প্রবাসীদের জন্য নিরাপদ এয়ারপোর্ট

Loading...

প্রবাসীদের জন্য নিরাপদ এয়ারপোর্ট

সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় আসেন নোয়াখালীর সেনবাগের রসুল করিম। তার চোখেমুখে এক ধরনের উচ্ছ্বাস আর আনন্দ লক্ষ্য করা গেল। গত সোমবার বেলা সোয়া ১২টায় দেশের প্রধান বিমানবন্দর শাহজালাল বিমানবন্দরে কথা হয় এই যাত্রীর সঙ্গে।

সেই উচ্ছ্বাস ঠিক কী কারণে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিমানবন্দরে যে চিত্র দেখলাম, এ রকম আগে চোখে পড়েনি। বিশেষ করে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের ব্যবহার পুরাই চেঞ্জ। সবাই ‘স্যার’ বলে ডাকছেন।’

Loading...

দুপুর সোয়া ২টায় নেপালের কাঠমান্ডু থেকে (বিজি-৩৭২) ঢাকায় পৌঁছায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট। ট্যুরিস্ট ভিসায় নেপালে যাওয়া আরাফাত হোসেন সেই ফ্লাইটে ঢাকায় ফেরেন।

তিনি ঢাকার নিউ মার্কেট এলাকার বাসিন্দা। আরাফাতের কাছে বিমানবন্দরে সেবা পাওয়ার বিষয়ে তার অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ফ্লাইট থেকে নেমে দ্বিতীয় টার্মিনাল দিয়ে বের হতে সময় লেগেছে ৩৫ মিনিটের মতো।

কাতারের সব আপডেট পেতে জয়েন করুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে

সাধারণত প্লেন থেকে নামার পর ইমিগ্রেশন, লাগেজ সংগ্রহসহ অন্য ফর্মালিটি মেনে বের হতে গড়ে দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। আজ প্রায় ৪০ মিনিটেই লাগেজসহ বিমানবন্দর থেকে বের হতে পেরেছি। ‘আবার বিমানবন্দরের ভেতর থাকা ফ্রি টেলিফোন নাকি কাজ করছে শুনলাম। আগে করত না।

Loading...

সেটা দিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলেছি।’আমার এক পরিচিতজন ঘুরে এসেছেন বাংলাদেশ। তার অভিজ্ঞতাও সুখকর।সে বলল, বিদেশী পাসপোর্ট দেখার সঙ্গে সঙ্গে অনাবাসী বা প্রবাসী বাংলাদেশী বলে তাকে যথেষ্ট ভালো ব্যবহার করে তাড়তাড়ি যেতে দেওয়া হয়েছিল।

এই সদর্থক ভালো পরিবর্তনগুলো আমাদের মন ও চিন্তাকে স্বস্তি দেয়। আমরা স্বস্তি বোধ করি। বলাবাহুল্য, সে জন্য ধন্যবাদ ও প্রশংসা সংশ্লিষ্টদের প্রাপ্য। কিন্তু কথা হচ্ছে, আমরা আনন্দিত হচ্ছি বটে, কিন্তু চমকাচ্ছি কেন?

আসলে কি চাই আমরা? বা কি চাইতাম? দুই একটা ব্যক্তিগত ঘটনা বলি। সেবার আমি আর দীপা হ্যানয় থেকে ভিয়েনটাইন গিয়ে নামলাম। লাওসের রাজধানী। ছোট একফালি এয়ারপোর্ট । কিন্তু যাত্রী বোঝাই বিমানগুলো উঠছে আর নামছে। বোঝাই যাচ্ছে ব্যস্ত ওরা। সব শেষ, কিন্তু আমাদের সবাইকে বেরোনোর পথে এক জায়গায় দাঁড় করিয়ে রাখল।

Loading...

মনে মনে একটু বিরক্ত হচ্ছিলাম কেন বাবা? এখন আমাদের হোটেলে গিয়ে হাত পা ছড়িয়ে কিছু খাওয়ার সময়। কেন এই পথ আগলে রাখা? উত্তর মিলতে বিলম্ব হলো না। সুবেশী দুই তরুণী আর একজন যুবক এগিয়ে এলো হাতে ফুলের মালা।

কাতারে চাকরি খুঁজছেন? এখানে দেখুন চাকরির খবর

তারা আমাদের বরণ করে নিল সাদরে। স্বাগত জানাল পর্যটক হিসেবে বা যে কোনো কারণে তাদের দেশে আসার জন্য। কি দারুণ সে অনুভূতি। একই আপ্যায়ন আমরা পেয়েছিলাম ফিজির নান্দি এয়ারপোর্টে।

ফিজিতে শুধু অভ্যর্থনা নয়, সে সঙ্গে তারা সমস্বরে বলতে থাকে, বুলা বুলা। যার বিবিধ অর্থ। একসঙ্গে স্বাগতম ধন্যবাদ সব। যুক্তরাষ্ট্রের দ্বীপপুঞ্জ হাওয়াই। পৌঁছেছিলাম কাকডাকা ভোরে।

Loading...

দশাসই চেহারার এক নিগ্রো অফিসার। ভাবলাম কি জানি কি বলে? চমৎকার ব্যবহার, কিন্তু বেশ ভারী গলায় আমাদের কাছে কাগজ দেখতে চাইল। যে কাগজটি ভিসা সমতুল্য।

অস্ট্রেলিয়ান পাসপোর্টে ভিসার দরকার না থাকলেও এই কাগজটির দরকার আছে। আমি সারারাত জার্নির পর ঘুম চোখে হাতড়াচ্ছিলাম সেটি কোথায় রেখেছি। ভদ্রলোক বলেছিলেন, দাঁড়াও তুমি ক্লান্ত তাই পাচ্ছো না। আমার নাম জন্ম তারিখ নিয়ে নিজেই কম্পিউটার থেকে তা বের করে এনেছিল। যদিও তখন আমি তা পেয়ে গিয়েছিলাম।

এটাই তো প্রত্যাশিত। এমনই তো হওয়া উচিত। আমাদের দেশে যেসব বাংলাদেশী বিদেশে থেকে যায়, তারা সবাই রেমিটেন্স যোদ্ধা। আমি আর কোনো জাতির মধ্যে এমনটা দেখিনি। স্বল্প আয় থেকে ধনী সবাই টাকা পাঠায় দেশে।

কারণ, আমাদের পরিবারের বন্ধন এমনই যে, আমরা তা না করে পারব না। এমন দেশের বিমানবন্দরে এলে সবাইকে বরণ করার মানসিকতা থাকাই উচিত ছিল।

Loading...

কিন্তু বিগত সরকার রেমিটেন্সের বলে বলীয়ান হলেও এগুলো নিয়ে মাথা ঘামাতো না। বা ঘামালেও কোনো কার্যকর ফল দেখা যেত না। আসলে বিষয়টা মন ও মানসিকতার। এই মন মানসিকতার পরিবর্তন একদিনে অসম্ভব। তাই ওপরের ঘটনাগুলো ঢাকা এয়ারপোর্টের সাময়িক চিত্র বলে ধরে নিতে পারি।

আমাদের সমাজ আর জীবনে সমতার বড় অভাব। আর একটা বিষয় হচ্ছে বস গিরি। যে যেখানে সেখানেই হাম বড়া ভাব আর চেয়ারের বড়াই। এবারের জনবিপ্লবে এটা তো পরিষ্কার যে, এসব ঠুনকো। ভেসে যেতে এক মিনিটের বেশি লাগে না।

তাই এবার যে পরিবর্তনগুলো ঘটছে, তা যেন স্থায়ী হয়। সবচেয়ে বিরক্তিকর ছিল হাঁ করে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকা। আর গা ছাড়া ভাব। যারা কাউন্টারে বসেন, যারা মূলত দেশে ঢোকার পর প্রথম দেখা মানুষ তাদের মুখে এক টুকরো হাসি থাকা শোভন।

Loading...

অমন গোমড়া মুখ করে ভয় দেখানো চেহারা করার কোনো কারণ নেই। তারপর হলো সময় নেওয়া। একজন আরেকজনের সঙ্গে কথা বলতে থাকে, হাতে যাত্রীর পাসপোর্টটি ধরা। কিছু জিজ্ঞেস করলে আপনি উত্তর পাবেন না। বরং আপনার সময় হবে আরও দীর্ঘ। এসব অপপ্রক্রিয়া বন্ধ হলে সেবার মান আপনা আপনি বেড়ে যাবে।

ভালো লাগছে এই ভেবে যে, আমাদের দেশের প্রবেশদ্বারগুলো পরিবর্তনের পথে। আজকে আপনি যেদিক থেকেই দেখেন না কেন, বাংলাদেশের জন্য এসব পরিবর্তন ছিল আবশ্যক।

একটা গৎবাঁধা বা চালু নিয়মের খোপে পড়া পায়রার মতো বন্দি জীবনকে গণতন্ত্র বলে না। গণতন্ত্র বা উদারতার মানে হচ্ছে আধুনিকতা, সঙ্গে পরিবর্তনকে মেনে চলা। আশা করি ঢাকাসহ দেশের সব এয়ারপোর্টে এমন সুন্দর ব্যবস্থা থাকবে। চালু থাকবে মানুষকে সম্মান করার আইন কানুন।

Loading...

আমরা পারি। চাইলেই পারি। কিন্তু সবসময় আমাদের ভালো ¯্রােতে অপ¯্রােত এসে মিশে যায়। দিকভ্রান্ত করে আমাদের পরিবর্তনকে ব্যাহত করে। এবার যে তা হবে না, তারও গ্যারান্টি আছে? ইতোমধ্যে কত ঘটনা আর কত গুজব।

আমরা গুজবে কান না দিয়ে যা মঙ্গল যা কল্যাণের, যাতে সবার ভালো হয়, তার কথা ভাবি। ভাববো সবাইকে নিয়ে ভালো থাকার কথা। শুধু বিমানবন্দরে নয়, দেশের সব জায়গায় মানুষকে সম্মান আর মর্যাদা দেওয়ার চিন্তা ফলবতী হলেই দেশ ভালো থাকবে।

দৈনিক জনকণ্ঠ

Loading...

Loading