বিদেশে নেওয়ার কথা বলে প্রতারণা, কাতার ও ভানুয়াতু প্রবাসী দুই ভাইয়ের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
Loading...

বিদেশে নেওয়ার কথা বলে প্রতারণা, কাতার ও ভানুয়াতু প্রবাসী দুই ভাইয়ের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
বরিশালে মানব পাচার মামলায় প্রবাসী দুই ভাইকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে এক ভাইয়ের স্ত্রীকে ১৭ বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
কাতারে বিভিন্ন কোম্পানিতে নতুন চাকরির খবর
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন বাবুগঞ্জ উপজেলার রাহুতকাঠি এলাকার হারুন অর রশিদের ছেলে কাতার প্রবাসী জসিম উদ্দীন হাওলাদার ও তার ছোট ভাই ভানুয়াতু প্রবাসী পলাশ হাওলাদার এবং জসিমের স্ত্রী জান্নাতুর রহমান যুথি।
Loading...
জসিম ও পলাশকে দুই ধারায় যাবজ্জীবন ও ১৪ বছরের কারাদণ্ড এবং ৪৫ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক বছরের দণ্ড দেওয়া হয়। উভয় দণ্ড একসঙ্গে চলমান থাকায় তাদের যাবজ্জীবন কারাভোগ করতে হবে।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে বরিশালের মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক সোহেল আহমেদ এ রায় দেন। রায়ের সময় যুথি আদালতে উপস্থিত থাকলেও জসিম ও পলাশ বিদেশে আছেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী লিয়াকত আলী খান ও এসএম সরোয়ার হোসেন জানান, মামলার প্রধান সাক্ষী সজল ও বাদী একই এলাকায় ব্যবসা করেন।
কাতারের সব আপডেট হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে ক্লিক করুন
ব্যবসার সুবাদে তাদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হলে সজল জানান তার খালাতো ভাই পলাশ কিউবায় থাকেন। তাকে কিউবায় নিয়ে যাবেন। বাদী মোফাজ্জেল তার সঙ্গে কিউবায় যেতে চান।
মোফাজ্জেলের বিষয়টি নিয়ে সজল কিউবায় অবস্থানরত পলাশের সঙ্গে কথা বলেন। মোফাজ্জেলকে জানানো হয় মাসিক ৮০ হাজার টাকা বেতন পাবে তারা।
Loading...
এতে রাজি হলে সজল ও মোফাজ্জেলকে কাতারপ্রবাসী জসিমের স্ত্রীকে টাকা দেওয়া জন্য বলেন পলাশ। তারা দুজনে ২১ লাখ টাকা দেন জসিমের স্ত্রী যুথির কাছে। কিন্তু দেশে ফিরে সে টাকা এখনও ফিরে পাননি।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে ২০১৮ সালের মে মাস পর্যন্ত উজিরপুর, বাবুগঞ্জ ও মুলাদী উপজেলার ১৬ ব্যক্তিকে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানোর কথা বলে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র ভানুয়াতুতে অবৈধভাবে পাচার করেন বাবুগঞ্জ উপজেলার রাহুতকাঠি গ্রামের জসিম উদ্দিন ও তার ছোট ভাই পলাশ হাওলাদারসহ স্বজনরা।
Loading...
ভানুয়াতুতে নিয়ে তাদের একটি জায়গায় আটকে রাখা হয়। সেখান থেকে ১২ জন পালিয়ে সে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানান। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পলাশ হাওলাদারসহ চার জনকে গ্রেফতার এবং অবৈধ পাচারের শিকার সবাইকে উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় ভানুয়াতুতে একটি মামলা হয়। ওই মামলায় পলাশ কারাগারে আছেন। ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব মাইগ্রেশনের (আইওএম) সহায়তায় ২০১৯ সালের জুলাইয়ে ভুক্তভোগী ১৬ জনকে দেশে আনা হয়।
Loading...
দেশে ফিরে পাচারের শিকার ব্যক্তিরা টাকা ফেরত চাইলে মানব পাচারকারী চক্র উল্টো ভুক্তভোগীদের বিরুদ্ধে অপহরণ, চাঁদাবাজি এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর ভুক্তভোগী ১৬ জনের পক্ষে উজিরপুরের মোফাজ্জেল হোসেন বাদী হয়ে বরিশাল মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে জসিম উদ্দিন, পলাশ হাওলাদারসহ তাদের নিকটাত্মীয় সাত জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
বাকি আসামিরা হলেন জসিম উদ্দিনের স্ত্রী জান্নাতুর রহমান, ভাই এনামুল হক, বাবা হারুন অর রশিদ, শ্বশুর কাজী শামসুর রহমান ও শ্যালক ইমান কাজী।
Loading...
মামলার অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
পিবিআইয়ের উপপরিদর্শক সাইদুর রহমান ২০২০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনালে দেওয়া প্রতিবেদনে মানব পাচারসংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগের পরিবর্তে আসামিদের বিরুদ্ধে শুধু প্রতারণার অভিযোগ দেন। ৯ সেপ্টেম্বর ওই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে নারাজি দেন মামলাটির বাদী।
আদালত সূত্র জানায়, ওই সময় মামলার ধার্য তারিখে নারাজি আবেদনের শুনানির সময় ট্রাইব্যুনাল তদন্ত কর্মকর্তার প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে সাত আসামির বিরুদ্ধে মানব পাচার আইনের ৬, ৭ ও ৮ নম্বর ধারায় অভিযোগ গ্রহণ করেন।
Loading...
একইসঙ্গে সব আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী তুহিন মোল্লা বলেন, ‘মামলায় সাত জনকে আসামি করা হয়।
এর মধ্যে দুই জনকে বাদ দিয়ে পাঁচ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে বিচারকাজ সম্পন্ন করেন ট্রাইব্যুনাল। ১১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে রায় দেন বিচারক।’

Loading...
