হয়রানি, দুর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ রেমিট্যান্স যোদ্ধারা
Loading...
হয়রানি, দুর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ রেমিট্যান্স যোদ্ধারা
প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীদের বলা হয় রেমিট্যান্স যোদ্ধা, দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে যাদের অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু এই রেমিট্যান্স যোদ্ধারা বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশের মিশনগুলোতে নানা হয়রানি ও হেনস্তার শিকার হন।
মালয়েশিয়ায় কর্মরত অনেক প্রবাসীর অভিযোগ, কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনে গিয়ে তারা নানা দুর্ব্যবহার এমনকি শারীরিকভাবে লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছেন।
কাতারের সব আপডেট পেতে জয়েন করুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে
Loading...
কয়েক জনের ভাষ্য, ‘হাইকমিশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আচরণে মনে হয় আমরা যেন সেবা নয়, ভিক্ষা চাইতে এসেছি।’
তাদের অভিযোগ, শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলেও ঐ আমলে দলীয় ও রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারাই এই ধরনের অসৌজন্যমূলক আচরণ করছেন বেশি।
মালয়েশিয়ায় প্রায় ১৫ লাখ বাংলাদেশি কর্মী রয়েছেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার বিদেশে মিশনগুলোকে কর্মীদের যথাযথ সেবা দিতে নির্দেশ দিয়েছে।
অথচ মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের পাসপোর্ট ও ভিসা বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী তাতে কর্ণপাত করছেন না।
দেশটিতে কর্মরত কয়েক জন বাংলাদেশি কর্মী ইত্তেফাককে জানান, মূলত নতুন পাসপোর্ট, ভিসা ও পাসপোর্ট নবায়ন এবং দেশে ফেরার ট্রাভেল পাশের জন্য কর্মীরা হাইকমিশনে যান। কিন্তু সেখানে গিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্ব্যবহারের শিকার হন তারা।
মেহেদী হাসান নাজমুল নামে এক বাংলাদেশি কর্মী বলেন, ‘গত ৭ জুলাই আউটসোর্সিং কোম্পানি ইএসকেএলের মাধ্যমে পাসপোর্ট নবায়নের জন্য আবেদন করি। ৮ আগস্ট পাসপোর্ট পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অনলাইনে দেখা যাচ্ছিল আমার পাসপোর্ট ‘অন দ্য ওয়েতে’ আছে।
কাতারে চাকরি খুঁজছেন? এখানে দেখুন চাকরির খবর
Loading...
ইএসকেএল জানায়, আমার পাসপোর্ট হাইকমিশনে চলে এসেছে, পাসপোর্ট শাখায় গেলে পাব। সেখানে ৭ নম্বর কাউন্টারে গিয়ে পাসপোর্ট চাইলে ডেস্কে থাকা কর্মচারী তা দিতে অস্বীকৃতি জানান। অনেক অনুরোধেও কাজ হয়নি।
উলটো ঐ কর্মচারী আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার শুরু করেন।’ নাজমুল বলেন, ‘ঘটনাটি আমি মোবাইলে ভিডিও করি। আমি যখন বের হয়ে আসছিলাম, তখন গেটে ঐ কর্মচারী আমার পথ আটকায়। কেন ভিডিও করেছি সেটা জানতে চায়।
আমি বলেছি, আপনাদের বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করব, এজন্য ভিডিও করেছি। পরে সে আমাকে হাইকমিশনের এক কর্মকর্তার কাছে নিয়ে যায়।
Loading...
তাকে সব বলার পর আমাকে পাসপোর্ট দেওয়া হয়।’ নাজমুলের মতে, প্রবাসী কর্মীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতেই অসৎ কর্মচারীরা এ ধরনের হয়রানি করে।
নাম না প্রকাশের শর্তে আরেক বাংলাদেশি কর্মী ইত্তেফাককে বলেন, ‘কিছু দিন আগে ইএসকেএলের তথ্য অনুযায়ী হাইকমিশনের পাসপোর্ট শাখায় আমার নতুন পাসপোর্ট নিতে যাই।
সেখানে ডেস্কে থাকা এক কর্মচারী বলেন, পাসপোর্ট ডাকযোগে দেওয়া হবে, হাতে দেবে না। কারণ জানতে চাইলে দুর্ব্যবহার শুরু করেন।
Loading...
এমন ঘটনা আমার মতো অসংখ্য প্রবাসীর প্রতিনিয়ত ঘটছে। এখনো আমি পাসপোর্ট পাইনি, ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে।’
ঐ প্রবাসী অভিযোগ করে বলেন, পাসপোর্ট শাখার লোকেরা টানা ১০ মিনিটও নিজেদের ডেস্কে থাকেন না। তাদের আসার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় সেবাপ্রত্যাশীদের। তিনি আরও বলেন, অনেক বাংলাদেশি কর্মী আছেন যারা ভালোমতো লেখাপড়া জানেন না।
তাই তাদের ভরসা এই হেল্প ডেস্ক। কিন্তু পাসপোর্ট শাখায় গিয়ে দুই একটি প্রশ্ন করলেই দায়িত্বরত ব্যক্তিরা ভীষণ বিরক্ত হন, দুর্ব্যবহার করেন।
Loading...
সম্প্রতি সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়া এক ছবিতে দেখা যায়, এক প্রবাসী কর্মীর টি-শার্টের কলার ধরে মারতে উদ্ধত হয়েছেন কোট-টাই পরা এক ব্যক্তি।
জানা যায়, ঐ ব্যক্তি হলেন মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাউন্সেলর (পাসপোর্ট ও ভিসা শাখা) মিয়া মোহাম্মাদ কেয়ামউদ্দিন। অভিযোগের বিষয়ে জানতে কেয়ামউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
তবে প্রবাসী কর্মীদের সঙ্গে হাইকমিশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দুর্ব্যবহারের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে দেশটিতে দায়িত্বরত বাংলাদেশের হাইকমিশনার শামীম আহসান ইত্তেফাককে বলেন, ‘হাইকমিশন যে কোনো অন্যায্য আচরণ ও দুর্নীতির ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
Loading...
১৫ লাখ প্রবাসীকে বিভিন্ন ধরনের কনস্যুলার ও কল্যাণমূলক সেবা দেওয়া বড় ধরনের চ্যালেঞ্জিং কাজ। তারপরও অত্যন্ত আন্তরিকতা ও ধৈর্য্যের সঙ্গে সেবা দিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আশা করি, আমাদের প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটি বাস্তবতা অনুধাবনে সক্ষম হবে।
Loading...