সৌদিতে সিঙ্গেল ভিসায় যত ভোগান্তি
Loading...
সৌদিতে সিঙ্গেল ভিসায় যত ভোগান্তি
বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় হচ্ছে সৌদি আরব। গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের শ্রমবাজারগুলোর শীর্ষে রয়েছে এই দেশটি। কিন্তু সৌদিতে বাংলাদেশি কর্মীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সিঙ্গেল ভিসায় গিয়ে।
কাতারে বিভিন্ন কোম্পানিতে নতুন চাকরির খবর
অথচ বছরে সৌদি আরবে বাংলাদেশ থেকে যত কর্মী গ্রুপ ভিসায় যান তার ২৫ গুণ বেশি যান সিঙ্গেল ভিসায়। তবে গ্রুপ ভিসায় যেসব কর্মী সৌদিতে যান তাদের ক্ষেত্রে এত বেশি অভিযোগ পাওয়া যায় না। তারা তুলনামূলক ভালো কাজ ও বেতন পান।
Loading...
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ থেকে গ্রুপ ভিসায় সৌদি আরবে গেছেন ৯০ হাজার বাংলাদেশি। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গেল ভিসায় সৌদি আরবে গেছেন ২১ লাখ ৩৬ হাজার কর্মী।
বিএমইটি সূত্র খবরের কাগজকে জানায়, এখানে যত ভোগান্তি ও প্রতারণার অভিযোগ জমা পড়েছে তার প্রায় সবই এসেছে সিঙ্গেল ভিসায় যাওয়া কর্মীদের কাছ থেকে। গত ৫-৭ বছরে বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গেল ভিসায় প্রতিবছর ৩ থেকে ৫ লাখ কর্মী সৌদি আরবে গেছেন।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সাজ্জাদ হোসেন ভূঞা খবরের কাগজকে বলেন, ‘সৌদিতে বাংলাদেশি কর্মীদের ভোগান্তি নিয়ে আমাদের যত মিটিং হয় তার প্রায় সবই সিঙ্গেল ভিসা নিয়ে। সৌদিতে কর্মরত বাংলাদেশিরাই এ ধরনের ভিসার ব্যবসা করে থাকেন।’
কাতারের সব আপডেট হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে ক্লিক করুন
তিনি আরও জানান, সৌদি আরবের ছোটখাটো কোম্পানি বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিকরা অর্থের বিনিময়ে কাজের চাহিদাপত্র বিক্রি করেন বাংলাদেশি দালালদের কাছে। অথচ দেখা যায়, ওই সব প্রতিষ্ঠানে কর্মীর হয়তো প্রয়োজনীয়তা নেই।
Loading...
এর পরও প্রবাসী বাংলাদেশিরা এসব চাহিদাপত্র কিনে চড়া দামে বিক্রি করেন সৌদিগামী কর্মীদের কাছে। এ ক্ষেত্রে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার চুক্তিতে বাংলাদেশের কোনো এক রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স ব্যবহার করে মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র বের করেন।
ভিসা সংগ্রহকারী ব্যবসায়ীরা একটি লিখিত চুক্তি করেন রিক্রুটিং এজেন্সির সঙ্গে। এখানে ভিসা বিক্রেতারা মুচলেকা দেন যে, এই ভিসায় যারা যাবেন তাদের সব দায় বহন করবেন যিনি সৌদি থেকে সিঙ্গেল ভিসা কিনেছেন।
Loading...
সচিব বলেন, ‘আমাদের অভিবাসন নীতিমালা পরিবর্তন করে সিঙ্গেল ভিসা বাদ না দিলে কর্মীদের সঙ্গে প্রতারণার ঘটনা থামবে না।’
বিএমইটি সূত্র জানায়, বর্তমান সিঙ্গেল ভিসায় কর্মীরা সৌদিতে গেলেও রিক্রুটিং এজেন্সির কোনো দায় থাকে না, শুধু মন্ত্রণালয় থেকে আনুষঙ্গিক ছাড়পত্র তৈরি করে দেওয়া ছাড়া।
কিন্তু এসব সিঙ্গেল ভিসায় কর্মীরা সৌদি গিয়ে কাজ না পেলে বা প্রতারিত হলে তারা আর রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন না।
Loading...
কারণ তারা তাদের সৌদিতে থাকা কোনো এক আত্মীয় পরিচয় দিয়ে দালালদের কাছ থেকে ভিসা নেন। প্রতারিত হওয়ার পর বাংলাদেশ থেকে তার জন্য বিশেষ কিছু করা সম্ভব হয় না। কারণ যিনি ভিসা দিয়েছেন তিনি থাকেন সৌদি আরবে।
এ ক্ষেত্রে প্রতারিত হলে আমরা সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। কিন্তু ওই রিক্রুটিং এজেন্সি শুধু কাগজপত্র প্রসেসিং বাবদ পেয়েছে হয়তো ২০ হাজার টাকা।
Loading...
ফলে সিঙ্গেল ভিসায় একজন কর্মী ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা খরচ করে সৌদিতে গিয়ে প্রতারিত হলে তার জন্য তেমন কিছু ক্ষতিপূরণ আদায় করে দেওয়া সম্ভব হয় না। কারণ সব টাকা নিয়েছেন যিনি সৌদিতে থাকেন এবং ভিসা কিনেছেন।
জনশক্তি রপ্তানিকারকদের কেউ কেউ দাবি করেছেন, সৌদি আরবের সিঙ্গেল ভিসা বন্ধ করা উচিত। কেননা, এই ভিসার সুযোগ নিয়ে সে দেশে কর্মরত বাংলাদেশিদের একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। চড়া দামে ভিসা কিনে তারা লাগামছাড়া দামে বাংলাদেশি কর্মীদের কাছে বিক্রি করছেন।
Loading...
আবার সিঙ্গেল ভিসায় সৌদি আরবে গিয়ে অনেকেই মাসের পর মাস কর্মহীন থাকছেন। অনেকেই কাজ না পেয়ে দেশে ফিরে আসছেন। কিন্তু ফিরে এসে তারা যে ৪-৫ লাখ টাকা খরচ করেছিলেন তার মধ্যে ১ লাখ টাকাও ফেরত পান না।
সহায়-সম্বল বিক্রি করে যারা সৌদি গেলেন, তারা কাজ না পেয়ে নিঃস্ব হয়ে দেশে ফিরলেন। শুধু তাই নয়, যারা সিঙ্গেল ভিসায় সৌদিতে কর্মী নেন, তারা অনেক সময় সরাসরি কোম্পানিতে কাজ না দিয়ে বিভিন্ন কোম্পানিতে চুক্তিভিত্তিক কাজ করিয়ে নেন।
Loading...
কিন্তু পারিশ্রমিক হিসেবে কর্মীদের পুরো টাকা দেওয়া হয় না। কখনো কখনো মাসের অর্ধেক সময়ও কাজ পান না এ ভিসায় যাওয়া কর্মীরা।
Loading...