পাসপোর্টে বাতিল হচ্ছে পুলিশ ভেরিফিকেশন

Loading...

পাসপোর্টের কপি ছাড়া প্লেনের টিকিট বুক করা যাবে না

পাসপোর্ট জারি ও নবায়নে পুলিশ প্রতিবেদনের বাধ্যবাধকতায় সাধারণ মানুষকে নানামুখী হয়রানির শিকার হতে হয়। দীর্ঘদিনের এই সমস্যা থেকে প্রতিকার পেতে ভুক্তভোগীরা সরকারের বিভিন্ন মহলে আবেদন-নিবেদন করেও প্রতিকার পাননি।

Loading...

বিগত সরকারগুলো উদ্যোগ নিলেও পুলিশের বিশেষ শাখা নেতিবাচক মতামত দিয়ে তা থামিয়ে দেয়। অবশেষে সেই ভোগান্তির অবসান হচ্ছে। বাতিল হচ্ছে পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশনের বাধ্যবাধকতা।

অতীতে বিভিন্ন সময়ে সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায় থেকে মতামত দিয়ে বলা হয়েছেÑ পুলিশ প্রতিবেদনের বাধ্যবাধকতা থাকায় নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্ট পেতে বিলম্ব ও হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে। চাকরি, চিকিৎসা ও পড়ালেখাসহ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে বিদেশ যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

কাতারে বিভিন্ন কোম্পানিতে নতুন চাকরির খবর

এ অবস্থা থেকে উত্তরণে পুলিশ ভেরিফিকেশনের জটিলতা নিরসন করে পাসপোর্ট জারি ও নবায়নের নির্দেশনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সভায়। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

Loading...

কতগুলো পাসপোর্ট আদেশ জারি ও নবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে তার প্রয়োজনীয় তথ্য চাওয়া হয় বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর এবং পুলিশের বিশেষ শাখায়। পরবর্তী সময়ে জানানো হয়, পুলিশ প্রতিবেদন-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে প্রায় ১৬ হাজার পাসপোর্ট জারি ও নবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে। এর ফলে পাসপোর্ট প্রত্যাশীরা নানা ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছেন।

সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আজ মঙ্গলবার অনুষ্ঠেয় আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় বিষয়টি উঠছে। মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল হকের সভাপতিত্বে ওই সভায় জটিলতা নিরসনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়ন করা হবে। উপদেষ্টার নির্দেশনার আলোকে বিষয়টি চূড়ান্ত করে এ-সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র এমন তথ্য জানিয়ে বলেছেÑ সভা সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়; আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়; প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়; পুলিশের বিশেষ শাখাসহ অন্যান্য বিভাগকে অবগত করা হয়েছে।

সূত্রে জানা গেছে, পাসপোর্ট বা চাকরির ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন মূলত একজন নাগরিকের তার সামাজিক অবস্থান যাচাই করার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। কিন্তু এই পুলিশ ভেরিফিকেশন এখন প্রশ্নের সম্মুখীন। পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে নাগরিককে করা হচ্ছে হয়রানি। এমনকি সামান্যতম কারণেও অনেক সময় ঘুষ দিতে হচ্ছে।

Loading...

পাসপোর্টের জন্য ভেরিফিকেশন করতে গেলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যকে টাকা দেওয়াটা একটি অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ কাগজে-কলমে এ ধরনের টাকা দেওয়ার বিধান নেই। আবেদনকারীর তথ্যের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পুলিশ ভেরিফিকেশনের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলাকালে নানা ধরনের ভোগান্তি, পক্ষপাতমূলক আচরণ এবং ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ এই পদ্ধতিকে কলুষিত করেছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, ১৯২০-এর দশকে ব্রিটিশ শাসনামলে পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রথা চালু হয়। চাকরি, পাসপোর্ট, লাইসেন্সসহ গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে আবেদনকারীর তথ্য যাচাইয়ের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া ছিল। এর মাধ্যমে প্রার্থীর চারিত্রিক ও সামাজিক অবস্থানও যাচাই করা হতো। তখন এই প্রথার মূল উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন দমন করা এবং চাকরিপ্রার্থীদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখা।

কারণ সেসময় ব্রিটিশ কর্মকর্তারা ভারতবর্ষে নানা ধরনের গুপ্ত বা প্রকাশ্য হামলার শিকার হতেন। ব্রিটিশরা তখন চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ‘পুলিশ ভেরিফিকেশন’ প্রথা চালু করেছিলেন, যাতে নিশ্চিত করা যায় যে প্রার্থীর কোনো ব্রিটিশবিরোধী রাজনৈতিক বিশ্বাস নেই।

তবে বর্তমানে এই প্রক্রিয়া অনেক ক্ষেত্রেই বিরোধী মতাদর্শকে দমন, বৈষম্য সৃষ্টি এবং হয়রানির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর সচিবালয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীদের মতবিনিময় সভায় পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন না রাখার সুপারিশ করেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী।

Loading...

কমিশন প্রধান উল্লেখ করেন, পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে হয়রানি ও দুর্নীতি বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি। প্রার্থীর বা তার পরিবারের রাজনৈতিক পরিচিতি যাচাই করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। বর্তমান ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া একটি বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এটি বন্ধ করতে হবে। কেননা এটি চরম হয়রানির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী ওই মতবিনিময় সভায় আরও বলেন, ‘চাকরি কিংবা অন্যান্য সেবার ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন আর বাধ্যতামূলক না রাখার সুপারিশ করেছি। এটি কোথাও আর থাকবে না। তা ছাড়া নাগরিক হিসেবে পাসপোর্ট পাওয়া সবার অধিকার। উন্নত দেশে পাসপোর্ট সরাসরি আবেদনকারীর ঠিকানায় পৌঁছে যায়। এখানেও সেই পদ্ধতি চালু করতে হবে।’

পুলিশ সংস্কার কমিশন গত ১৯ নভেম্বর এক সুপারিশে জানায়, চাকরি ও পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা যাচাই বন্ধ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন বলেন, ‘ভেরিফিকেশনের নামে হয়রানি ও দুর্নীতি বন্ধ হওয়া জরুরি। প্রার্থী বা তার পরিবারের রাজনৈতিক পরিচিতি বিচার করা অযৌক্তিক।’

প্রসঙ্গত, গত বছর মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) কর্তৃপক্ষ পুলিশ ভেরিফিকেশন বাদ দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে পাসপোর্ট দেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দেয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পুলিশের বিশেষ শাখায় মতামত চাওয়া হলে দ্বিমত পোষণ করে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)।

কাতারের সব আপডেট হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে ক্লিক করুন

অথচ এমআরপি আবেদন ফরমের শেষাংশে যেসব তথ্যের প্রয়োজনীয়তাকে পুলিশ ভেরিফিকেশনের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা রয়েছে, আবেদনপত্রের সঙ্গেই তা জমা দিতে হয়। এসব তথ্য দেওয়ার পর আর পুলিশ ভেরিফিকেশনের প্রয়োজন পড়ে না বলে মত প্রকাশ করেছে কমিশন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা উপজেলা সদরে বসেই পুলিশ প্রতিবেদন প্রস্তুত করেন। এক্ষেত্রে কিছু অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগও আছে। রিপোর্ট পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক আবেদনকারী হয়রানির শিকার হচ্ছেন। কেননা ওই প্রতিবেদন পেতে এক থেকে দেড় মাসের মতো সময় লেগে যায়। এ কারণে জরুরি প্রয়োজনে অনেকেই পাসপোর্ট পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

Loading...

তারা আরও জানান, যাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তাদের ছবিসহ তথ্য কম্পিউটারে গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি পাসপোর্ট অফিসে জমা দেওয়া হলে লাখ লাখ মানুষকে পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে হয়রানির শিকার হতে হবে না।

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের কারণেই এমআরটি পাসপোর্ট নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার চলতি বছরের মধ্যেই সবার জন্য ই-পাসপোর্ট করে যেতে চায়।

আরও খবর

প্রতিদিনের বাংলাদেশ

Loading...

Loading