বিমানের টিকিট নিয়ে ‘হয়রানি’, কলকাঠি নাড়ছে কারা?

Loading...

বিমানের টিকিট নিয়ে ‘হয়রানি’, কলকাঠি নাড়ছে কারা?

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের সোহরাব হোসেন মুন্না ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় কাতারের দোহা গেছেন। প্রথমে তারা চেষ্টা করেন বাংলাদেশ বিমানের টিকিট সংগ্রহের।

কিন্তু তাতে ব্যর্থ হয়ে এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটে প্রথমে দিল্লি, এরপর সেখান থেকে দোহায় যান। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের টিকিট না পেয়ে ও উচ্চ মূল্যের কারণে তাদের ওই ফ্লাইটের আরও পাঁচ জন একইভাবে দোহা যান।

কাতারের সব আপডেট পেতে জয়েন করুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে

Loading...

মুন্না বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের টিকিট পাইনি। আবার অনেকে সেই টিকিটের মূল্য অনেক বেশি বলেছেন। এ কারণে আমরা অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটে দোহা আসছি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কতটাকায় টিকিট কেটেছি এটি বলছি না। তবে কম টাকায় পাওয়ার কারণেই আমরা এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটে এসেছি।

যাত্রীরা অভিযোগ করছেন, এয়ারলাইন্সগুলোর টিকিট নিয়ে তুঘলকি কারবার চলছে। যাত্রী জিম্মি করে বেশি দামে টিকিট বিক্রি যেন এক রকম রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের টিকিটের মূল্য বেশি, আরও বেশ কটি এয়ারলাইন্সের সিট ‘গ্রুপ বুকিংয়ের’ নামে বুক করে টিকিটের মূল্য বাড়াচ্ছে।

কোনও প্রকার নাম, ঠিকানা এমনকি পাসপোর্ট নম্বর ছাড়াই বিভিন্ন ফ্লাইটের সিট ব্লক করে ফেলা হচ্ছে। সেই ব্লক করা সিটগুলো পরবর্তীতে ২০/৩০ শতাংশ, কখনও কখনও ৫০ শতাংশ বেশি টাকায় বিক্রি করছে।

বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের টিকিট ‘সোনার হরিণ’ হয়ে উঠছে বলেও জানান যাত্রীরা। এ কারণে বিদেশি অন্যান্য ফ্লাইট সুযোগ নিচ্ছে।

কাতারে চাকরি খুঁজছেন? এখানে দেখুন চাকরির খবর

Loading...

এতে করে এক শ্রেণির ট্রাভেল এজেন্ট, এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তারা লাভবান হলেও অধিকাংশই ট্রাভেল এজেন্সি তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টিকিট ব্লক করে রেখে পরবর্তীতে দাম বাড়ানো কিংবা উচ্চমূল্য রাখার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। গত এপ্রিল ও মাসে মালয়েশিয়া কর্মী পাঠানোর শেষ সময়ে টিকিট দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠে।

মালয়েশিয়ার টিকিটের মূল্য ৩০ হাজার টাকা হলেও তখন ১ লাখ ৩০ হাজার পর্যন্ত উঠে যায়। ওই সময় শুধু টিকিটের মূল্য বাড়িয়ে এয়ারলাইন্সের কিছু কর্মকর্তা ও এজেন্সি কয়েকশ কোটি টাকা বাগিয়ে নেয় বলেও অভিযোগ আছে।

Loading...

টিকিট না পেয়ে প্রায় ২৫/৩০ হাজার কর্মী যারা যেতে পারেননি তাদের কাছ থেকেও লাখ টাকার ওপরে নেওয়া হয়েছিল।

অবিলম্বে টিকিটের ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ ও ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসাবান্ধব পরিববেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে সম্প্রতি অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্সি বাংলাদেশ (আটাব) এর নেতারা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে। ওই চিঠিতে বর্তমান পরিবেশের জন্য তারা ক্ষোভও প্রকাশ করেন।

সংগঠনটির সভাপতি আব্দুস সালাম আরেফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, একটি গোষ্টি বরাবর এ কাজ করে যাচ্ছে। আমরা বহুবার মন্ত্রণালয়, এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ, সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষকে বলেছি। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

Loading...

তিনি বলেন, ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসার নামে যা হচ্ছে তাতে আমরা এখন লজ্জা পাচ্ছি। এই অবস্থা চলতে পারে না। আমরা ৯ দফা দাবি পেশ করেছি। এই দাবিগুলোর মধ্যে টিকিট বুকিং এর নামে অধিক মূল্য আদায়ের বিষয়টিও রয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত তিন মাসের অধিক সময় ধরে আমরা বিমান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চিঠি দিয়ে তাদের সঙ্গে বসতে চেয়েছি।

তারা আমাদের ডাকে এখন পযর্ন্ত সাড়া দেননি। সব এয়ারলাইন্সের থেকে বিমানের টিকিটের দাম বেশি। কেন বেশি এর সদুত্তর তারা দিতে পারে না।

Loading...

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ডিরেক্টর (সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং) আশরাফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা গ্রুপ টিকিট বুকিং বন্ধ করে দিয়েছি।

এছাড়াও ভাড়াটা কখনও ফিক্সড থাকে না। বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের সঙ্গে সমন্বয় করতে হয়। আটাব আমাদের স্টেক হোল্ডার। অবশ্যই তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলবো।

একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. কুদরাত ই খুদা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমি কিছুদিন আগে লন্ডন গিয়েছিলাম। এখানে টিকিট পেতে আমাকে অনেক বেগ পেতে হয়েছে।

Loading...

আমি দেশ থেকে টিকিট-ই কিনতে পারেনি। অন্য দেশ থেকে টিকিট কিনে পরবর্তীতে এয়ারপোর্টের কাউন্টারে গিয়ে অন বোর্ডিং পাশ নিতে হয়েছে। এই হলো প্রকৃত অবস্থা।

তিনি বলেন, বর্তমানে তো প্রবাসীরাও কম আসছেন আবার দেশ থেকেও কম যাচ্ছেন। দুবাইয়ের ভিসাও এখন চালু নেই। সবমিলিয়ে এ রকম হওয়ার কথা না, তারপরও হচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের উচিত দেশের চলাচলকারী অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উভয়ের ক্ষেত্রে টিকিট যেন কেউ কালোবাজারি করতে না পারে, দাম না বাড়াতে পারে। এতে করে যাত্রী জিম্মি থাকবেনা, হয়রানীও কমবে।

Loading...

সম্প্রতি দেশে কয়েকজন প্রবাসী যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা বাংলাদেশ বিমনেই আসা যাওয়া করতে চান।

কিন্তু সময়মত টিকিট না পাওয়া, কিংবা ইমারজেন্সি টিকিট পেতে অনেক সময় দ্বিগুণ দাম দিতে হয়, এ কারণে তারা নিজ দেশের ফ্লাইটে ভ্রমণ করতে পারেন না। বাধ্য হয়ে বিদেশি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে আসা যাওয়া করতে হয়।

বাংলা ট্রিবিউন

Loading...

Loading