গরিব দেশের ধনী এয়ারলাইনস ‘ইথিওপিয়ানের’ জাদু কোথায়?

Loading...

গরিব দেশের ধনী এয়ারলাইনস ‘ইথিওপিয়ানের’ জাদু কোথায়?

শতভাগ পেশাদারিত্বের সঙ্গে, দক্ষ লোকজন নিয়ে এয়ারলাইনসটি পরিচালিত হয়ে আসছে। এটিই এর সাফল্যের মূল কারণ, বলেন এয়ারলাইনসটির এক কর্মকর্তা।

কাতারে বিভিন্ন কোম্পানিতে নতুন চাকরির খবর

আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়ার রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইনস ইথিওপিয়ানের এখন উড়োজাহাজের সংখ্যা দেড়শর বেশি। যেখানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এয়ারলাইনস বিমান বাংলাদেশের বর্তমান উড়োজাহাজের সংখ্যা মোটে ২১টি।

Loading...

আফ্রিকার উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হলেও মাথাপিছু আয়ের বিচারে দরিদ্র দেশগুলোর একটি ইথিওপিয়ায় কী করে গড়ে উঠল এত বড় একটি এয়ারলাইনস সে গল্প ঢাকায় এসে শুনিয়ে গেছেন কোম্পানিটির শীর্ষ কর্মকর্তারা।

তাদের মতে, সরকারের খবরদারি ছাড়া শুধু ব্যবসা প্রসারের নীতি নিয়ে চলেই এয়ারলাইনসটি আফ্রিকার শীর্ষ এয়ারলাইনস হয়ে উঠেছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে দেশটির বেসামরিক বিমান চলাচলের উদার নীতি।

ইউরোপ-আমেরিকার এয়ারলাইন কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি গত দুই দশকে বিশ্বজুড়ে নেটওয়ার্ক ছড়িয়েছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক কয়েকটি সংস্থা। শীর্ষ এয়ারলাইনসের তালিকায় সেগুলো সবার উপরে।

এমন প্রতিযোগিতার মাঝেই ১৫০ উড়োজাহাজের বহর নিয়ে ১৩৪টির বেশি গন্তব্যে নিজেদের সম্ভাবনার জানান দিয়ে যাচ্ছে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স।

কাতারের সব আপডেট হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে ক্লিক করুন

ব্যবসার নতুন সম্ভাবনা খোঁজার ধারাবাহিকতায় আফ্রিকাপ্রবাসী বাংলাদেশিদের বাজার ধরার পরিকল্পনা নিয়ে গত ৩ নভেম্বর ঢাকা-আদ্দিস আবাবা ফ্লাইট চালু করেছে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনসটি।

এজন্য ঢাকায় এসেছিলেন ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনসের শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তা। সোমবার তাদের সঙ্গে আলাপচারিতায় উঠে এসেছে এয়ারলাইনসটির চমক লাগানো ব্যবসায়িক সাফল্যের কথা।

Loading...

কী জাদু ইথিওপিয়ানের

আকারের দিক থেকে বাংলাদেশের চেয়ে প্রায় নয়গুণ বড় হলেও অর্থনীতির আকারে বাংলাদেশের চেয়ে বেশ ছোট ইথিওপিয়া। বিশ্ব ব্যাংকের হিসাবে বাংলাদেশের জিডিপি (২০২৩ সালে) ৪৩৭ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার, যেখানে ইথিওপিয়ার জিডিপি হচ্ছে ১৬৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার।

জিডিপির বিচারে দেশটির মাথাপিছু আয় ১২৯৩ ডলার আর বাংলাদেশের ২৭৮৪ ডলার। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ‘নিম্ন মধ্য আয়ের’ দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আর ইথিওপিয়া আগামী বছর সেই স্বীকৃতি পাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

Loading...

ছোট অর্থনীতির পাহাড়বেষ্ঠিত দেশ হলেও হর্ন অব আফ্রিকা নামে পরিচিত ইথিওপিয়ার রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইনসটির উঠে আসার তথ্য রীতিমত অবাক করার মত।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্স বিমানের তুলনায় তাদের উড়োজাহাজের বহর সাতগুণের বেশি বড়। আয়-মুনাফার হিসাবে বিমান ধারে কাছেই নেই।

ইথিওপিয়ান সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটির মহাপরিচালক গেটাচিউ মেনগিস্টি আলেমায়েহুর মতে, যে কোনো দেশের আকাশ শিল্পের উন্নয়ন নির্ভর করে দেশটির সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটির নীতিমালাগুলো কতটা নমনীয় সেটির ওপর।

Loading...

সেখানকার নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান সাফল্যের বলটি নিজের দিকে টানলেও ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনস এর আঞ্চলিক পরিচালক (দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়া) সলোমন বেকেল বলছেন, “এ এয়ারলাইনসের শতভাগ মালিক ইথিওপিয়ার সরকার হলেও এখানে ব্যবসা ও সেবার ক্ষেত্রে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই।

শতভাগ পেশাদারিত্বের সঙ্গে, দক্ষ লোকজন নিয়ে এয়ারলাইনসটি পরিচালিত হয়ে আসছে। এটিই এর সাফল্যের মূল কারণ।”

ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এপ্রিল পর‌্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, ৭৮ বছরের পুরনো এয়ারলাইন্সটি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ১৫৪টি এয়ারক্রাফট দিয়ে ১৩৬টি গন্তব্যে ফ্লাইট চালিয়েছে।

Loading...

ওই অর্থবছরে ১ কোটি ৩৮ লাখ যাত্রী এবং ৭ লাখ টন কার্গো বহন করে ৬ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। লাভের অঙ্ক কত ছিল তা এখনও বলা হয়নি ওয়েবসাইটে।

তবে এর আগের অর্থবছরে কোম্পানিটির ৫ দশমিক ০৫ বিলিয়ন ডলার আয়ের বিপরীতে নিট মুনাফা ছিল ৯৪ কোটি ২০ লাখ ডলার।

ঢাকায় ফ্লাইট চালু করা নিয়ে সলোমন বেকেলের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল বাংলাদেশে মধ্যপ্রাচ্যের এয়ারলাইনসগুলোর আধিপত্যে ইথিওপিয়ান টিকতে পারবে কি না?

Loading...

জবাবে তিনি বলেন, “আমরা আরও অনেকগুলো রুটে টার্কিশ এয়ারলাইনস, কাতার এয়ারওয়েজ, এমিরেটস এয়ারলাইনস, সৌদি অ্যারাবিয়া এয়ারলাইনসের মত জায়ান্টদের সঙ্গে আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতা করে ফ্লাইট পরিচালনা করছি।

এটা নতুন কিছু না। আমরা জানি কীভাবে তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা হয়। আমরা আমাদের সেবা ও ফ্লাইট সেফটি নিয়ে আত্মবিশ্বাসী।

Loading...

”আমরা ব্যবসার সম্ভাবনা ও প্রতিযোগিতার কৌশল জেনেই ঢাকায় ফ্লাইট শুরু করেছি। পাশাপাশি ঢাকায় আমাদের একটি ডায়নামিক টিম কাজ করছে। আমরা যাত্রীদের জন্য সহনীয় টিকেটের দাম রাখতে চাই, অতিরিক্ত ব্যাগেজ ও সেরা সার্ভিসের মাধ্যমে বাংলাদেশের বাজার ধরতে চাই।

“আফ্রিকার দেশগুলোতে ২৫ লাখের মত বাংলাদেশি থাকে। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসল্লি ওমরাহ ও হজে যায়। আমরাও ওমরাহ যাত্রী বহন করতে আগ্রহী।

বর্তমানে আমরা ঢাকা রুটে সপ্তাহে পাঁচটি ফ্লাইট চালাচ্ছি। যাত্রীদের ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি। যাত্রীদের এই সাড়া অব্যাহত থাকলে আমরা শিগগিরই সপ্তাহে সাতটি ফ্লাইট পরিচালনা করতে চাই।”

Loading...

ফ্লাইটে যাত্রীর পাশাপাশি পণ্য পরিবহনের তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, আফ্রিকা ও ইউরোপের দেশগুলোতেও বাংলাদেশিদের যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন সহজ হবে। এছাড়াও বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ও ওষুধ শিল্প অনেক বড় ও স্বনামধন্য।

বাংলাদেশের আকাশে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স

”আমরা এসব সেক্টরের ব্যবসায়ীদের নিয়ে ইথিওপিয়ায় বিজনেস কমিউনিটি করতে চাই।”

Loading...

ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের বহরে বর্তমানে ২০টি বোয়িং ৭৩৭-ম্যাক্স উড়োজাহাজ রয়েছে। মার্কিন উড়োজাহাজ নির্মাতা বোয়িংয়ে এই আলোচিত ম্যাক্স সিরিজের উড়োজাহাজে পরপর কয়েকটি দুর্ঘটনায় অনেক প্রাণহানি হয়।

মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস, লায়ন এয়ারের পাশাপাশি ইথিওপিয়ানের একটি ৭৩৭- ম্যাক্স দুর্ঘটনায় পড়ে। ২০১৯ সালের ১০ মার্চ কেনিয়ার নাইরোবির পথে রওনা দিয়ে দুর্ঘটনায় পড়া ইথিওপিয়ানের ওই ফ্লাইটের ১৫৭ জন যাত্রী ও ক্রুর সবারই প্রাণ যায়।

৭৩৭-ম্যাক্স দুর্ঘটনার কারণে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস, লায়ন এয়ারের ব্যবসা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

Loading...

এতবড় দুর্ঘটনার পরও ইথিওপিয়ান কী করে লাভে আছে জানতে চাইলে সংস্থাটির কর্মকর্তা সলোমন বেকেল বলছেন, “আমাদের ৭৩৭- ম্যাক্সের সেই দুর্ঘটনার পর অধিকতর তদন্ত হয়।

তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, দুর্ঘটনার কারন এয়ারলাইনস বা পাইলট সংশ্লিষ্ট নয়। তারপরও আমরা ত্রুটি সারিয়ে, নতুন ও রিভাইজড ৭৩৭-ম্যাক্স গ্রহণ করি।

এরপরই শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ম্যাক্স দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করি। আমরা ফ্লাইট পরিচালনার আগে যাত্রীর ফ্লাইট সেফটি ও সিকিউরিটির দিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আসছি।”

Loading...

বোয়িংয়ের কাছ থেকে আরও নতুন ৭৩৭-ম্যাক্স উড়োজাহাজ সংগ্রহের দিকে এগোচ্ছে ইথিওপিয়ান। তাদের অর্ডার করা ৭৩৭-ম্যাক্সগুলো অচিরেই বহরে যুক্ত হবে বলে আশা করছেন তারা।

লুফথানসা, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস, এয়ার ইন্ডিয়া, এয়ার চায়নাসহ ৩৯টি এয়ারলাইন্সের সঙ্গে ইথিওপিয়ানের রয়েছে কোড শেয়ারিং চুক্তি।

ভ্রমণ ও আকাশ খাতে কোড শেয়ারিং ব্যবস্থার মাধ্যমে একটি এয়ারলাইনস তাদের নিজস্ব বোর্ডিং কার্ড দিয়েই যাত্রীদের আরেকটি এয়ারলাইনসের মাধ্যমে তৃতীয় কোনো গন্তব্যের জন্য টিকেট দিতে পারে।

Loading...

এছাড়া স্টার অ্যালায়েন্সের সদস্য হিসেবে তারা ২৬টি সহযোগী এয়ারলাইনসের সঙ্গে তাদের সহযোগিতার চুক্তি রয়েছে।

কর্মকর্তারা বলছেন, এসব পদক্ষেপ তাদেরকে অন্য বড় এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সহায়তা করেছে।

এয়ারলাইনস খাতে উড়োজাহাজ বা যন্ত্রাংশের পাশাপাশি নতুন লোকবল তৈরিও একটা বড় সংকট, যেটাতে ভালোভাবেই ভুগতে হচ্ছে বাংলাদেশের অ্যাভিয়েশন খাতকে।

Loading...

ইথিওপিয়া থেকে আসা কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের ওখানে পাইলটদের প্রশিক্ষণের ভালো ব্যবস্থা আছে। তাদের অ্যাভিয়েশন ইনস্টিটিউটটিকে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করেছেন।

ইথিওপিয়ান সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটির মহাপরিচালক গেটাচিউ মেনগিস্টি আলেমায়েহু বলছেন, “ইথিওপিয়ায় খুবই স্ট্রং এভিয়েশন ট্রেনিং একাডেমি রয়েছে, সিমুলেটর রয়েছে।

Loading...

সারাবিশ্ব থেকে অনেকে আসে এখানে ট্রেনিং নিতে। আমরা বাংলাদেশি পাইলটদের ট্রেনিং দেওয়ার বিষয়ে ভাবছি। আমরা ইতিমধ্যে বাংলাদেশের সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি।”

Bdnews24

Loading...

Loading