থার্ড টার্মিনালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের জন্য কতটা প্রস্তুত বিমান
Loading...
থার্ড টার্মিনালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের জন্য কতটা প্রস্তুত বিমান
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালের (টার্মিনাল-৩) নির্মাণকাজ শেষ পথে। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী আকাশ পরিবহন সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে।
কাতারে বিভিন্ন কোম্পানিতে নতুন চাকরির খবর
সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন টার্মিনালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং পরিষেবা দিতে দুই বছর আগে থেকেই বিমান প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংগ্রহ ও জনবল নিয়োগ হচ্ছে।
Loading...
সব প্রক্রিয়া শেষ করে টার্মিনালটি চালু হতে বছর খানেকের মতো সময় লেগে যেতে পারে বলে মনে করছেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কর্মকর্তারা।
থার্ড টার্মিনালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের জন্য বিমানের দীর্ঘ প্রস্তুতি থাকলেও সেবা দেয়ার অতীত অভিজ্ঞতা তাদের ভালো নয় উল্লেখ করে আকাশ পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন টার্মিনালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব বিমানকে দিয়ে একধরনের ঝুঁকি নেয়া হচ্ছে।
বিমান যদি থার্ড টার্মিনালে ভালো করে, তা দেশের জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে। তবে খারাপ করলে তা দেশের জন্যই খারাপ হবে।
কাতারের সব আপডেট হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে ক্লিক করুন
বেবিচকের একটি সূত্র বণিক বার্তাকে জানিয়েছে, থার্ড টার্মিনাল পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সরকারি-বেসরকারি অংশীদারি (পিপিপি) পদ্ধতিতে জাপানের প্রতিষ্ঠানের হাতে ন্যস্ত থাকবে। বিমান শুধু গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং পরিষেবা দেবে।
Loading...
এর মধ্যে রয়েছে বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ অবতরণের পর পথ দেখিয়ে পার্কিং বেতে নেয়া, দরজায় সিঁড়ি লাগানো, যাত্রীদের মালপত্র ওঠানো-নামানো, উড়োজাহাজের ভেতর পরিষ্কার করা ও চেকইন কাউন্টারে সেবার মতো কাজ।
স্বাধীনতার পর থেকে শাহজালাল বিমানবন্দরের বিদ্যমান দুই টার্মিনালসহ দেশের সবক’টি বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং পরিষেবা দিয়ে আসছে বিমান।
Loading...
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বিমানের গ্রাউন্ড সার্ভিস ইকুইপমেন্ট (জিএসই) বিভাগ প্রায় ৫৭ হাজার ২০০টি ফ্লাইটে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দিয়েছে। বিমান জিএসই বর্তমানে দৈনিক ১৬০টি ফ্লাইটের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দিচ্ছে এবং একসঙ্গে ১৫টি ফ্লাইটকে এ সেবা দিতে সক্ষম।
থার্ড টার্মিনালের জন্য নিজেদের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বাড়াতে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার যন্ত্রপাতি সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে বিমান। এরই মধ্যে ৮০০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি বহরে যুক্ত হয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা।
Loading...
এর মধ্যে গত অক্টোবরে সংস্থাটির বহরে যুক্ত হয়েছে ফ্রান্স থেকে আমদানি করা ছয়টি বেল্ট লোডার। বোয়িং ৭৩৭, এয়ারবাস এ-৩২০ ও ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজে কার্গো ও ব্যাগেজ ওঠানো-নামানোর কাজে এসব বেল্ড লোডার ব্যবহার করা হবে।
বিমান জানিয়েছে, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সক্ষমতার উন্নয়নে কয়েক ধাপে যন্ত্রপাতি যুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নতুন নতুন যন্ত্র কেনা, জিএসই অপারেটর, মেকানিক নিয়োগ ও তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জিএসই বিভাগের সক্ষমতা বহুগুণ বাড়ানো হয়েছে।
Loading...
যাত্রীদের ব্যাগেজ প্রাপ্তির সময় কমিয়ে আনা হয়েছে। ১৮ থেকে ৫১ মিনিটের মধ্যে ব্যাগেজ ডেলিভারির হার ৮৫ শতাংশের ওপরে উন্নীত হয়েছে বলে দাবি করছেন বিমানের কর্মকর্তারা।
থার্ড টার্মিনালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের প্রস্ততি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) বোসরা ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘থার্ড টার্মিনালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং পরিষেবা দেয়ার জন্য দুই বছর ধরে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।
Loading...
যখন টার্মিনালের কাজ শুরু হয়, ওই সময় সিভিল এভিয়েশন আমাদের প্রস্তুতি নিতে বলেছিল। তখন থেকেই নেয়া আমাদের প্রস্তুতি প্রায় শেষের পথে।’
থার্ড টার্মিনালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের জন্য বিমান পুরোপুরি ‘ইকুইপড’ দাবি করে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা প্রায় ৮০০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করেছি। অনেকগুলো যন্ত্রপাতির ক্রয়াদেশ দেয়া হয়েছে।
কয়েক মাসের মধ্যে সেগুলো আমাদের বহরে যুক্ত হবে। নতুন টার্মিনালের জন্য এরই মধ্যে অনেক জনবল নিয়োগ করেছি। এখনো বিভিন্ন পদে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান। টার্মিনাল চালুর আগেই আমরা শতভাগ প্রস্তুত হয়ে যাব।’
Loading...
থার্ড টার্মিনালের দায়িত্ব বিমানকে দেয়ার বিষয়টি জানিয়ে গত ২৪ অক্টোবর চিঠি দেয় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের পিপিপি কর্তৃপক্ষ। চিঠিতে বলা হয়, কনসেশন এগ্রিমেন্ট ফর টার্মিনাল থ্রির আওতায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস লিমিটেড মূলত থার্ড টার্মিনালের যাত্রী ও কার্গো উভয়ের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সার্ভিস দেবে।
এজন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস লিমিটেড ও প্রাইভেট সেক্টর পার্টনারের (পিএসপি) মধ্যে একটি সার্ভিস লেভেল এগ্রিমেন্ট (এসএলএ) সম্পাদন হবে।
Loading...
এ বিষয়ে বিমানের মহাব্যবস্থাপক বোসরা ইসলাম বলেন, ‘অফিশিয়ালি আমরা চিঠি পেয়েছি। চুক্তি এখনো হয়নি।’
বিমানকে থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব দেয়ার বিষয়টিকে যদিও ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন আকাশ পরিবহন বিশেষজ্ঞ এটিএম নজরুল ইসলাম।
এ প্রসঙ্গে তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘অতীত অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবার মান সন্তোষজনক নয়। সাম্প্রতিক সময়ে যেসব শ্রমিক বিমানে ভ্রমণ করেছেন, জরিপে উঠে এসেছে তাদের ৯৭ শতাংশই সংস্থাটির সেবার মানে সন্তুষ্ট হতে পারেননি।
Loading...
অংশীজনরাও বিমানের সেবা নিয়ে খুশি নয়। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিমান দাবি করছে, তারা প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এরই মধ্যে সংগ্রহ করেছে। জনবল নিয়োগ করেছে। যন্ত্রপাতি কেনা, জনবল নিয়োগের মতো কাজগুলো কঠিন কিছু নয়।
কঠিন কাজ হলো যন্ত্রপাতি ও জনবল দিয়ে একটা সমন্বিত সেবা দেয়া এবং কর্মীদের সেই সেবা দেয়ার উপযোগী করে প্রশিক্ষিত করে তোলা। অতীত ইতিহাস বলে, বিমানে এসব বিষয় অনুপস্থিত। তাদের প্রশিক্ষণের দুর্বলতা রয়েছে। সঙ্গে ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতাও রয়েছে।’
Loading...
বাংলাদেশে এখনো অনেক বড় বড় এয়ারলাইনস আসে না উল্লেখ করে এ বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘থার্ড টার্মিনালের কারণে যাত্রী বাড়বে, নতুন নতুন এয়ারলাইনস আসবে। এখন টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে বিমান যদি ভালো করতে পারে এটা দেশের জন্য, আমাদের সবার জন্য ভালো।
খারাপ করলে সবার জন্য খারাপ। আমরা আশা করি, বিমান ভালো করুক। না করলে এটা বেশ সমস্যা তৈরি করবে। বিমানকেই এ চ্যালেঞ্জ নিতে হবে।’
Loading...