কাতার বিএনপি নেতা মকবুল হোসাইনের বিরুদ্ধে পৌনে এক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

Loading...

কাতার বিএনপি নেতা মকবুল হোসাইনের বিরুদ্ধে পৌনে এক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

কাতার বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি মোহাম্মদ মকবুল হোসাইনের বিরুদ্ধে পৌনে এক কোটি টাকার বেশি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

তিনি কাতারে থাকাকালে তার স্পন্সর কোম্পানি প্রতিষ্ঠান ‘আল নোয়াইমি স্টিল এণ্ড এলুমিনিয়াম’ এর স্ব্ত্ত্বাধিকারী এবং কাতার প্রবাসী ব্যবসায়ী আব্দুল মতিন পাটোয়ারীর কাছে দেনা বিপুল পরিমাণ অর্থ পরিশোধ না করেই বাংলাদেশে চলে এসে আর কাতারে ফিরে যাননি।

Loading...

আব্দুল মতিন পাটোয়ারী কাতারে গত তিন দশকের বেশি সময় ধরে নানারকম শিল্প প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িত। অভিযোগকারী ব্যবসায়ী আব্দুল মতিন পাটোয়ারীর আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১৪ নভেম্বর কাতারের দোহাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে নরসিংদী জেলা প্রশাসককে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে। 

চিঠিতে অভিযোগকারী কাতার প্রবাসী ব্যবসায়ী এবং এএমপি গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন পাটোয়ারী দাবি করেন, ‘প্রতারণামূলকভাবে ৭৬ লাখ ৯২ হাজার টাকা নিয়ে কাতার থেকে বাংলাদেশে চলে এসেছেন মোহাম্মদ মকবুল হোসাইন।’

আব্দুল মতিন পাটোয়ারী তাঁর অভিযোগপত্রে বিভিন্ন প্রমাণ ও মকবুল হোসাইনের স্বাক্ষর ও সাক্ষীদের তথ্য তুলে ধরেছেন। এর মধ্যে ৩০ জুলাই ২০২৩ তারিখে মকবুল হোসাইনের স্বাক্ষরিত হিসাবে দেখা যাচ্ছে, তিনি আব্দুল মতিন পাটোয়ারীকে মোট ১ লাখ ৮৬ হাজার কাতারি রিয়াল পরিশোধ করবেন বলে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছেন।  

Loading...

এর পাশাপাশি আরেক কাতার প্রবাসী জনাব মাহবুবের কাছ থেকে নেওয়া ২৫ হাজার কাতারি রিয়াল এবং অভিযুক্ত মকবুল হোসাইনের ভগ্নিপতিকে দেওয়া ১৩ হাজার রিয়ালসহ আরও ৩৮ হাজার কাতারি রিয়াল পাবেন আব্দুল মতিন পাটোয়ারী।  এই দেনা-পাওনার স্বীকারোক্তি দিয়ে স্বাক্ষর করেছেন অভিযুক্ত মকবুল হোসাইন।

আব্দুল মতিন পাটোয়ারী জানান, আমার কোম্পানির নামে নেওয়া মকবুল হোসাইনের বাসা ভাড়া বকেয়া হওয়ায় বাড়ির মালিক আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন।

Loading...

এখানে আমার পাওনা যোগ হয়েছে আরও ৭০ হাজার কাতারি রিয়াল।  ফলে সব মিলিয়ে আমি এখন মকবুল হোসাইনের কাছে ২ লাখ ৫৬ হাজার কাতারি রিয়াল পাওনা এবং এর প্রত্যেকটির প্রমাণপত্র আমি দাখিল করেছি।  শুধু তাই নয়, মকবুল হোসাইনের কৃতকর্মের কারণে আমাকে কাতারে আইনি ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে।

জানা যায়, আব্দুল মতিন পাটোয়ারীকে ছুটিতে দেশে যাওয়ার কথা বলে কাতার থেকে কৌশলে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে এসেছেন মকবুল হোসাইন।  এরপর কৌশলে নিজের পরিবারকেও দেশে নিয়ে আসেন।  প্রথমদিকে নানারকম টালবাহানা করলেও এখন আব্দুল মতিন পাটোয়ারীর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলেও দিচ্ছেন না মকবুল। 

Loading...

তবে অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন মকবুল হোসাইন।  সোমবার (৬ জানুয়ারি) রাতে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আমি কাতার বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি।  আমার কাছ থেকে কোনও টাকা পান না আব্দুল মতিন পাটোয়ারী। আমি তাঁর কাছ থেকে ওয়ার্কশপ ভাড়া নিয়েছিলাম। আমি ভাড়া ঠিকমতো পরিশোধ করলেও তিনি দিতেন না।  জায়গার মালিকের কাছে তিন লাখ রিয়াল ভাড়া বাকি করেছেন পাটোয়ারী।  তাছাড়া আমার ওয়ার্কশপে মেশিনারিজ আছে তিন লক্ষ রিয়ালের, যা আমি বুঝে পাইনি।’

মকবুল হোসাইনের বক্তব্যকে মিথ্যা আখ্যা দিয়ে আব্দুল মতিন পাটোয়ারী বলেন, কয় মাসের ভাড়া জমলে সেটি তিন লাখ হয় তা আগে মকবুলের হিসাব করা উচিত। আর এতগুলো মাসের ভাড়া জমলে কোনো মালিক তার জায়গায় ওয়ার্কশপ চালাতে দেয়, এমন কথা অবিশ্বাস্য ও বাস্তবতাবিবর্জিত। 

Loading...

তাছাড়া মকবুল হোসাইনের স্বাক্ষরিত স্বীকারোক্তিপত্রে বলা আছে, তৃতীয় পক্ষ হিসেবে শাহজাহান সাজু তাঁর ওয়ার্কশপে থাকা মালপত্রের মূল্য নির্ধারণ করবেন।  সেই হিসেবে তাঁর মেশিনারিজের মূল্য পাওয়া গেছে মাত্র ২০,৪৫০ রিয়াল যা আমি আমার মোট পাওনা ২ লাখ ৫৬ হাজার থেকে বাদ দিয়েছি। 

ফলে বর্তমানে আমি তাঁর কাছে ২ লাখ ৩৫ হাজার কাতারি রিয়াল পাই যা বাংলাদেশি টাকায় (৩৩.৫০ টাকা প্রতি কাতারি রিয়াল হিসেবে) ৭৮ লাখ ৯২ হাজার ৬৬৭ টাকা।  এর মধ্যে ২০২৩ সালের সেপ্টম্বর মাসে তিনি শুধুমাত্র ২ লাখ বাংলাদেশি টাকা পরিশোধ করেছিলেন এবং বাকি ৭৬ লাখ ৯২ হাজার টাকা দ্রুত দিয়ে দেবেন মর্মে প্রতিশ্রুতি দিলেও তিনি আর কোনো টাকা পরিশোধ করেননি।

Loading...

কাতার থেকে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে আব্দুল মতিন পাটোয়ারীর পাঠানো জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগের কপি বা জেলা প্রশাসন থেকে কোনও যোগাযোগও করা হয়নি বলে দাবি করেন মকবুল হোসাইন।  তিনি বলেন, ‘না আমি তো জানিই না। আপনি এখন বলেছেন তাই জানলাম। দেখেন আমি সিআইপি। আমার সাথে সবসময় সবার সুসম্পর্ক আছে।  আমার কাছে এখনো কোনো নোটিশ আসেনি। এলে আইনগতভাবে আমি তা মোকাবেলা করবো।’

আব্দুল মতিন পাটোয়ারী তাঁর বক্তব্যে জানান, আমি মকবুল হোসাইনের কাছে কত টাকা পাওনা, সেটি তাঁর ভগ্নিপতি থেকে শুরু করে তাঁর পুত্র ও স্ত্রীসহ পরিবারের অনেকে জানেন।  আমার প্রতিটি দাবির পক্ষে সুস্পষ্ট প্রমাণ ও সাক্ষী আছে, পাশাপাশি সেগুলোতে মকবুল হোসাইনের নিজের স্বাক্ষরও রয়েছে। মকবুল হোসাইনের কাছে এমন কোনো প্রমাণ নেই যা দেখিয়ে তিনি বলতে পারবেন যে আমি তার কোনো টাকা বাকি রেখেছি।  বরং তিনি আমাকে না জানিয়ে নিজে কাতার থেকে পালিয়েছেন, পরিবারকেও নিয়ে গেছেন।  আমি তাঁকে অবিলম্বে এই টাকা পরিশোধের দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় আমি আরও কঠোর আইনি পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবো।

আরও পড়ুন

গালফ বাংলা

Loading...

Loading