব-সাহারান আফ্রিকায় অবস্থিত। এর মধ্যে রয়েছে ইথিওপিয়া, চাদ ও কঙ্গো। এছাড়া তালিকায় রয়েছে এশিয়ার আফগানিস্তান ও ইয়েমেন।

এসব অর্থনীতি কভিড-১৯ মহামারীর শুরুর গড়ের তুলনায় এখন বেশি দরিদ্র। অথচ বিশ্বের বাকি অংশ এরই মধ্যে কভিডজনিত অর্থনৈতিক পতন অনেকটা পুনরুদ্ধার করেছে ও প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরে গেছে।

শিগগিরই ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বৈশ্বিক দুই ঋণদাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বার্ষিক সভা।

এর আগে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি চরম দারিদ্র্য দূরীকরণে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রচেষ্টায় বড় একটি ধাক্কা হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।

একই সঙ্গে চলতি বছরে ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনে (আইডিএ) অর্থায়নের জন্য বিশ্বব্যাংকের ১০ হাজার কোটি ডলার তহবিল সংগ্রহের প্রয়োজনীয়তাকে নতুন করে তুলে ধরেছে।

আইডিএ বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোয় বিভিন্ন ধরনের প্রকল্পে অনুদান ও কম সুদে ঋণ দিয়ে থাকে।

Loading...

প্রতিবেদনে উঠে আসা দেশগুলোর বার্ষিক মাথাপিছু আয় ১ হাজার ১৪৫ ডলারের কম। তাদের জিডিপির তুলনায় ঋণের গড় অনুপাত ৭২ শতাংশ, যা ১৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

এর মধ্যে অর্ধেক দেশই ঋণ সংকট বা এর উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশ্বব্যাংক বলছে, বাজারে অর্থায়নের উৎস কমে আসায় এ ২৬ দেশ ক্রমবর্ধমানভাবে আইডিএর অনুদান ও শূন্যের কাছাকাছি সুদহারের ঋণের ওপর নির্ভর করছে।

দরিদ্রতম দেশগুলো নানা ধরনের সামাজিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবেদন অনুসারে, দুই-তৃতীয়াংশ দেশ হয় সশস্ত্র সংঘাতের মধ্যে রয়েছে অথবা প্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক ভঙ্গুরতার কারণে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি হিমশিম খাচ্ছে।

কাতারে চাকরি খুঁজছেন? এখানে দেখুন চাকরির খবর

Loading...

এমন অবস্থা স্বভাবতই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বিদেশী বিনিয়োগ। এছাড়া প্রায় সব ধরনের রফতানি ঘন ঘন চাঙ্গা ও মন্দাভাব দেখছে, যা উৎপাদন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করছে।

এমন পরিস্থিতিতে আইডিএর অর্থায়নের প্রয়োজনীয়তা বাড়ে বলে মন্তব্য করেন বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ইন্দরমিত গিল।

এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘একসময় যখন বিশ্বের বেশির ভাগ অংশই এ দরিদ্র দেশগুলোর কাছ থেকে দূরে সরে গেছে, তখন আইডিএ তাদের জীবনীশক্তি জোগান দিয়েছে।’

তিনি আরো জানান, সর্বশেষ পাঁচ বছরে আইডিএর বেশির ভাগ তহবিল ২৬ নিম্ন-আয়ের অর্থনীতিতে ব্যয় করেছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিশু শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নের পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক মানুষের কাছে বিদ্যুৎ ও নিরাপদ পানি পৌঁছে দিতে সংস্থাটি সাহায্য করেছে।

Loading...

কিন্তু অর্থনীতিকে দীর্ঘস্থায়ী জরুরি অবস্থা থেকে বের করে আনতে এবং মূল উন্নয়ন লক্ষ্য পূরণে নিম্ন আয়ের দেশগুলোয় নজিরবিহীন বিনিয়োগ প্রয়োজন, যা এসব অর্থনীতিকে গতিশীল করে তুলবে।

আইডিএ সাধারণত প্রতি তিন বছরে বিশ্বব্যাংকের অংশীদার দেশগুলোর মাধ্যমে তহবিল পুনর্গঠন করে। সংস্থাটি ২০২১ সালে রেকর্ড ৯ হাজার ৩০০ কোটি ডলার সংগ্রহ করেছিল।

বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা আগামী ৬ ডিসেম্বরের মধ্যে ১০ হাজার কোটি ডলারের বেশি তহবিলের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করে সে রেকর্ড অতিক্রমের লক্ষ্য ঠিক করেছেন।

Loading...

প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ গত এক দশকে নিম্ন-আয়ের দেশগুলোর ক্ষতি বাড়িয়ে দিয়েছে। ২০১১-২৩ সালের মধ্যে গড় ২ শতাংশ জিডিপি হারানোর সঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব ছিল, যা নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলোর গড় ক্ষতির চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি।

এ পরিস্থিতি অনেক বেশি বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তার দিকে ইঙ্গিত করছে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়া নিম্ন-আয়ের অর্থনীতির জন্য পাঁচ গুণ বেশি ব্যয়বহুল, যা প্রতি বছর জিডিপির ৩ দশমিক ৫ শতাংশের সমতুল্য।

Loading...

আরো বলা হচ্ছে, কভিড-১৯ ও এর পরবর্তী প্রভাবের কারণে এসব দেশে ২০২০-২৪ সালের মধ্যে মাথাপিছু আয় গড়ে ১৪ শতাংশ কমেছে।

উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এসব অর্থনীতিতে ২০৩০ সালের মধ্যে জিডিপি ৮ শতাংশের সমতুল্য অতিরিক্ত বার্ষিক বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে, যা গত দশকের গড় বার্ষিক বিনিয়োগের দ্বিগুণ।

বৃহত্তর সহায়তার প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও জিডিপির একটি অংশ হিসেবে নিট অফিশিয়াল উন্নয়ন সহায়তা হ্রাস পেয়েছে এসব দেশে, যা ২০২২ সালে ২১ বছরের সর্বনিম্ন ৭ শতাংশে নেমে এসেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

Loading...

বিশ্বব্যাংকের ডেপুটি চিফ ইকোনমিস্ট ও প্রসপেক্টস গ্রুপের ডিরেক্টর আয়হান কোস বলেছেন, নিম্ন আয়ের দেশগুলোকে সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে নিজেদের পদক্ষেপ নিতে হবে। এর সঙ্গে উন্নত অর্থনীতিগুলোর সাহায্যেরও প্রয়োজন হবে।

তার মতে, দেশগুলো করদাতা নিবন্ধন ও কর সংগ্রহ এবং প্রশাসন সংস্কারের মাধ্যমে কর ভিত্তি প্রসারণ করতে পারে। এছাড়া সরকারি ব্যয়কে আরো দক্ষ করার অনেক সুযোগ রয়েছে।

বণিক বার্তা

Loading...

Loading