জনশক্তি রপ্তানিতে সৌদি আরবের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা, সংকুচিত হচ্ছে অন্যান্য বাজার

Loading...

জনশক্তি রপ্তানিতে সৌদি আরবের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা, সংকুচিত হচ্ছে অন্যান্য বাজার

বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানিতে সৌদি আরবের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে দেশের মোট প্রবাসী কর্মীর ৭২.৫ শতাংশ মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে গেছেন।

Loading...

এমন নির্ভরশীলতা অন্যান্য শ্রমবাজারকে সংকুচিত হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে, যেখানে সামগ্রিক প্রবাসী কর্মসংস্থান মাসের ব্যবধানে ৭.৩৩ শতাংশ কমেছে।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ থেকে ৯৭ হাজার ৮৬২ জন কর্মী বিদেশে গেছেন। এটি আগের মাসের তুলনায় কম হলেও, ২০২৪ সালের জানুয়ারির তুলনায় ১১.৩৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

কাতারে বিভিন্ন কোম্পানিতে নতুন চাকরির খবর

এর মধ্যে সৌদি আরব ৭৬ হাজার ৬১৮ কর্মী নিয়োগ দিয়েছে, যা দেশটির প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীদের প্রধান গন্তব্য হিসেবে অবস্থান আরও সুসংহত করেছে। এরপর কাতার ৬ হাজার ৮৮০ জন, সিঙ্গাপুর ৪ হাজার ৮৪৭ জন এবং কুয়েত ২ হাজার ৮৭৮ জন কর্মী নিয়েছে।

অন্যদিকে, ২০২৪ সালের জুন থেকে স্বাভাবিক নিয়োগ বন্ধ রাখা মালয়েশিয়া প্লান্টেশন খাতে (বাগান ও চাষাবাদ) মাত্র ১ হাজার ২৮৬ জন কর্মী নিয়েছে।

সৌদি আরবে বর্তমানে আনুমানিক ৩০ লাখ বাংলাদেশি কর্মী রয়েছেন

বিএমইটি-এর তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের নভেম্বর মাসে বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ৩ হাজার কর্মী বিদেশে গেছেন। তাদের মধ্যে ৮১ শতাংশ গেছেন সৌদি আরবে। ডিসেম্বরে এই হার আরও বেড়ে ৮৯ শতাংশ হয়েছে।

এদিকে, শ্রমবাজার সংকুচিত হওয়ায় রিক্রুটাররা (নিয়োগকারী) উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মালয়েশিয়ার মতো প্রচলিত গন্তব্যগুলো নতুন কর্মীদের জন্য সীমিত বা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

Loading...

শরণার্থী ও অভিবাসী আন্দোলন গবেষণা ইউনিট-এর (আরএমএমআরইউ) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন তাসনিম সিদ্দিকী গতকাল টিবিএসকে বলেন, ‘শ্রমবাজারের একটি বড় সীমাবদ্ধতা হলো নির্দিষ্ট সময়ে একটি মাত্র বাজারের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতা। যেসব দেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশি কর্মীদের প্রধান গন্তব্য হয়ে ওঠে, তারা হঠাৎ করে নিয়োগ বন্ধ করে দেয় বা শ্রমিক নেওয়ার হার নাটকীয়ভাবে কমিয়ে ফেলে।’

কাতারের সব আপডেট হোয়াটসঅ্যাপে পেতে এখানে ক্লিক করুন

তিনি আরও বলেন, ‘শ্রমবাজারের এই অস্থিরতার অন্যতম কারণ ভিসা সংগ্রহে অনিয়ম। অবৈধ ভিসা বাণিজ্য বন্ধ করতে পারলে কোনো শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমবে।’

সিদ্দিকী বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাস ও নিয়োগ সংস্থাগুলোর মাধ্যমে নিয়োগকারীদের যথাযথ মূল্যায়নের ভিত্তিতে কর্মসংস্থানের চাহিদা সংগ্রহের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

বিএমইটি-এর পরিচালক মামুন সরদার বলেন, ‘মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষ বর্তমানে শুধু বাংলাদেশ থেকে প্লান্টেশন খাতে শ্রমিক নিয়োগ করছে। সম্প্রতি কর্মী পাঠানোর সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে।’

প্লান্টেশন খাতে কর্মী পাঠানোর সময়সীমা দুই মাস বাড়িয়ে ৩১ মার্চ পর্যন্ত করা হয়েছে। এছাড়া, নিয়োগের আবেদনপত্রের শংসাপত্র প্রাপ্তির সময়সীমা ৪৫ দিন বাড়ানো হয়েছে। ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন নিয়োগ সম্পর্কিত শংসাপত্র প্রদান বন্ধ করে দেবে।

Loading...

অস্বাভাবিকতা ইউরোপীয় বাজারের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে

এশীয় শ্রমবাজারে চ্যালেঞ্জের মুখে থাকলেও, বাংলাদেশ ইউরোপীয় দেশগুলোতে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।

জানুয়ারিতে কিছু ইউরোপীয় দেশ বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগ করেছে। এর মধ্যে পর্তুগাল (৪৫৮), ইতালি (৩৩৫), ক্রোয়েশিয়া (৩০০), হাঙ্গেরি (১৩৫) এবং উত্তর ম্যাসিডোনিয়া (৮৬) অন্তর্ভুক্ত ছিল।

তবে, অনেক বাংলাদেশি শ্রমিক তাদের কর্মস্থলে থাকার পরিবর্তে অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোতে চলে যাওয়ায় নিয়োগকারীরা উদ্বেগ দেখিয়েছেন। এর ফলে, ইউরোপীয় দেশগুলো বাংলাদেশিদের জন্য কম ওয়ার্ক ভিসা প্রদান করছে।

হেগে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে, চুক্তির শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগে ক্রোয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য ওয়ার্ক পারমিট দেওয়া বন্ধ করতে যাচ্ছে।

২৩ জানুয়ারির একটি চিঠিতে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। দূতাবাস জানিয়েছে, বাংলাদেশি কর্মীরা ক্রোয়েশিয়ার পারমিট নিয়ে শেনজেন অঞ্চলের অন্যান্য দেশে চলে যাচ্ছেন বলে ক্রোয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিযোগ করেছে। এটি অনিয়ম হিসেবে বিবেচিত হয়।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালে ক্রোয়েশিয়ান কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য ১২ হাজার ৪০০টি ওয়ার্ক পারমিট ও ভিসা ইস্যু করেছিল। এর মধ্যে ৮ হাজার কর্মী ক্রোয়েশিয়ায় পৌঁছাননি। বাকি ৪ হাজার ৪০০ জনের মধ্যে বর্তমানে মাত্র ৫০ শতাংশ ক্রোয়েশিয়ায় কাজ করছেন।

Loading...

বর্তমানে ক্রোয়েশিয়ায় প্রায় ৬ থেকে ৭ হাজার বাংলাদেশি কর্মী কাজ করছেন। তারা মূলত নির্মাণ, রেস্তোরাঁ এবং খাবার সরবরাহ খাতে নিযুক্ত।

দূতাবাস জানিয়েছে, ক্রোয়েশিয়ায় কর্মপরিবেশ এবং সুযোগ-সুবিধা অনেক ইউরোপীয় দেশের তুলনায় ভালো। তবে অনেক বাংলাদেশি কর্মী ক্রোয়েশিয়ার পারমিট ব্যবহার করে অবৈধভাবে শেনজেন অঞ্চলের অন্যান্য দেশে চলে যান।

ইনফিনিটি এইচসিএম-এর চেয়ারম্যান শারমিন আখতার শুমি বলেন, “এখন আমরা বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশ থেকে ভিসা প্রত্যাখ্যানের হার বাড়তে দেখছি, যার মধ্যে ইতালি, ফ্রান্স এবং জার্মানি অন্তর্ভুক্ত, কারণ অনেক শ্রমিক তাদের নির্ধারিত গন্তব্য থেকে চলে যাচ্ছেন। এটি শ্রম বাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।”

তিনি সরকারের প্রতি সচেতনতা বাড়ানোর এবং সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি মধ্যপ্রাচ্যের বন্ধ হয়ে যাওয়া শ্রম বাজার পুনরায় খুলে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দিয়েছেন।

Loading...

বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে রেমিট্যান্সে ২.১৯ বিলিয়ন ডলারের প্রবাহ হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ছয় মাস ধরে দেশে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে।

আরও খবর

The Business Standard

Loading...

Loading