প্রবাসীদের হজ কোটা নিয়ে যে কারণে ধূম্রজাল
Loading...

প্রবাসীদের হজ কোটা নিয়ে যে কারণে ধূম্রজাল
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাসীরা বাংলাদেশের কোটায় হজ করতে পারবেন কিনা- সেটি নিয়ে ধূম্রজাল কাটছে না। ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই। এই অবস্থায় গত বছর বাংলাদেশের কয়েকটি এজেন্সি প্রবাসীদের হজ কোটায় অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন।
হজযাত্রীদের কোনো অভিযোগ না থাকলেও টিকিট সিকিউরিটি বাবদ জমা দেয়া টাকা ফেরত দেয়া হচ্ছে না। ফলে এবার দেশের বাইরের প্রবাসীদের বাংলাদেশের কোটায় রেজিস্ট্রেশন করাতে সিদ্ধান্তহীনতায় পড়েছেন হজ এজেন্সির মালিকরা।
কাতারে বিভিন্ন কোম্পানিতে নতুন চাকরির খবর
Loading...
গত বছরের কোটায় বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার হাজীকে হজে পাঠানোর জন্য সৌদি সরকার অনুমতি দিয়েছিল। হজের খরচ বেশিসহ নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে কোটা পূরণ করা সম্ভব হয়নি।
প্রায় ৮৫ হাজার হাজী বাংলাদেশ থেকে গিয়ে হজ করেছিলেন। এতে দেখা গেছে; নির্ধারিত কোটার ৪২ হাজার যাত্রী হজে যাওয়ার জন্য পাওয়া যায়নি। গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ থেকে হাজী কমছে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের লাখ লাখ প্রবাসী মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকাসহ নানা দেশে বসবাস করছেন। তারা বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী হয়েও দেশের কোটায় হজে যেতে পারছেন না।
কাতারের সব আপডেট হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে ক্লিক করুন
Loading...
যদি তাদের হজে যেতে হয় সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে এসে বাংলাদেশের কাফেলার সঙ্গে হজে যেতে হচ্ছে এবং হজ শেষে বাংলাদেশে ফেরত আসতে হচ্ছে। অথচ প্রবাসীদের দাবি হচ্ছে- তারা যে দেশেই অবস্থান করেন, বাংলাদেশি কোটায় সে দেশ থেকেই হজে যাবেন আবার হজ শেষ করে বাংলাদেশে না এসে যে দেশে বসবাস করছেন সেখানেই চলে যাবেন।
কিন্তু ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা না থাকায় সেটি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিলেটের কয়েকজন ট্রাভেল এজেন্সির মালিক জানান, প্রবাসী হজযাত্রীরা বাংলাদেশ থেকে হজে যেতে পারবেন কিনা- সে ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের নিষেধ নেই, আবার অনুমতিও নেই।
এই অবস্থায় গত বছর বাংলাদেশের কয়েকটি এজেন্সি প্রায় ৭৩৯ জন প্রবাসীকে বাংলাদেশি কোটায় হজে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। তারা ইউরোপ, আমেরিকাসহ নানা দেশ থেকে গিয়ে হজ পালন করে সে দেশে ফেরতও গেছেন।
Loading...
তারা জানান, হজযাত্রীদের রেজিস্ট্রেশনের সময় টিকিট বাবদ টাকা জমা দিতে হয়। এ কারণে ওই ৭৩৯ জন যাত্রীর টাকা জমা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই যাত্রীরা যেহেতু বাইরে দেশ থেকে বিকল্প উড়োজাহাজের ফ্লাইট ব্যবহার করে হজে গেছেন সেজন্য তারা বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট ব্যবহারের সুযোগ পাননি।
এতে করে হজযাত্রীদের সিকিউরিটির টাকা ফেরত দেয়ার কথা। কিন্তু ধর্ম মন্ত্রণালয় এক পত্রের মাধ্যমে সেই টাকা আটকে দিয়েছে। এতে এজেন্সি মালিক ও হজ করে আসা যাত্রীরা টাকা ফেরত নিয়ে দোটানায় পড়েছেন। এজেন্সি মালিকরা জানান, বাংলাদেশ থেকে হজের জন্য বিমান ও সৌদিয়া ফ্লাইট বরাদ্দ।
তারাই হজের যাত্রী আনা-নেয়া করেন। কিন্তু দেশের বাইরে থাকা প্রবাসীদের বিমান কিংবা সৌদিয়া সেই সেবা দিতে পারে না। এজন্য বিকল্প উড়োজাহাজের ফ্লাইটে হাজীরা হজে গেছেন।
Loading...
হজ এজেন্সি অব বাংলাদেশ হাবের সভাপতি সৈয়দ গোলাম সরওয়ার মানবজমিনকে জানান, আমরা চাই আমাদের প্রবাসীরা যে দেশে আছেন- সেই দেশ থেকেই যেনো বাংলাদেশি কোটায় হজে যেতে পারেন। যেহেতু আমাদের কোটা পূরণ হচ্ছে না- বাকি থাকা কোটায় প্রবাসীরা হজে যেতে পারলে আমরা খুশি হবো।
এতে বাংলাদেশও উপকৃত হবে। বিষয়টি নিয়ে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে হাবের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এ ব্যাপারে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
জানান, প্রবাস থেকে হজে যাওয়া সেসব যাত্রীর টাকা আটকে আছে সে বিষয়টিও নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। হাবের মহাসচিব ফরিদ আহমেদ মজুমদার জানান, প্রবাসীদের দেশে কোটায় হজে যাওয়ার সুযোগ দিলে সমস্যা থাকার কথা না।
Loading...
সেটি আমাদের জন্য ভালো। সৌদি সরকারেরও কোনো নিষেধ নেই। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। আশা করা হচ্ছে পজেটিভ ফলাফল আসবে। এদিকে, আগামী বছরের জন্য হজ যাত্রীদের প্রি-রেজিস্ট্রেশন এখন চলছে।
আগামী ১২ই অক্টোবর পর্যন্ত হজযাত্রীরা হজের জন্য নাম রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। এজন্য হজ এজেন্সির মালিকরা প্রবাসীদের নাম অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দ্রুতই সিদ্ধান্তের আশা করেন।
হাবের সিলেট অঞ্চলের সাবেক চেয়ারম্যান ও আল-মনসুর ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী মনসুর আলী খান জানান, ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা বাংলাদেশিদের জন্য কোনো কোটা না থাকায় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেকেই হজ করতে পারেন না।
Loading...
আবার যারা হজের সুযোগ পান তারা ১০ থেকে ১২ লাখ ডলার ও পাউন্ড ব্যয় করতে হয়। বাংলাদেশি কোটায় সুযোগ পেলে এই ব্যয় অনেক কমে আসবে।
তিনি বলেন, চলতি বছর পাকিস্থান সরকারের তরফ থেকে তাদের প্রবাসীদের দেশের কোটায় হজে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে। একই আদেশ বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে দেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সিলেটের যাত্রীক ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী ও ব্যবসায়ী নেতা আব্দুল জব্বার জলিল জানান, প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট। অথচ সিলেটের প্রবাসীরা সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার। একে তো হজের সুযোগ পান না, তার ওপর সিলেটি ও প্রবাসীদের জন্য রাখা বিমানের সিটও পাওয়া যায় না।
Loading...
এটা সিলেটের মানুষ ও প্রবাসীদের জন্য চরম বৈষম্য বলে জানান এই ব্যবসায়ীরা নেতা। এদিকে, প্রবাসে বসে দেশের হজ কোটায় সুযোগ না পাওয়ায় প্রবাসীরাও ক্ষুব্ধ। এনআরবি সোসাইটি ইউকের পরিচালক ও ওল্ডহাম বিএনপি’র সভাপতি জামাল উদ্দিন জানান, প্রবাসীরা কেন দেশে এসে হজে যাবেন। কাজের চাপে সেই সময় প্রবাসীরা পান না।
প্রবাসীরা যে দেশে থাকেন সেই দেশ থেকেই দেশের কোটায় হজে যাবেন এবং ফেরতও যাবেন- সেই সুযোগ করে দিতে হবে। নতুবা প্রবাসীরা এ ব্যাপারে বিকল্প চিন্তাভাবনা করবে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন
Loading...
